২১ -র মহারণে মুকুলই কাঁটা মমতার !

অয়ন দাশ

বিধানসভা ভোট যত আসছে এগিয়ে, ভোটের পারদ তত চড়ছে বঙ্গে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। শাসক তৃণমূলকে চাপে ফেলতে একের পর এক দান দিতে শুরু করেছে বিজেপি। তৃণমূলের রথের রশি আছে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের হাতে।

তৃণমূলের বিজয় রথ থামাতে বিজেপির বাজি মুকুল রায়। একদা তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ , যার বুদ্ধির উপর ভর করেই বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহ্‌, জেপি নাডডারা। যার প্রমাণ স্বরূপ কিছুদিন আগেই বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি করা হয়েছে মুকুল রায়কে। মাস খানেক আগেও দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার মত খবর ভেসেছিল বাতাসে। বেশ কয়েকমাস তিনি নিজেও দলের কর্মসূচী থেকে দূরে দূরে থাকছিলেন। তবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেই নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মুকুল রায়।

তাঁর মত নেতা বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল ছাড়লে বাংলায় যে বিজেপি মুখ থুবড়ে পরবে তা বিলক্ষণ জানেন দিল্লির নেতারাও। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির দুরন্ত সাফল্য যে মুকুল মস্তিষ্ক প্রসূত তা একাধিকবার স্বীকার করেছেন অমিত শাহ্‌রা। শুধু বাকি ছিল একটা শিলমোহরের।

রাজনৈতিক মহলের মতে মুকুলকে সামনে এনে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব। প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাপে রাখা। দ্বিতীয় যে বিধায়ক- নেতারা পাঁচিলের উপর বসে আছেন তাঁদের বার্তা দেওয়া। প্রতিবেশী রাজ্য আসামে যে ফর্মুলাতে সরকার গঠন করেছে বিজেপি সেই ফর্মুলা বাংলাতেও প্রয়োগ করতে চাইছে গেরুয়া নেতৃত্ব।

নিজের দলে গ্রহনযোগ্য অথবা দক্ষ নেতা- সংগঠকের অভাব হলে বিরোধী শিবির ভাঙানো। রাতারাতি নেতা তৈরি করার বৃথা চেষ্টার থেকে বিরোধী দলের দক্ষ সেনাপতিদের ভাঙিয়ে যুদ্ধে যাওয়া অনেক বুদ্ধিমানের কাজ তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি বিজেপির দিল্লির নেতাদের। অমিত শাহ্‌, জেপি নাডডারা তাই বাংলার মসনদ দখলের লড়াইয়ে সেনাপতি করেছেন মুকুল রায়কে। তৃণমূল কংগ্রেস দলের অন্দরের খুঁটি –নাটি জানা মুকুলের।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/in-the-tripura-model-the-bjps-equation-of-bengali-occupation-is-being-fueled-by-the-governor/

তৃণমূল গঠন থেকে শুরু করে দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্ত ভীতের উপর দাড় করিয়েছেন। তৃণমূল দলের কোন দেওয়াল কতটা শক্ত আর কোনটা দুর্বল তা মুকুলের থেকে বেশি আর কেই বা জানে? রাজ্যের প্রতিটা প্রান্ত হাতের তালুর মত চেনা মুকুলের। বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে আছে নিবিড় যোগাযোগ।

তিনি জানেন কি ভাবে ভোট বাক্স পর্যন্ত মানুষের মতামতকে টেনে নিয়ে আসতে হয়। মুকুলের পদ পাওয়ায় তাই ঘাস ফুল শিবিরের উপর কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। ২০১১ পরিবর্তনের নির্বাচনের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেও রণনীতি তৈরি করেছিলেন এই মুকুল রায়। ২০১৬ নির্বাচনেও তৃণমূলকে ক্ষমতায় রেখে দেওয়ার মূল কাণ্ডারিও তিনি।

তাঁর হাত থেকে টিকিট নিয়েই কত জন বিধায়ক হয়েছেন তা বলা কঠিন। স্বাভাবিক কারনেই মুকুল রায়ের উপর তাঁদের একটা দুর্বলতা থাকবেই।  বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁদের একটা বড়ো অংশ যে মুকুলের পথের পথিক হবেন না তাঁর নিশ্চয়তা কোথায়?

গত লোকসভা নির্বাচনে মুকুলের হাত থেকে বিজেপির টিকিট নিয়ে যারা লড়েছেন প্রায় সকলেই জয় পেয়েছেন। উত্তরবঙ্গের মাটিতে কার্যত খাতাই খুলতে পারেনি তৃণমূল। উল্টো দিকে তৃণমূলের বিভিন্ন জেলা কমিটি গঠন নিয়েও গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। কোচবিহারে জেলা কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী।

দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন তিনি। দলের প্রথম দিনের কর্মী স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মিহির বাবুর এই পদক্ষেপ কোচবিহার বাসীর মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়ের ডাকা বৈঠক এড়িয়ে গেছেন জেলার কয়েকজন বিধায়ক।

হাওড়ার দুই হেভিওয়েট বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরূপ রায় বিভিন্ন সময় কাজিয়ায় জড়িয়েছেন। হাওড়া জেলা সভাপতির পদে নিয়ে আসা হয়েছে রাজনীতিতে নবাগত লক্ষ্মী রতন শুক্লকে। হুগলীর তৃণমূল নেতৃত্বের বিরোধ সামনে চলে এসেছে। মুর্শিদাবাদে দলের একটা অংশ অন্য অংশের বিরুদ্ধে মিছিল করছে।

দলকে এক সুতোয় বাঁধতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভোট কৌশলী পিকে কে। তৃণমূল কংগ্রেসের মাথা ব্যথা বাড়িয়েছেন দলের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কিছুটা নীরব থাকা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন অংশে তাঁর নামে ফ্লেক্স পড়ছে সমাজকর্মী হিসেবে দলের নাম ও প্রতীক ছাড়াই। পাল্টা অন্য অংশ থেকে নাম ও প্রতীক সহ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্লেক্স লাগানো হচ্ছে।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/ministers-and-legislators-are-afraid-to-talk-on-the-phone-trust-so-call-on-the-whatsapp/

কাকতলীয় ভাবে হটাত করেই মুর্শিদাবাদের গরু পাচার নিয়ে অতি সক্রিয়তা শুরু করেছে সি বি আই। মুকুলের পদ প্রাপ্তিতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে রাজ্য বিজেপিও। সদ্য হওয়া নবান্ন অভিযানে নিজেদের শক্তি দেখিয়েছে বিজেপি। প্রশাসন দিয়ে বিক্ষোভ সামাল দেওয়া গেলেও বিক্ষোভের দিন নবান্ন বন্ধ রাখার সিধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দিল্লি থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিধানসভার আগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর সপ্তমে তুলতে হবে। দুর্নীতির প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে বিদ্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর মুকুল ম্যাজিকে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব।

সম্পর্কিত পোস্ট