একুশের বিধানসভা নির্বাচনঃ দলিত ভোটেই বাজিমাতের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সংকট কালে জঙ্গলমহল সফর। ঘর গোছানোর, পাশাপাশি বিরোধীদের বার্তা দেওয়ার সফরও বলা যেতে পারে। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের চারদিনের বাঁকুড়া সফর ঘটনাবহুল।
এই সফরে নির্বাচনকে সামনে রেখেই বেশকিছু মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত লোকসভা নির্বাচনের ফল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য আশাপ্রদ ছিলনা। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তৃণমূল তাদের সমর্থন হারিয়ে ফেলেছিল। যার সর্বাত্মক প্রভাব পড়েছিল ভোটবাক্সে। তাই এই সময়টা ছিল ঘর গোছানোর।বিশেষ করে জঙ্গলমহলের আদিবাসী পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর কাছে নিজের গ্রহন যোগ্যতা যাচাই করার সময়।
কয়েকদিন আগে অমিত শাহ এসে আদিবাসী বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর চাপ বাড়ছিল।এখানে শুধু প্রকল্পের দেওয়া-নেওয়ার হিসাব দিলেই হবে না তা ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বরং তাঁকে বাড়তি কিছু করতে হতো গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে। চারদিনের বাঁকুড়া সফরে সে কাজই নীরবে সারলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
স্বল্প পরিসরে আদিবাসী জনজাতি ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টায় কোনো রকম ত্রুটি রাথলেন না তৃণমূল নেত্রী। একের পর এক মিটিংয়ে আদিবাসীদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করলেন। দিলেন সমাধানও। কিন্তু এরপরেও তৃণমূলের অন্দরে যে ভাঙ্গন রোগ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে তা ১০০% মেটানো গিয়েছে তা বলা যাবে না।
দলের অন্দরে একটা কথা অতি পরিচিত। তৃণমূলে নাকি একটাই পোস্ট বাকি সবই ল্যাম্পপোস্ট। এবার নির্বাচনের আগে সেই প্রবাদটাই সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, অতীতের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার বলতে শোনা গিয়েছে আপনারা আমাকে দেখে ভোট দিন। কিন্তু এবার যেভাবে একের পর এক বিধায়ক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে তাতে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য ধোপে টিকবে কিনা, তাই দেখার।
পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে সংখ্যালঘু ও দলিত মিলে ভোট রয়েছে ৪৭ শতাংশের মতো। বিজেপির ভোট ব্যাংক হিন্দু ভোট।তাই তৃণমূলকে তার ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে এই দুই শ্রেণীর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিজের ঝুলিতে আনতে হবে। তাহলে যতই অপপ্রচার করুক বিজেপির পক্ষে এ রাজ্যে অন্তত দাঁত সরানো সম্ভব না।
কিন্তু সমস্যা হল গত লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে হিন্দু ভোটের পাশাপাশি বিজেপি দলিত আদিবাসী নমঃশূদ্র রাজবংশীদের একটা বড় অংশের ভোটে ভাগ বসিয়েছে। তৃণমূলকে এই দলিত ভোটকেই নিজের দিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
সেই লক্ষ্যেই জঙ্গলমহলের আলাদা পুলিশ বাহিনী, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বাড়ি, খাদ্যসাথী রেশন,স্বাস্থ্য সাথীর চিকিৎসা সহ একাধিক ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।এখন দেখার এই বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন তৃণমূলের দিকে আসে কিনা।