ছুৎমার্গ কাটিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং বামেরা
সহেলী চক্রবর্তী
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চলতে পারলে পিছিয়ে পড়তে হয়। আর পিছিয়ে পড়তে পড়তে এক সময় হারিয়ে যেতে হয়। তখন বাঁধা ছকের বাইরে বেরিয়ে এমন নতুন কোনো চিন্তাধারা প্রয়োগ করতে হয় যা আর পাঁচজনের মাঝেও নতুন করে পথ দেখাতে পারে। তৈরি করতে পারে নতুন পরিচিতি।
তবে বর্তমানে আমরা বড়ই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভালো-মন্দ বা নতুন কোনো চিন্তাধারা সবটাই আমরা মুহূর্তের মধ্যে শেয়ার করে নিচ্ছি নিজেদের ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবে। আর তাতে যদি থাকে অভিনবত্বের ছোঁয়া, তাহলে বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গের মত মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে লাখ লাখ মানুষের কাছে।
ঠিক এই কথা মাথায় রেখেই নিজেদের উপস্থিতি আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে বামেরা বেছে নিয়েছে সেকেন্ড-মিনিট-মোমেন্টস কনসেপ্টকে। ২৮ তারিখ জনতাকে ব্রিগেডমুখী করতে বা বলা ভাল ব্রিগেডের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই বেছে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং টুম্পা গানকে।
তা নিয়ে অবশ্য সংস্কৃতিমনস্ক বামেদের ব্যঙ্গ করতে ছাড়েনি অন্যান্য রাজনৈতিক দল। গুরুগম্ভীর বামনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র স্বয়ং নিজের ফেসবুক থেকেও সেই প্যারোডি শেয়ার করেছেন। হয়েছে বিস্তর জলঘোলা।
তাতে অবশ্য বামেদের কুছ পরোয়া নেহি। ভাষা বদলে সুরে সুর মিলিয়ে আট থেকে আশি সকলের কাছেই বামেরা পৌঁছে দিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির একাধিক জনহিতকর নীতির বিরুদ্ধে তাদের সমষ্ঠিগত প্রতিবাদ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্য কিভাবে ব্রিগেডে পৌঁছে দেওয়া যায় ভাবছে সিপিএম
শুধু তাই নয় রয়েছে করোনার কারণে মাস্ক বিলির মাধ্যমেও জারি রেখেছেন প্রচারাভিযান। সেখানেই নবতম সংযোজন হয়েছে ফ্ল্যাশ মব। সাধারণত এই কনসেপ্ট ব্যবহার করা হয় বিদেশে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারে এই ফ্ল্যাশমব কনসেপ্ট ব্যবহার করেছিল। তবে ভারতের রাজনীতি বা আরো স্পষ্ট করে বললে বঙ্গ রাজনীতিতে এই ঘটনা নজিরবিহীন।
শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াই নয়, এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে বিরোধীদের কথায় ‘সাইনবোর্ড’ হয়ে যাওয়া বামেরা নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে বেছে নিচ্ছেন নতুন নতুন গান, নতুন কনসেপ্ট। মাঝে আর মাত্র একটা দিন। তাই শেষ মুহূর্তের ব্রিগেড প্রস্তুতি একেবারে তুঙ্গে।
সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় বিপুল অর্থের। আর এই মিনিট-সেকেন্ড-মোমেন্ট কনসেপ্টে সবথেকে বেশি এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আগের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছে তৃণমূলও। আর অর্থের বদলে বামেরা মূলত সেই ক্যাম্পেনিং তৈরি করছেন আবহসংগীত, আবৃতি, ফ্ল্যাশমব, মাস্ক, কার্টুন, গ্রাফিক্সের মাধ্যমে।
এসবে অংশ নিচ্ছেন ঝাঁক ঝাঁক তরুন-তরুণী ও কলাকুশলীরা। যাদের চোখে-মুখে আত্মপ্রত্যয়। রয়েছে নতুন করে আধুনিকতার জোয়ারে গা ভাসিয়ে নিজেদের সংস্কৃতিকে অটুট রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। বামেদের অতি বড় নিন্দুকও ছুৎমার্গ কাটিয়ে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে ৩৪ বছরে বামেদের রাজত্বে একটি জিনিসের বড়ই অভাব ছিল সেটি কুকথা। বামেদের শেষদিকে সেই ধারা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ওরফে শাসক-বিরোধী যুযুধান দুই পক্ষই সেই অভাব মিটিয়ে দিয়েছেন। একে অপরকে সম্বোধনের বহর, বিশেষণ শুনলে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।
বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেডে উপস্থিত থাকছে আইএসএফ, জানিয়ে দিলেন আব্বাস
হাতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। আজই বাংলায় ঘোষণা হয়ে যাবে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে আব্বাসের জোট প্রায় চূড়ান্ত। চলতি মাসের শেষ দিনের ব্রিগেডে বামেদের টার্গেট ১০ লক্ষ জনসমাবেশ। ঘরে ঘরে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বামেরা। তবে টার্গেট ফুলফিল করতে তারা কতটা সক্ষম সেটার রবি বারের বেলায় প্রমাণিত হয়ে যাবে।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ব্যর্থতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং বামেরা কতটা সফল? সেটা সময় বলে দেবে।