৫৪ দিনের পার্ক সার্কাস

।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।

গতকাল পার্ক সার্কাস থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে লিখলাম “ইনশাল্লাহ” মানে কি? তো আমায় লিখল “বাই দ্য উইল অব গড”। মানে ভগবান চাইলে হবে।

ছোটবেলায় দিদার কাছে শুনেছি যা কিছু কঠিন, তা যদি ভগবান চায় মিলতে পারে। তাল মিলিয়ে দেখলে গোটা বিষয়টাই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে যে ধর্মই হোক না কেন। যে কাজই হোক না কেন।

ঠিক তেমনই বিশ্বাসের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে শাহিনবাগ, পার্ক সার্কাস থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি প্রান্তে মহিলাদের আন্দোলন। দেখতে দেখতে ৫৪ টা কঠিন সময় পার করে ফেললেন তাঁরা।

বলাবাহুল্য এর ছয় ভাগের এক ভাগ সময় আমি কাটিয়েছি। তাও খুবই সীমিত সময়। কিন্তু কোনও দিনও আন্দোলনের তীব্রতা কমতে দেখেনি।

এরই মধ্যে একজনের মৃত্যুর ঘটনা সবাইকে একটু আন্দোলিত করলেও পার্ক সার্কাসের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আগুন তাপ একটুও কম মনে হয়নি।

গোটা বিষয়টাকে খুব কাছ থেকে দেখছি। শীতের রাতে যখন কাঁপছি, বাড়ি যাবো বাড়ি যাবো করছি। কতগুলো নরম গলার সুর তখনও তারস্বরে আজাদির শ্লোগান দিয়ে চলেছে। বিশ্বাস রেখেছেন সংবিধানের ওপর। ভগবান মেনেছেন আম্বেদকরকে।

তবে শুক্রবার যখন হাজারো মানুষকে একজোট হয়ে শ্লোগান দিতে দেখলাম, তখন মনে হয়েছিল ক্যামেরা বন্ধ করে এই সময়টাকে উপলব্ধি করতে। মনে হল প্রদীপটা জ্বলছিল।

কাল শাহিনবাগ থেকে দাবাং দাদি আসায় সলতেটা কেউ একটু ঠিলে দিয়েছে তাই আলোটা একটু জোরালো হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল। ভাইয়ের বাইকের পিছনে বিকেল বেলায় টহল দেওয়াটা আমার বেকার জীবনের অন্যতম কাজ ছিল। অনেকটা ডিউটি দেওয়ার মত দুজনে বেরিয়ে পড়তাম।

রোজ পীরের মন্দির পার করতেই তাঁর একের পর এক ঠাকুর প্রণাম দেখে প্রথমে হাস্যকর বলে মনে হত। ধার্মিক ব্রাহ্মণের কাছে এটা আশা করা স্বাভাবিক ছিল।

কিন্তু অবাক হলাম সেদিন, যখন এক মুসলিম বন্ধুর সঙ্গে যাচ্ছিলাম। আর দেখলাম পীর বাবাকে প্রণাম করতে।

সেদিনের ঘটনা আমায় বেশ নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন থেকে মনে হয়েছিল কারোর বিশ্বাস নিয়ে তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়।

দিল্লিতে যে ঘটনা ঘটল তাও বিশ্বাসের ওপর বলে মনে হয়েছে। একপক্ষের বিশ্বাস অপর পক্ষ খারাপ। কিন্তু অনেকেরই বিশ্বাস, আমরা এক। তা প্রমাণ করে দিয়েছে দাঙ্গার মধ্যে হিন্দুর দায়িত্ব মুসলমানের নেওয়া।

আর মুসলমানের দায়িত্ব হিন্দুর নেওয়ার পর। কারণ নতুন করে সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে অন্য ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই।

প্রসঙ্গত পার্ক সার্কাসের আন্দোলন দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশ্বাসের ওপরেই। সরকার দেশ থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তুলে নেবে এই বিশ্বাস তাঁদের আন্দোলনের প্রদীপকে এখনও জ্বালিয়ে রেখেছে।

সরকার পক্ষের একাধিক মন্তব্য তাঁদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। নিজের বুকের শিশুকে নিয়ে আজও তাঁরা লড়াই করছেন। তাঁদের বিশ্বাস তাঁরা সফল হবেন।

সম্পর্কিত পোস্ট