২১ এর মহারণে রাজীবেই আশার আলো: সমীক্ষা
দ্য কোয়ারি ডেস্ক:দুর্গাপুজো শেষ। শেষ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। এবার পালা কালীপুজোর। একে একে সমস্ত উৎসব পার্বণ শেষ হয়ে যাবে । তারপরই গণতন্ত্রের অন্যতম পার্বণ ‘ভোট উৎসব’র দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাবে।
যদিও সেই উৎসবের এখনও কয়েক মাস বাকি থাকলেও মাঠে নেমে গা ঘামাতে শুরু করেছে সব রাজনৈতিক দল। তবে অন্যান্য বার একেকটি রাজনৈতিক দলের একেকটি অ্যাজেন্ডা থাকলেও এবার একটি বিষয় কমন থাকবে। সেটা করোনা।
করোনা নিয়ে রাজনৈতিক বাক বিতন্ডা কম দেখেনি বাংলা। এমনকি এই করোনা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গোৎসবেও থাবা বসিয়েছে। যার জল গড়িয়েছে হাইকোর্ট অবধি। তবে সেক্ষেত্রে অনেক টাই ব্যাকফুটে গেছে শাসকদল, তা কারোর অজানা নয়।
করোনা যেমন এক ঝটকায় বদলে দিয়েছে মানুষের চিরাচরিত জীবন যাপন, তেমনি বদলে দিয়েছে রাজনীতির ধরনও। সামাজিক দূরত্ব মানতে গিয়ে সেই দূরত্ব যে কখন রাজনীতির অংশ হয়ে গিয়েছে তা বুঝতে বুঝতেই পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। সেটা বেশ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তৃণমূল এমনটাই বলছেন দলের নেতা কর্মীরা।
একদিকে রাজীব বন্দোপাধ্যায়। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী। শাসক দলের এই দুই কান্ডারী তেই ভরসা রাখছিল রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে প্রথম জন অর্থাৎ রাজীব বন্দোপাধ্যায় নিজস্ব ভঙ্গিমায় রাজনীতি করে দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও দ্বিতীয় জনের ক্ষেত্রে অবশ্য চিত্রটা একদমই অন্যরকম।
রাজনীতির পাশাপাশি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুত্ব দিয়েছেন গান কেও। কখনো দেশাত্মবোধক গান। কখনো আবার পাহাড় সমুদ্র প্রকৃতিকে নিয়ে গান। কখনো আবার মাতৃবন্দনা। সবেতেই অতি বড় নিন্দুকও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশংসায় সোচ্চার। শুভেন্দু অধিকারী একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ায় আপাতত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী তরী পার করতে রাজীবকেই ভরসা করছেন। এমনটা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে দলের অন্দরে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায়কে দলের ভিতেরই যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তার প্রলেপ দিতে হবে।
যদি হাওড়ার দিকেই নজর যায় তাহলে দেখা যাবে একদিকে অরূপ রায় অন্য দিকে রাজীব বন্দোপাধ্যায় নিজেই।হাওড়ার কোঅর্ডিনেটর দায়িত্ব তো বেশি।কিন্তু দলের ভিতর যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত তা কিভাবে সামাল দেবেন তার ফর্মুলা নিয়ে রোজ চুলচেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যানেজমেন্ট পড়া এই দক্ষ রাজনীতিবিদ।
জগতবল্লভপুর, পাঁচলা, উদায়নারায়ানপুর, বাগনানে গোষ্ঠীকোন্দল ক্রমশ বাড়ছে। বালি বিধানসভার বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়ার পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর নয়, বলছেন তারই অনুগামীরা। লক্ষীরতন শুক্লা ২২ গজে সুদক্ষ হলেও রাজনীতির ময়দানে একদম নতুন।
রাজনৈতিক তথ্য বলছে, হাওড়ায় একটু একটু করে পদ্মের চাষ শুরু করেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে ঘাসফুলের ভাঙ্গন রুখতে কেউ যদি পারেন তা রাজীব বন্দোপাধ্যায়। তবে অরূপ রায় বনাম রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের লড়াই বাড়তি অক্সিজেন জোগাতে পারে গেরুয়া বাহিনীকে।
এখানে পিকে এফেক্ট বা ফর্মুলা কোনো টাই কাজ করছে না। গোটা জেলা জুড়েই কাটমানি আর স্বজন পোষণ দুর্নীতির গন্ধ। এই কঠিন রোগ সারাবার মতো মেডিসিন পাওয়াই দুষ্কর। তবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যতই দুর্নীতি বরদাস্ত না করার হুঁশিয়ারি দেন না কেন তলে তলে সেই কাজ বহাল রেখেছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থক থেকে অনেক নেতারাও।
তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি নেই। টেট ও প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ, গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ বিশবাঁও জলে আর এই বিষয়টি নিয়েই চোরা স্রোত বাড়ছে দলের মধ্যে। তারপর ব্লক নেতাদের চালচলন বা শহুরে নেতাদের আচার আচরনে এলাকার মানুষ বিরক্ত।
নোট বন্দির পর থেকেই হাওড়ার জরি শিল্পিদের বাজার নষ্ট হয়ে গেছে। রাজ্য জুড়ে সেই অর্থে কোন কলকারখানা গড়ে ওঠেনি।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bjp-revamp-in-bengal-before-21-election/
তার ওপর করোনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ও আম্ফান দুর্নীতি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে ঘাসফুল শিবিরকে। প্রশ্ন হচ্ছে এখানেই।
প্রথমত গোটা বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন। কেন তাদের সেই অভিযোগ যাচাই করা হলো না?
দ্বিতীয়ত আর যদিও বা যাচাই করা হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে এতদিন শাসকদল চুপ ছিলেন কেন?
তৃতীয়ত এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি হয়ে রয়েছে তাতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা সামলে উঠতে পারবেন?
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও কাজকর্ম সেভাবে প্রচার না হওয়ার কারনে দায়ী দলের জেলা স্তরে নেতারাই। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাকেই হাল ধরতে হবে। না হলে বিপদ অনিবার্য।
তাই ২১ এর লড়াইতে বিরোধীদের হালকা চোখে না দেখে নিজেদের ঘর সামলানোর দিকে আগেই নজর দিতে হবে ঘাসফুল শিবিরকে। নাহলে বিজেপি বা বাম- কংগ্রেস জোট তৃণমূলের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।