ট্রাম্প নাকি জো বাইডেন, ভারতের ফায়দা কোথায়?

|| শুভজিৎ চক্রবর্তী ||

রাত পোহালেই মার্কিন প্রদেশের নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের আগেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন ৯ কোটি ২৫ লক্ষ ভোটার। বিপুল সংখ্যক আগাম ভোট একটি বেনজির ঘটনা বলে দাবী করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতের কাছে প্রশ্ন হল, জো বাইডেন নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প? কার জয় সবথেকে বেশী প্রভাব ফেলবে ভারতে?

কূটনৈতিক মহলের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়, বরং জো বাইডেনের জয় ভারতের অর্থনৈতিক বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আবার অনেকে বলছেন, জো বাইডেন রাষ্ট্রপতি হলে ব্যাপকভাবে না হলেও একটা পজিটিভ এফেক্ট ভারতীয় বাজারে পড়তে পারে।

এমনিতেই কোভিড পরিস্থিতি এবং লকডাউনের জেরে ভারতের অর্থনীতি একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের অধিকার পান সেক্ষেত্রে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বেশী করে আকর্ষিত করবে।

ভারতের সঙ্গে বানিজ্যিক এবং বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দু’পক্ষই কতটা সফল হয়েছে তা এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে পুর্বের ঘটনা অনুযায়ী রিপাবলিকানরাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ়তার সঙ্গে অটুট রেখেছে। এই তালিকায় প্রথমের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামনে রাখাই যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সারা বিশ্বের মধ্যে নজির গড়ে তুলেছে। জম্মু-কাশ্মীর ইস্যু থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তিক্ততা দুর করার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে স্বয়ং এগিয়ে এসেছেন ট্রাম্প।

অনুপ্রবেশকারী, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সবুজ শক্তির বিষয়ে ট্রাম্প সরকার যতটা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, জো বাইডেনের ক্ষেত্রে সেদিক থেকে কিছুটা রেহাই পাবে ভারত। কিন্তু নির্বাচনী ময়দানে ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের। বৃহত্তর ভারতীয়দের ভোট নিজেদের ঝুলিতে পুড়ে বাজিমাত করতে চাইছেন তিনি।

অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়  যেমন, সিএএ, এনআরসি এবং জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে জো বাইডেনের কড়া মন্তব্য ভারতীয় ভোট দখলের ক্ষেত্রে একটু চাপের হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মার্কিন নির্বাচনে জয়ের পর যদি ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে জো বাইডেন কোনও মন্তব্য করেন তাহলে তা দুই দেশের বন্ধুত্বের মধ্যে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

তবে ইরানের বিষয়ে ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব ভারতীয় বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ে ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি ভারতের অর্থনৈতিক বাজার আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু চিনের সঙ্গে ভারতের মনোভাবের সঙ্গে ট্রাম্পের কড়া পদক্ষেপের মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। বারবার চিনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে ট্রাম্পকে। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। যদিও চিনের বিরুদ্ধে একই সুর দেখা গিয়েছে জো বাইডেনের গলাতেও। উইঘুর মুসলিমদের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে চরম বিরোধিতা করেন তিনি। চিনের ক্ষেত্রে একই পদক্ষেপ নিলেও সুর নরম করে চিনের সঙ্গে পরিবেশ এবং বাণিজ্য নিয়ে একটা নতুন করে সেতু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা জো বাইডেনের রাষ্ট্রপতিত্বে হতে পারে ।

তবে ইতহাসের কথা অনুযায়ী ডেমোক্র্যাটিক হয়েও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিলেন বারাক ওবামা। একাধিক ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন তিনি। একইভাবে যদি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে আসলে নতুন কিছু হবে না। কারণ দলের হয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য লড়াই করছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। এছাড়াও ডেমোক্রেটিক দলে ভিভেক মুর্তি, রাজ ছেত্রী এবং রিচ বর্মার উপস্থিতি ভারতীয় ভোট টানতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সেদিক থেকে দেখতে গেলে হিন্দু ভোট দখলের জন্য সেফ খেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় হিন্দুদের বিরুদ্ধে সেরকমভাবে কোনও মন্তব্য ট্রাম্পের কাছে থেকে শোনা যায়নি। তাই মোদির জনপ্রিয়তার পাশাপাশি মার্কিন প্রদেশে ভারতীয় হিন্দু ভোট ট্রাম্পকে অনেকটা অক্সিজেন দিতে পারে। তবে জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের দখল পেলে মোদি-বাইডেনের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা হবে না এটা বলাই যেতে পারে।

পুর্বে সৌদি আরবের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ট্রাম্পের জন্য পজিটিভ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত চার বছরে আমেরিকার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক যতই কঠিন হোক এবং যতই কোভিড আক্রান্তের নিরিখে আমেরিকা এগিয়ে থাকুক না কেন, সৌদি আরব ইস্যুতে বিপুল অংশের ভোট নন-ডেমোক্রেটিকদের দিকেই ঝুঁকবে।

বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ দেশের নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটরা এগিয়ে থাকলেও ২০১৬ এর কথা মাথায় রেখে এখনই কিছু বলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ গতবারের নির্বাচনের জনপ্রিয়তার নিরিখে হিলারি ক্লিন্টন এগিয়ে থাকলেও শেষ সময়ে বাজিমাত করেছিলেন ট্রাম্প। ৩০৪ ভোটে জয়লাভ করেছিলেন ট্রাম্প। ২২৭ টি ভোট পান ক্লিন্টন। তবে ২০২০ তে সেই হাওয়ার কতটা পরিবর্তন হয়, সেটাই দেখার।

সম্পর্কিত পোস্ট