চেনা ছন্দে এনআরসির প্রতিবাদে শহর কাঁপালেন মমতা

এনআরসির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার শহর জুড়ে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঁথির মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। শেষ হয় শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। তবে এই প্রথমবার নয়। এর আগেও এনআরসি ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে তৃণমূল সরকার।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয় নাগরিক পঞ্জীর খসড়া। বাদ পড়ে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম। ক্ষোভে ফেটে পড়েন আসামের আমজনতা। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ও অসমের মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে গিয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। সেই দলে ছিলেন মহুয়া মৈত্র, ডেরেক ও ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দুশেখর রায়। কিন্তু শিলচর বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হয় তাঁদের। এরপরই তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। যদিও সেই ঘটনা লোকসভা নির্বাচনের আগে।

এরপর ব্রহ্মপুত্র দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। দ্বিতীয়বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কুর্সিতে বসেন নরেন্দ্র মোদি। ক্ষমতায় এসেই ফের ১০০ দিনের মধ্যে আসামে নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। বাদ পড়ে ১৯ লক্ষ নাগরিকের নাম। নাম বাদ পড়ে বাঙালি হিন্দুদের নামও। এরপরই ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছে অসমবাসী। আসামের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। এরপরই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ঘোষণা করা হয় পশ্চিমবঙ্গেও লাগু করা হবে এনআরসি।

দিলীপ ঘোষ, স্মৃতি ইরানি, কৈলাশ সকলের এক সুর। এরাজ্যেও লাগু হোক এনআরসি। এরপরেই দলীয় স্তরে মিছিল সংগঠিত করে সকলকে প্রতিবাদে নামার ডাক দিয়েছেন মমতা পাশাপাশি আসাম লাগোয়া উত্তরবঙ্গের জেলা গুলিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

কলকাতার মহামিছিলে সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিলে স্লোগান ছিল মোদি বিরোধী। এদিন শুধু এনআরসির প্রতিবাদই নয়, একইসঙ্গে জনসংযোগও করলেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমোর দাবি এরাজ্যে কোনোভাবেই লাগু হবে না এনআরসি।

লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্য ২ থেকে বেড়ে ১৮ টি আসন পেয়েছে বিজেপি। তারপর থেকেই এনআরসি লাগু করতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ক্রমশ ঝুরঝুরে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের তলার জমিও। তাই জনসংযোগকে হাতিয়ার করে ফেরে ময়দানে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পরনে নীল সাদা শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চটি। চেনা ছন্দে এদিন প্রতিবাদ মিছিলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের এককাট্টা করে রাজপথ কাঁপালেন।বার্তা দিলেন সেদিনেও প্রতিবাদ আজও জারি আছে।

সামনের বছর পুরোভোট। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন। একদিকে যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন মমতা অন্যদিকে তাঁরই বিরুদ্ধে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বামেরা। মমতার শিল্পনীতি ও কর্মসংস্থানে ব্যর্থতার প্রতিবাদে সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযান নতুন করে মমতাকে ভাবাচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

এখন দেখার এনআরসির প্রতিবাদে ফেডারেল ফ্রন্ট মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ায় কিনা। অন্যদিকে মমতার মহামিছিলে পুজোর মুখে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদেরও। যানজটে ও ভিড়ে সমাজের বিভিন্ন মানুষের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে শুরু হয়েছে।

পিকে ফর্মূলা কাজে লাগিয়ে আমজনতার সমস্ত ক্ষোভকে প্রশমিত করে সাধারণ মানুষকে কতটা নিজের পক্ষে আনতে সক্ষম হন মুখ্যমন্ত্রী সেটাই দেখার।

সম্পর্কিত পোস্ট