কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে রাজ্য, প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন মমতা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতি এবং ভ্যাকসিন বন্টন নিয়ে মঙ্গলবার কোভিডে সর্বাধিক আক্রান্ত রাজ্যগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকেও রাজ্যের বকেয়া টাকা নিয়ে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্য খরচ করেছে প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা। কিন্তু রাজ্য পেয়েছে ১৯৩ কোটি টাকা। জিএসটি বাবদ ৮৫০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
করোনা ভ্যাকসিন হাতে এলে তার বন্টন প্রক্রিয়া কিভাবে হবে? কারা অগ্রাধিকার পাবেন? এই বিষয় নিয়ে অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। বাঁকুড়ায় তিনদিনের সফর থেকেই এদিনের বৈঠকে যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ সৌগতের সঙ্গে বৈঠকের পরেও বিনা দলীয় ব্যানারে মিছিল করলেন শুভেন্দু
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যবাসীর কোভিড ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার। মারণ ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেতে কবে ভ্যাক্সিন আসবে তা নিয়ে অপেক্ষা করছে সাধারণ মানুষ। আর এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার তার প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করেই রেখেছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের হাতে প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী রয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষেধক সঞ্চয়ের জন্য যে অত্যাধুনিক ব্যবস্থার প্রয়োজন তাও তৈরি রেখেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিষেধক প্রধানের এই কর্মসূচিতে যৌথভাবে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।
আরও পড়ুনঃ মিহির-রবি বৈঠকে ঘুচল না শীতলতা !
এদিনের ভার্চুয়াল কনফারেন্সেও করোনা লড়াইয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা সেরকম পাওয়া যায়নি বলেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পর্বে রাজ্য ইতিমধ্যেই ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে এর মধ্যে মিলেছে মাত্র ১৯৩ কোটি টাকা। জিএসটি বাবদ এখনও বকেয়া রয়েছে সাড়ে ৮ কোটি টাকা। সেই টাকা কেন্দ্র দিক।’
একইসঙ্গে তিনি রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘দুর্গা, কালী আর ছট পুজোর মতো উৎসব পালন করা হয়েছে রাজ্যে। তারপর চালু হয়েছে লোকাল ট্রেনও। তা সত্ত্বেও সংক্রমণ আর মৃত্যুর হার কমেছে রাজ্যে। বেড়েছে সুস্থতার হারও। পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত রাজ্য, বাইরে থেকে প্রচুর লোক আসা যাওয়া করে। তাই সংখ্যা বেশ খানিকটা বেড়েছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
পাশাপাশি, টিকাকরণ পর্বে কেন্দ্রের সঙ্গে সমস্ত সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রাজ্য বলেই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের এই ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যত দ্রুত ভ্যাকসিন জোগাড় করা যায়, ততই ভালো। তাতে সারা দেশের লোকেরই মঙ্গল। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও সবপক্ষের সঙ্গেই রাজ্য একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত।
সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিন তৈরি ও বণ্টন নিয়ে কেন্দ্রের পরিকল্পনার কথা জানতে চেয়েছিলেন দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রথমে কোনও সদুত্তর মেলেনি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই বিষয়টি তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়ে না। যদিও দেশব্যাপী আক্রমণের জেরে সুর নরম হয় কেন্দ্রীয় সরকারের।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হর্ষবর্ধন জানিয়ে দেন, সব যথাযথ ভাবে চললে ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের টিকা হাতে পেয়ে যাবে ভারত। কেন্দ্রের অনুমান, জুন-জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ২৫ কোটি মানুষের কাছে এই টিকা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে কোন রাজ্যে কীভাবে ভ্যাকসিনের বণ্টন হবে। কীভাবে এগোবে টিকাকরণের পুরো প্রক্রিয়া ইত্যাদি সমস্ত আলোচনা করতেই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।