দেশজুড়ে ‘কালো আইন’ কৃষকদের মৃত্যুর পরোয়ানার সমানঃ হান্নান মোল্লা
শুভজিৎ চক্রবর্তী
দেশজুড়ে আলোচনার শিখরে দিল্লির কৃষক আন্দোলন। কৃষক আন্দোলনের উত্তাপ কমাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রের হেভিওয়েট নেতারা। পাল্টা কেন্দ্রের সঙ্গে বিনা শর্ত সাপেক্ষে বৈঠকে যেতে চান কৃষকরা।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানালো কেন্দ্র। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে হবে বৈঠক। যদিও সর্বভারতীয় কিশান সভার যুগ্ম সম্পাদক তথা সিপি(আই)এম পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লার দাবী তিনটি কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। ‘কালো আইন’ কৃষকদের মৃত্যুর পরোয়ানার সমান বলে দাবী করেন তিনি।
দ্য কোয়ারিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্ষীয়ান বাম নেতা জানান, কেন্দ্রের আনা এই নতুন তিন কৃষি আইন এনে কৃষকদের জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আমাদের দাবী, অবিলম্বে এই আইন প্রত্যাহার করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। সেইসঙ্গে নয়া বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের দাবীও তুলেছেন তিনি।
মঙ্গলবারের বৈঠক প্রসঙ্গে উলুবেড়িয়ার প্রাক্তন সাংসদ বলেন, বিজেপি বৈঠক ডাকছে মানে ওদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে। তারা যেটা বলবে সেটা শুনতে হবে। কৃষকদের কোনো কথা শোনা হবে না। গত কয়েকদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী সমস্ত জায়গায় কৃষি আইনের প্রশংসা করে বেড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন প্রশংসা করছেন তার বিপক্ষে যাওয়ার ক্ষমতা কোনও বিজেপি নেতার নেই। আসলে গোটা আন্দোলনে কৃষকদের আনাড়ি দেখানোর চেষ্টা করছেন কেন্দ্রের নেতারা।
আরও পড়ুনঃ কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্র, নেতৃত্বে রাজনাথ সিং
সোমবার রাতেই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ৩২ টি কৃষক সংগঠনকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র। সংবাদসংস্থা এএনআইকে পাঞ্জাব কৃষক সংঘর্ষ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুখবিন্দর এস সাভরান জানিয়েছেন, দেশে প্রায় ৫০০ এর বেশী কৃষক সংগঠন রয়েছে। প্রত্যেককে না ডাক হলে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে রাজি নন তারা।
এই প্রসঙ্গে হান্নান মোল্লা বলেন, বিভিন্ন সময় দেশজুড়ে একাধিক আন্দোলন হয়েছে। কখনও পশ্চিমবঙ্গ, আবার কখনও অন্ধ্রপ্রদেশ। আবার কখনও অন্য রাজ্য এগিয়ে এসেছে। এবারের আন্দোলনে পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠনগুলি সামনে এগিয়ে এসে আন্দোলনে শামিল হয়েছে। তার মানে ভাবার প্রয়োজন এটা সর্বভারতীয় কৃষক আন্দোলন নয়। ২৬ নভেম্বর ধর্মঘটের ডাকে সারা দেশের কৃষক সংগঠন একজোট হয়ে সাড়া দিয়েছিল। বিজেপি অধ্যাদেশ পাশ করানোর পর থেকেই আমরাই প্রথম আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলাম। মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে এটা শুধুমাত্র পাঞ্জাবের আন্দোলন। পাঞ্জাবের ৩২ টি সংগঠনকে আগেও ডাকা হয়েছিল। তারা দু’বার গিয়ে ফিরে এসেছেন। আমাদের দাবী এমএসপিকে আলাদা করে আইন নয় বরং নতুন আইনের অ্যাজেন্ডায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে কেন্দ্র। এর আগে সকালেই সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার বাড়িতে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিজেপির শীর্ষ নেতারা পর পর দু’দফার বৈঠক ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষকদের বৈঠকে কোনও রফাসূত্র বের হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।