সুশান্ত বনাম শুভেন্দুঃ বিপ্লবের মাটিতে বিপ্লবের গান

সহেলী চক্রবর্তী

রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে হট টপিক শুভেন্দু অধিকারী। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের অন্দরেই কমবেশী আলোচনা চলছে। পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকান থেকে লোকাল ট্রেনের কামরা- সর্বত্রই শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে ফিসফাস শোনা যাচ্ছে। তবে যারা বামপন্থী তাদের কাছে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো টাই ২০২১এর নির্বাচনে মূল টার্গেট।

আর বামেদের সেই পালে নতুন করে হাওয়া যুগিয়েছে দীর্ঘ ৯ বছর পর সুশান্ত ঘোষের জেলায় ফেরা। আদর্শের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু কোনো কিছুর জন্যই আদর্শকে ত্যাগ করা যাবে না। সারাজীবন অনেক রাজনৈতিক ওঠা পড়া যার নিত্য সঙ্গী সেই সুশান্ত ঘোষ কোনো দিন হাজার উত্থান পতন সত্ত্বেও একচুল সরে আসেননি নিজের আদর্শ থেকে।

দোর্দণ্ড প্রতাপ বাম নেতা সুশান্ত ঘোষের দাপটে নাকি একসময় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। বাম জমানার শেষে কঙ্কাল কাণ্ড নিয়ে সরব হয় তৃণমূল। সেইসময় তার ঠিকানা হয়েছিল জেল। তারপর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে অবশ্য আর জেলায় ফিরতে পারেননি।

পার্টির সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝি হয়। সাসপেন্ড করে দল। দোষ না থাকা সত্বেও কোনোদিন পার্টির বিরুদ্ধে কোথাও মুখ খুলতে শোনা যায়নি তাঁকে। তাঁর কারন অবশ্য সেই আদর্শ। তারপর অবশ্য ৩মাসের মাথায় পার্টি সাসপেনশন তুলে নেয়।  ফলত নীতিগত দিক থেকে জয়ী হন সুশান্ত ঘোষ।

বিমান বন্দোপাধ্যায়, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, ও সুশান্ত ঘোষের মধ্য জনপ্রিয়তার নিরিখে নিঃসন্দেহে কি সুশান্ত ঘোষ। কারণ দীর্ঘ ৯ বছর পর যার জেলায় ফেরার খবরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের আনাচে কানাচে লাল পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় পা মেলাতে সামিল হবে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

সুশান্ত ঘোষের এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো তার আদর্শ। রাজনীতিকে যিনি কখনোই পেশা হিসাবে নেননি। বরং নিয়েছেন নেশা হিসাবে। যেটা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাড়িয়ে বিরল।

বামপন্থী যারা এখনো এই বাজারে টিকে আছে শুধুমাত্র সেটা আদর্শ ও নীতিবোধের তাগিদে। তাই আজ পর্যন্ত যেকোনো সাংবাদিককে মেপে কথা বলতে হয়।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/trs-is-the-single-largest-party-in-ghmc-election

বর্তমানে রাজনীতি আর নেশা নেই। বরং অনেকেই আজকাল রাজনীতিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করছেন। যে দলে থেকে বীজ বপন করে, অঙ্কুর থেকে গাছের জন্ম দিয়ে ফল খাচ্ছেন, তারাই স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে বা নিজের লেজে পা পড়লে চলে যাচ্ছেন অন্যকোনো রাজনৈতিক দলে। আজকের দিন পর্যন্ত এমন লোকজন ভুরি ভুরি ঘুরে বেড়াচ্ছে আপনার সামনে।

দিন কয়েক আগেই এক বাম নেত্রী দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন , আদর্শ বলে আজকাল কিছু হয়না। যেখানে স্কোপ আছে সেখানে নাম লেখানোই ভালো।

রাজনীতিতে ‘ নীতি ‘ ভিন্ন পারে, তাই বলে আদর্শ ভিন্ন হবে তা কখনোই কাম্য নয়। আজ আমি যে দলে থেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধাচারণ করছি, অথচ সেই আমি আগামীকাল যেকোনো কারণেই (রাজনৈতিক -সামাজিক -ব্যক্তিগত) প্রতিপক্ষের দলে নাম লিখিয়ে তাদের আপন করে নিচ্ছি । এ কেমন রাজনীতি ! একথা আমি বলছি না, বলছেন আমজনতা।

দেনা পাওনার জটিল অঙ্কের বেড়াজালে ঢুকে গিয়েছে রাজনীতি নামক বস্তুটিও।  তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় দল ত্যাগ করছেন শুভেন্দু অধিকারী। যোগদান করছেন অন্য (প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলে) দলে। বা তৈরী করছেন স্বতন্ত্র দল। তাহলে কি তিনি সেই জনপ্রিয়তা , মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা পাবেন তো ?

আজ তিনি নাম না করে যে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন প্রকাশ্য জনসভায় একদিন তিনি সেই দলেরই সদস্য ছিলেন। এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন সেই রাজনৈতিক দলের ব্যানারে। ফলে তৈরি হয়েছিল হাজার হাজার অনুগামী। কিন্তু যখন আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে তিনি দিক পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক,  তখন মনে পড়ে যায় সেই আদর্শের নামে তার বলে চলা কথা গুলো।

মেদিনীপুর বিপ্লবের মাটি। সেই বিপ্লবের মাটিতেই নতুন করে বিপ্লবের সূচনা হবে রবিবার। একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর সাংবাদিক বৈঠক। অন্যদিকে দীর্ঘ ৯ বছর পর বিপুল পরিমাণ জনপ্রিয়তা এবং জনসমর্থন সঙ্গে নিয়ে মাথা উঁচু করে পশ্চিম মেদিনীপুরের গরবেতায় ফিরছেন সুশান্ত ঘোষ।

লড়াইটা আদর্শের। লড়াইটা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর। বিপ্লবের মাটিতেই বিপ্লবের গান। রাজ্যবাসী সেদিন নজরে রাখবে দুই জনপ্রিয় দাদাকেই। কারণ দুজনেই চাইছেন নতুনের সূচনা করতে। সুশান্ত ঘোষকে নিয়ে বা বলা ভালো তার রাজনৈতীক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও, প্রশ্ন শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে। তার রাজনৈতিক কর্ম পন্থা নিয়ে।

সম্পর্কিত পোস্ট