হিসাব হবে বরাবর, জোটের আহ্বান সুশান্ত ঘোষের

।। নয়ন রায় ।।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা জঙ্গল। বাম জমানার সামিয়ানা আজও আর নেই। অথচ শীলাবতী নদীর পাড়ে গড়বেতা একসময় ছিল সিপি(আই)এম নেতা সুশান্ত ঘোষের দুর্গ। জমানা পাল্টে এখন তৃণমূল। মানুষের মুখে এখন একটাই নাম সুশান্ত ঘোষ।

কঙ্কালকান্ডে নাম জড়ানোর দীর্ঘ নয় বছর পর নিজের চন্দ্রকোণা শহরে পা রাখলেন। বর্ষীয়ান বাম নেতার সাফ নির্দেশ এলাকায় প্রচার দেওয়া যাবে না। তা হয়নি। কিন্তু ঘরের নেতাকে স্বাগত জানাতে আগের দিন থেকে লাল পতাকায় মোড়া ছিল গোটা শহর। বৃদ্ধ থেকে মাঝারি বাম কমরেডরা আশায় বুক বেধেছিলেন তাঁদের ঘরের নেতা ঘরে ফিরছেন।

তবে জেলায় ফেরা কি এতটা সোজা ছিল একদা রাজ্যের মন্ত্রীর জন্য? না ছিল না। কারণ এখনও তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডের মামলা চলছে। সেই জন্যই অনেক কিছু না বলে কিছুটা বললেন। জেল জরিমানা এবং শাসকের রক্ত চোখের সামনে তাঁকে বারবার পড়তে হয়েছে।

রবিবার চন্দ্রকোনায় ‘পরিমল কানন’ এর তালা আজ থেকে খুলে গেল। সকাল থেকে বাইক বাহিনী তাঁকে শহরের বাইরে অপেক্ষা করছিল তাঁদের অতি পরিচিত নেতাকে নিয়ে আসার জন্য। শালবনির রেল লাইন সবে পার হয়েছে। হাজার হাজার বাম কর্মীদের ভিড় দেখে গাড়ি থেকে নিজেই নেমে পড়লেন সুশান্ত ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন সুজন চক্রবর্তী, ফুয়াদ হালিম, তন্ময় ভট্টাচার্য সহ একাধিক বাম নেতৃত্ব। বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসের এর ভিড়ে হারিয়ে গেলেন? না হারিয়ে যাননি। বরং তাঁকে ঘিরে জেলাতে সমর্থকদের উন্মাদনা থাকাটাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুনঃ করছেন না সাংবাদিক সম্মেলন, নীরবে ছাড়তে পারেন দল- জানাচ্ছে শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহল

শনিবার কর্মীদের উন্মাদনার সঙ্গেও নিজেকে আলাদা করতে পারলেন না বাম নেতা। অনেকটা পথ কর্মীদের সঙ্গে হাঁটলেন তিনি। ছো নাচের বাজনার তালে খুশির জোয়ারে গা ভাসালেন বাম কর্মীরা। এরকম একজন নেতার জন্য এত ভিড়! অনেকে বলছেন জেলায় সুশান্ত ঘোষের উপস্থিতি বামেদের উজ্জীবিত করেছে। অনেকে আবার প্রশ্ন করছেন, তবে হাওয়া ঘুরছে? না! সেটা বলার এখনও সময় আসেনি।

সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বামনেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বললেন, বদলা হবে আর বদলও হবে। কর্মীদের উদ্দেশ্যে দীপ্ত কন্ঠে বললেন হিসাবের খাতাটা ঠিক করে রাখুন। বাকি হিসাব পরে হবে। মঞ্চকে ঘিরে থাকা উৎসাহী মানুষের ভিড়ে হাততালি যেন উপচে পড়ছে।

শীতের বেলা। শীলাবতীর কোলে আস্তে আস্তে ঢলে পড়ছে সুর্য। শেষ বক্তা সুশান্ত ঘোষ। তাঁকে শোনার জন্য শুধু মেদিনীপুর নয়, গোটা বাংলা মুখিয়ে ছিল এদিন। বিচারাধীন বিষয়ে অনেক কিছু না বললেও, সংক্ষেপে ব্যক্ত করলেন দীর্ঘ নয় বছরের যন্ত্রণা। শাসকের আক্রমণ। তবে যে হিসাবটা যিনি তৈরি করে রেখেছেন, সেটা বলতে ভুললেন না। গলার ধমনী উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা আছেন তো? সঙ্গে সঙ্গে সমর্থকদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিতে মুখের মধ্যে হাসি ফিরে পেলেন বাম নেতা। বললেন অনেক হিসাব বাকি।

এদিনের সভায় চন্দ্রকোণার গোটা রাস্তা অবরুদ্ধ করে চলে সুশান্ত ঘোষের স্বাগত সভা। বিধায়ক ছিলেন ৩২ বছর। মন্ত্রী ছিলেন ১৫ বছর। আজকের সভা বামপন্থীদের মনে উল্লাস এনে দিয়েছে সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু মেদিনীপুরের মাটি এত সহজে ছেড়ে দিতে রাজি নয় শাসক দলও। আগামী ২১ এর নির্বাচনে মেদিনীপুরের মাটি দেখবে লড়াই। তবে সুশান্ত ঘোষের নেতৃত্বে বামেরা কি তাঁদের দুর্গ ফিরে পাবে কি না সময় বলবে।

সম্পর্কিত পোস্ট