নির্বাচনী ময়দানে উত্তাপ বাড়াচ্ছে বাকযুদ্ধ, কী শিখবে সুশীল সমাজ?

সহেলী চক্রবর্তী

দুদিনের রাজ্য সফরে জেপি নাড্ডার এবারের লক্ষ্য ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়। সেই মোতাবেক তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ডায়মন্ড হারবারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাওয়ার পথে বিজেপি নেতৃত্বদের অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের।

ভাঙচুর করা হয় বিজেপি নেতৃত্বদের গাড়ি। বেশকিছুক্ষণ চলে মুহুর্মুহু ইঁটবৃষ্টি। ভেঙে যায় একাধিক গাড়ির কাঁচ। আহত হন অনেকেই। তবে গুরুতর আঘাত কারোরই লাগেনি। এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতৃত্বরা। তোলপাড় চলে বিজেপির নীচতলা থেকে উপরতলায়। বিজেপি কর্মী সমর্থকদের অবরোধ-বিক্ষোভে বিপর্যস্ত জনজীবন।

ডায়মন্ডহারবারে পৌঁছে মঞ্চে উঠে প্রথমেই এই আঘাত নিয়ে তৃণমূলকে একহাত নিতে কসুর করেননি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তিনি বলেন, বহত জলদ্ ইহা কমল খিঁলে গা… মুহুর্মুহু হাততালি ভেসে আসে। তবে তার জন্য তিনি উপস্থিত ‘মিত্র’দের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।

প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। এখন যাদের কাছ থেকে তিনি আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন, ঘনঘন রাজ্যে আসছেন, চলে যাচ্ছেন কোন কলোনি-বস্তি-ইটের ঘরে থাকা মানুষের কাছে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে। ভোটের পর আমজনতার উন্নয়ন যজ্ঞে খামতি হলে তিনি বা তাঁরা একইভাবে আসবেন তো?

বা উন্নয়নের জোয়ারে ভাসার সময় নৌকা যদি পাঁকে আটকায় উদ্ধারকর্তা হিসাবে দিল্লি বাসীদের পশ্চিমবঙ্গে পা পড়বে তো? এই প্রশ্ন আমরা করছি না। তিনি যাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারাই করছেন।

এই প্রশ্নের উত্তরে গোটা বিষয়টাকে সময়ের উপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত। অভিষেকের গড়ে তিনি সভার শুরুতেই সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পশ্চিম মেদিনীপুরের সভা থেকে তুই-তোকারি করে বিজেপিকে সমর্থন করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তাহলে প্রশ্ন, কিছুদিন আগে একটি ‘চায় পে চর্চা’ অনুষ্ঠানে গিয়ে দিলীপ ঘোষ কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেখানে গালিগালাজের উল্লেখ ছিল। সেদিন কেন জেপি নাড্ডা বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে প্রশ্ন করেননি তার ভাষা জ্ঞান নিয়ে? মানুষটি যতই অপছন্দের হোক, তাঁকে বা তাঁর পদটিকে অসম্মান করা যায় কি?

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bjp-farm-law-campaign-in-700-districts/

যতই নির্বাচন এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে বাকযুদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতিবিদদের যা ভাষার প্রয়োগ চলছে সেটা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে কোনো মিল খায় বলে মনে হয় না। ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলার সংস্কৃতি।

যদিও এরাজ্যে কু-কথার শুরু করেছিলেন প্রয়াত বাম নেতা অনিল বসু। আর সেই ধারা অব্যাহত রেখে চলেছেন বর্তমানের আধুনিক সমাজের রাজনীতিবিদরা। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে তৃণমূল, তেমনি রয়েছে বিজেপি।

কী শিখবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম? আগামী দিনে নতুন প্রজন্ম, যারা রাজনীতিতে আসছেন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের এই ভাষা জ্ঞানের প্রয়োগ রাজনীতির প্রতি তাদের আগ্রহ আদৌ বাড়াবে বলে মনে হয় না। কোথায় যাচ্ছে ভবিষ্যৎ? তা নিয়ে দানা বাঁধছে সংশয়। তৈরী হচ্ছে প্রশ্ন। কোন অচেনা ধ্বংসের হাতছানির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সমাজ?

সম্পর্কিত পোস্ট