রাজনীতি নাকি আলু, ভোটের আগে কার দর বেশী ?
শুভজিৎ চক্রবর্তী
কেন্দ্রীয় সরকারের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজের দাম। অথচ অন্যান্য সবজির তুলনায় এই সমস্ত জিনিসের দর সব চাইতে বেশী। তেমনিই নিত্য দিনের রাজনীতিতে যাদের দর একসময় কম ছিল তাঁদের এখন দর বাড়তে শুরু করেছে।
আর যাদের দর বেশী ছিল তাঁরা এখন জল মাপছেন। তুল্যমূল্যের বাজারে নিজেদের দাম ঠিকভাবে মেপে নিচ্ছেন নেতারা। শুধুমাত্র পার্থক্য হল, চাল-ডাল-আলু-পিঁয়াজের প্রয়োজন গরীব মানুষের রোজ হয়। আর নেতাদের ভোটের সময় গরীব মানুষগুলোকে বেশী করে প্রয়োজন হয়।
এক জাত থেকে আলাদা জাতি, এক জাত থেকে আর এক জাত যত বেশী ভাগ করা হবে ভোটের অঙ্কটা মেলাতে ততটা সুবিধা। কোন জেলায় কত শতাংশ জাতি অথবা উপজাতির মানুষের বসবাস তা চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবেন।
সমস্যা হল কোন জেলায় মানুষের পানীয় জল কতটা প্রয়োজন, লকডাউনে কতটা কিলো করে খাদ্য পুরিবার পিছু প্রয়োজন ছিল তার হিসেব মেলাতে গেলে নেতাদের গাঁট গুনতে বসতে হয়। তারই উত্তর দিতে ভোটের আগে একপক্ষ এর জবরদস্ত হিসেব নিকেশ দিতে বসেছেন।
১০ বছরের খতিয়ানে কোন খাতে কত খরচ হল, সবের হিসেব আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হল। আর অপরপক্ষ মানুষের মানভঞ্জনে জোর দিতে থাকবেন।
যদিও সাম্প্রতিককালে রাজ্য রাজনীতিতে মান, অভিমান এবং মানভঞ্জন একটু বেশী-ই চলছে। কিন্তু এসএসসি, টেট থেকে শুরু করে, প্রাইমারি এবং আপার প্রাইমারী পরীক্ষার্থীরা এখনও অভিমানী। প্ল্যাকার্ড হাতে আন্দোলনকারীদের দেখে মুখ্যমন্ত্রী করলেন অভিমান।
করোনা কালে ভার্চুয়াল প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ সুরাহা কিছু মিলছে না। এদিকে রাজ্যের মধ্যেই চাকরীর জন্য শূন্যপদের প্রচার দিচ্ছেন আইপ্যাক এবং বিজেপির আইটি সেল। কিন্তু এহেন প্রযুক্তিতে উন্নতশীল নতুন ভারতের যুবকরা খুঁজে চলেছেন সরকারী পদের চাকরী।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/nadia-political-situation-2021tmcinner-clash/
পঞ্চপান্ডব নিয়ে বসা গেরুয়া শিবিরের ইন্টারভিউ চলছে। চাকরীর জন্য নয়। ওটা হল কোন জায়গায় সংগঠন বেশী, কোন জায়গায় আরও জোর দিতে হবে এই সব ডায়েরিতে লিখে রাখছেন পান্ডবরা। ‘সোনার বাংলা’ তৈরির আহ্বায়কের দেওয়া টাস্ক সঠিক পথে পালন করতে হবে।
অন্যায় প্রতিরোধে হচ্ছে বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি। এরই মধ্যে আলু-পিঁয়াজের প্রশ্নের আগেই সংসদে নির্মলাজির উত্তর মনে পড়ে যায়।
অমিত শাহের পোস্তর বড়া দিয়ে বাসমতী চালের ভাতের রেসিপি খুব বিকোচ্ছে বাংলায়। চুপিসারে দেখে ধনেপাতা আর বাধাকপি নিয়ে মন্তব্য করেও ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী। আর শীতের আগেই বাংলায় বেড়ে চলেছে সবজির দর।
শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে দিল্লিতে আন্দোলনে শামিল কয়েক লক্ষ কৃষক। নতুন দামে আলু হাত দিয়েই বাড়ি ফিরে আসছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে একে অপরের ভবিতব্য আলু বিক্রতা বলে ঠিক করে দিচ্ছেন নেতারা।
আলুর দামের অবস্থানের জায়গায় তাঁদের রাজনৈতিক গুরুত্ব কোথায়? তা নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে। মানে কে কতটা কার থেকে দূরে? সেই ‘জল্পনা’- র ক্লাইমেক্স যেন আর হচ্ছে না।
তবে ভার্চুয়াল দুনিয়ার দর করোনাকালে বেড়েছে। শারীরিক দুরত্ব ভুলে চিঠি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ট্রেন যাত্রী। কেউ মজা নিচ্ছেন টুইটার যুদ্ধের।
রেলগাড়ির থেকে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে সদস্যের সংখ্যা। অন্যদল থেকে সুরক্ষিত মানুষের হিসেবটা মিলে গেল। কিন্তু করোনাকালে কতগুলো মানুষ কর্মহারা হল সেটার হিসেব চেয়ে বেজায় বিরক্ত করবেন না।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bjp-will-continue-the-process-of-injury-even-after-the-election-yashwant-sinha/
এরই মাঝে আলু-ময়দা ছেড়ে রাজনৈতিক টোপ দিয়ে বসে রয়েছেন অন্য পক্ষের নেতারা। সৌজন্য সাক্ষাৎ চলছে, মান অভিমান ব্যক্ত হচ্ছে, কিন্তু রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কিছু বলছেন না। বললেও রাসের মেলায় আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না। কেউ দিচ্ছেন ‘সম্মানের ডাক’।
নিজেরা বিচারক হয়ে নিজেরাই প্রতিযোগিতার উন্মাদনা বাড়িয়ে চলছেন। ঠিক আছে। যতদিন চলবে ততদিন পাবলিক খাবে। মানে টিআরপি ততদিন উপরে থাকল। কোচবিহার থেকে কাঁথি একটাই হেডলাইন “বাড়ছে জল্পনা”। বাদ পড়ছে আলুর দাম, পিঁয়াজের দাম, আর মানুষের অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের দাম। সত্যি কথা বলতে কি এসি ঘরে আলু নিয়ে আলোচনা পোশায় না। না হয় বাদ রইল সেটা।