বছর শেষে একনজরেঃ ঘটনাপ্রবাহের তৃতীয় পর্ব

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ লকডাউনে আধপেটা মানুষের মুখে ভাত জোগাতে কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা করে একাধিক সংস্থা। সঙ্গে হাত লাগায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অর্থাৎ অভাব এবং অন্নের তাগিদে মানুষের আর্তনাদের ছবি একমাত্র আমাদের সামনে হাজির করেছে কোভিড।

কারণটা ভীষণ স্পষ্ট। বিহার যখন করোনা এবং বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে। বিহারের মানুষের প্রতিটি দিন জিজ্ঞাসা চিহ্নের সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছিল। সেই সময়েই বিহারের নির্বাচনের জন্য সবুজ সংকেত দেয় নির্বাচন কমিশন।

করোনার শারীরিক দুরত্বের কথা চুলোয় দিয়ে দুই পক্ষের জনসভার বিপুল ভিড় নজরে আসে। জুলাই মাসে যখন দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক তখন বিহারের একাধিক জেলায় দলীয় কর্মসুচী চালিয়ে গিয়েছেন বিজেপি নেতারা।

সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বহাল পরিকাঠামো একেবারে জনসমক্ষে চলে আসে। শুধু তাই-ই নয় প্রথম সারীর যারা কোভিড যোদ্ধা অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স, হাসপাতালের কর্মী এদের অনেকেই ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত হন।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/round-up-2020-part-1/

প্রশ্ন আবারও ওঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা যুদ্ধে কাজের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কখনও হাততালি দিয়ে, থালা বাজিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে অথবা ফুল ছড়িয়ে। কিন্তু আজ অবধি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবে দেশে কতজন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়েছেন তার হিসেব কেন দিতে পারলেন না?

শুধুমাত্র তাই-ই নয়, এই করোনা কালে অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলির অবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছিল। করোনা ছাড়াও অন্য কোনও রোগে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সেদিকেও সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই।

করোনাকালে বদলে গিয়েছে জনসংযোগের কায়দা কানুন। জনসমাবেশের পরিবর্তে ভার্চুয়াল সমাবেশে অভ্যস্ত হয়েছেন প্রথম সারীর নেতারা। কিন্তু তাতে একবার বেগতিকে পড়তে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে । শয়ে শয়ে চাকরী প্রার্থীরা যারা কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন করছিলেন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর লাইভটাকেই আন্দোলনের পথ হিসাবে বেছে নিলেন।

এটি শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হয়নি। চাকরীর দাবীতে টুইটার ট্রেন্ডিং থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাইভ কমেন্ট বক্স ভরিয়ে দেন যুব সম্প্রদায়। প্রশ্ন একটাই। আবেদনকারীরা চাকরী কবে পাবেন? একাধিক মানুষ কর্মহারা হওয়াতে ভেঙে পড়ে দেশের অর্থনীতি।

ভারতের আর্থিক দুর্দশা নিয়ে আলোচনা হয় বিভিন্ন মহলে। আর সেই আলোচনা এড়িয়ে যেতে বিষয়টিকে অ্যাক্ট অব গড বলে পাশ কাটিয়ে দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

এতদিন ধরে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে সরকারকে। কিন্তু করোনাকালেও ভারতের পড়শি দেশের চোখ রাঙানি কমেনি। মে মাস থেকে চিনের সঙ্গে ভারতের যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল তা জুন মাসে চরমে পৌঁছায়।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/news-round-up-2020-news-part-2/

১৫ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর খবর আমাদের সকলের জানা। পাল্টা পিপলস লিবারেশন আর্মির ৪০ জন শহীদ হন বলে জানা যায়। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়াতে বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। একাধিকবার চুসুল সীমান্তে বৈঠকে বসেছে দুই পক্ষ কিন্তু আজ অবধি সমাধানসূত্র বের করা সম্ভব হয়নি।

সমস্ত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ৫ অগাস্ট রামমন্দিরের ভুমি পুজা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এক বছরে জম্মু-কাশ্মীরের সমাধান এখন অতীত। কিন্তু নতুন বছরে রামমন্দিরের ভুমি পুজার মঞ্চ থেকে বিশ্বগুরু রবীন্দ্রনাথের কথা উল্লেখ করে নতুন ভারতের আহ্বান জানালেন তিনি। কিন্তু নতুন ভারতের উদয়তেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সঙ্গীতের বদলের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠালেন তারই দলের এক নেতা।

পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি বেমালুম বলে গেলেন রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্বভারতীতে। যদিও তা নিয়ে কম রাজনৈতিক সমালোচনা হয়নি। কিন্তু বাংলায় প্রচারে এসে ‘সোনার বাংলার’ কথা উল্লেখ করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু ‘সোনার বাংলার’ আসল কারিগর কৃষকরাই এখন আন্দোলনে শামিল হয়েছেন।

কেন্দ্রের আনা তিন কৃষক আইন প্রত্যাহার না করা অবধি আন্দোলন চলবে বলে সাফ জানিয়েছেন তাঁরা। একাধিকবার কৃষকদের মানভঞ্জনে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। উদ্যোগ নেন স্বরাশ্ত্রমন্ত্রী। তিনিও সমাধানসূত্র বের করতে পারলেন না।

প্রায় এক মাসের অধিক সময় দিল্লির সীমান্তে আন্দোলনে শামিল হয়েছে সারা দেশের কয়েক লক্ষ কৃষক। তাঁদেরকে কখনও মাওবাদী, কখনও খালিস্তানী, কখনও অতিবাম আবার কখনও টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং বলে আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আন্দোলনের পাল্টা প্রচার চালাতে হচ্ছে। কিন্তু নতুন বছরেও আন্দোলনের উত্তাপ কমেনি। তখন ছিল ইস্যু এক। এখন অন্য এক। কিন্তু সরকারের সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যবহারীক প্রয়োগ ভালোভাবে নিচ্ছে না মানুষ।

সম্পর্কিত পোস্ট