বিবেক দিবসে রাজনীতির বিবেক চেতনা হবে তো?
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। সেটা অস্বাভাবিক না হলেও মানুষের কাছে সেই ঘটনার দৃষ্টিকোণ সাধারণত তীর্যক হয়। ঠিক যেটা আজও সারাদিন ধরে ঘটে চলেছে।
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে জায়গায় জায়গায় রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের কর্মসুচী করে চলেছেন। কোথাও পদযাত্রা, কোথাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজপথে নেমেছেন বেশীরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতারা। বাংলার রীতির সঙ্গে এটাকে রাজনৈতিক বাড়বাড়ন্ত মানতে নারাজ কেউই।
সকাল থেকেই সিমলা স্ট্রিটে রাজনৈতিক নেতাদের সমাগমে থিকথিক করছে গোটা এলাকা। কখনও বিজেপি আবার কখনও তৃণমূল। আবার কখনও মুখোমুখি দুই দলের নেতা।
রাজপথে বিবেকানন্দের ছবি হাতে আবার কখনও বিবেকানন্দের শ্লোগান হাতে নিয়ে মিছিল করেছেন একাধিক নেতারা। এই পদযাত্রায় জনপ্রিয়তার বহাড় দেখাতে শুরু করেছেন নেতারা। উত্তর কলকাতা এবং দক্ষিণ কলকাতা কার্যত ভাগ হয়ে সেই কর্মকান্ডে ব্যস্ত।
কিন্তু যুব দিবসে রাজনৈতিক মিছিলে স্বামী বিবেকানন্দকে স্মরণ করে তাতে রাজনৈতিক প্রলেপ দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া তো সম্ভব নয়। এতেই স্বাধীনচেতা বাঙালির তথা ভারতীয়দের দৃষ্টিকোণ তীর্যক হয়েছে।
একদিকে যখন স্বামী বিবেকানন্দের একাধিক বাণী উল্লেখ করে সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছেন, আবার অন্য দিকে কোন দলের রাজনৈতিক ফায়দা কি সেটাই বোঝাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। এতে করে দিনের তাৎপর্য কি রইল?
এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শোনা গেল বিবেকানন্দের বাণী, বিবেকানন্দের আদর্শ এবং বিবেকানন্দের জীবনের একাধিক কর্মকান্ডের কথা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে আলোচনা করা হলেও বাংলার রাজনীতিতে মনিষীদের রাজনৈতিক আঙ্গনে নিয়ে আসা বেশ কয়েকদিন ধরে চলছেই।
কখনও বিদ্যাসাগর, কখনও রবীন্দ্রনাথ আবার এখন বিবেকানন্দ। মনে হচ্ছে বিধানসভা রাজনীতির আগে যারা দেশের মানুষের কাছে বরেণ্য, তাঁরাই বেশী করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/shovon-chaterjee-attack-tmc-and-make-rally-after-long-time/
সাধারণ মানুষের চা চর্চায় এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিস্তর। কেউ বলছেন বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যে বিপুল সংখ্যায় দলবদল হচ্ছে, তার জেরে আদর্শ বাঁচাতে রাজনৈতিক নেতাদের মনিষীদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক নেতাদের শব্দের ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। প্রকাশ্যে বাক যুদ্ধ করতে গিয়ে এমনও কিছু বক্তব্য তাঁরা করে ফেলছেন যার মাশুল দিতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যাচ্ছে। সংস্কৃতির সঙ্গে এর কোনও সাযুজ্য বজায় থাকে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
১৮৯৩ সালে ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগো ধর্মমহাসভায় স্বামী বিবেকানন্দের দীপ্তকন্ঠে বক্তৃতায় করতালি শ্রদ্ধা জানিয়েছিল দেশের সংস্কৃতিকে।তিনি বলেছিলেন, “আমি গর্ববোধ করি আমি সেই ধর্মের একজন মানুষ, যে ধর্ম বিশ্বকে সহনশীলতা শিখিয়েছে। সব ধর্মের মধ্যে সত্য রয়েছে এই বোধের জন্ম দিয়েছে।”
অথচ সময় বদলে সেই মানুষের গ্রহণযোগ্যতা এবং তাঁর নিজ ধর্মের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের কথা ভুলতে শুরু করেছে মানুষ। রাজনীতির চিন্তাধারায় নয়, বরং মানবিক চিন্তাধারায় মিশে থাকুন স্বামী বিবেকানন্দ।
রাজনৈতিক আকছার লড়াইয়ের বদলে মানুষের মুখে মুখে ফুটুক তাঁর বাণী। এই আশাটুকু করে সুশীল সমাজ।