নেতাজির জন্মদিনকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে ঘোষণায় খুশি নয় নেতাজি পরিবার
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আগামী ২৩শে জানুয়ারি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী পালিত হবে। সেই উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা দিনটিকে দেশজুড়ে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। শুধু তাই নয়, নেতাজির জন্মদিন পালন করতে বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ওই বিশেষ দিনে কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা হবে। উল্লেখ্য, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আগে নেতাজির জন্ম দিনকে দেশপ্রেম দিবস হিসাবে ঘোষণা করে জাতীয় ছুটির দাবি জানিয়েছিলেন। তবে কেন্দ্রের থেকে অবশ্য সে বিষয়ে আমল করা হয়নি।
রাজ্যের দাবি উপেক্ষা করেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, নেতাজির জন্মদিন ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। এদিকে নেতাজীর জন্ম জয়ন্তী উৎসব পালনের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই কমিটি সারাবছর নেতাজির জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কর্মসূচি পালন করবে।
কেন্দ্রের এই ঘোষণায় খুশি নয় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায় স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দেন, ‘আমরা পরাক্রম দিবস ঘোষণা করায় সন্তুষ্ট নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন এই দিনটিকে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। তা মানা হয়নি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ২৩ জানুয়ারি মিছিল করবেন। আমরা আমাদের মত পালন করব। নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার জন্য কেন্দ্র এই ঘোষণা করেছে। আমরা পরাক্রম দিবস ঘোষণা করায় সন্তুষ্ট নই’।
হেড়িয়ার জনসভা থেকে মমতাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর
এদিকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যে ‘বসু পরিবার’-কেও খুশি করতে পারে নি তা নেতাজির দুই প্রপৌত্র চন্দ্র বসু ও সুগত বসুর কথাতেই স্পষ্ট। এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও চন্দ্র কুমার বসু জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে এ দিনটিকে পালন করে আসা হচ্ছে। দেশপ্রেম দিবসের স্বীকৃতি কেন্দ্রের তরফ থেকে দিলে ভাল হত।
তিনি বলেন, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী নিজে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ‘ প্যাট্রিয়ট অফ দা প্যাট্রিয়ট ‘ হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। কয়েক মাস আগেই জাতির জনকের ১৫০ বছর জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। ফলে জাতির জনকের সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ সম্পর্কে বলতে গিয়ে চন্দ্রকুমার বসু জানিয়েছেন, নেতাজি যা বলতেন তাই করে দেখাতেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের উপর ভিত্তি করেই তাঁর আজাদ ফৌজ গড়ে উঠেছিল। বর্তমান ভারতে তার আদর্শকে কার্যকর করা মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তাঁর কথায়, যে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ তৈরি হয়েছে তা নেতাজির আদর্শের মাধ্যমে দূর করা উচিত। নেতাজি নিছক বাঙালির আইকন ছিলেন না। তিনি প্রকৃত অর্থেই বিশ্ব নেতা ছিলেন। জাপান তাঁকে হিরো অফ এশিয়া বলে অভিহিত করেছিল।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে সাহস যুগিয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আর পাঁচজন গড়পড়তা নেতার তুলনা করা উচিত নয়।
অপর প্রপৌত্র তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু বলেন, ‘ এটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। তবে নেতাজির মতো সাহসী নেতা বিশ্বে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নেতাজি চেয়েছিলেন ঐক্য ও সাম্য। তিনি সমান নাগরিকত্বে বিশ্বাস করতেন। আমার মনে হয় সেদিকটা মনে রাখা উচিত। তিনি যে শুধু যোদ্ধা ছিলেন এমনটা কিন্তু নয়’।
এদিন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দা ফরওয়ার্ড ব্লক।মঙ্গলবার ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফ থেকে কেন্দ্রের এই ঘোষণাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করা হচ্ছে। দেশপ্রেম দিবস দীর্ঘ সময় ধরে ফরওয়ার্ড ব্লক সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দাবি করে আসা হয়েছে।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রণক্ষেত্র গঙ্গারামপুর, মৃত পঞ্চায়েতের সভাপতি সহ ১
এমনকি রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেশপ্রেম দিবস উদযাপনের ঘোষণা করেছিলেন। গোটা দেশজুড়ে যাতে নেতাজি জন্মজয়ন্তীকে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় সেই জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। ফরওয়ার্ড ব্লকের দেশপ্রেম দিবস উদযাপন করার দাবি দীর্ঘদিনের।
এদিন নরেন চট্টোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে বুঝতে হলে এবং জানতে হলে মহাত্মা গান্ধীকে জানতে হবে। মহাত্মা গান্ধীর নিজে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে দেশপ্রেমিকোত্তম বলেছিলেন। এমনকি শান্তিনিকেতনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে দেশনায়ক হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন। নায়ক একজনই হতে পারে। আর তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করে নরেন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করলে বর্তমান সরকারের বিপদ। কারন এরা সাম্প্রদায়িক। নেতাজি অসাম্প্রদায়িক ছিলেন।
নরেন বাবুর কথায়, নেতাজী চাইতেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারত গড়ে উঠবে। নেতাজী বলেছিলেন কোনও কোম্পানির কাছে নয়। সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে থাকবে। জনগণের হাতে সমস্ত ক্ষমতা থাকবে। তাই অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করতে হবে। কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত নেতাজির ভাবমূর্তিকে ছোট করে দিয়েছে।