রাজীবের চলো পাল্টাই স্লোগানে উদ্বেল বারুইপুর, চড়া সুরে সংযত বাক্যবাণে ঝাঁঝালো আক্রমন মমতাকে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আজ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বারুইপুরে বিজেপিতে যোগদান করে প্রথম সভা করলেন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এতদিন ধরে দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারি, সায়ন্তন বসুদের বক্তৃতা বাংলার আমজনতা শুনেছেন।
তাই এদিনের সভায় আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসক শিবিরকে আক্রমণ করার ক্ষেত্রে কোন পন্থা অবলম্বন করবেন তিনি, সেটাই হয়তো দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।
বিজেপিতে যোগদান করেই ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বারুইপুরের মঞ্চ থেকে সরাসরি নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন তরুণ হেভিওয়েট এই নেতা।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী যখন সভাস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন তখন তাদের কালোপতাকা দেখানো হয়। মঞ্চে উঠেই কালো পতাকা নিয়ে সরাসরি শাসক শিবিরকে নিশানা করেন রাজীব।
বলেন, শাসকশিবির কালোপতাকা দেখাচ্ছে। তারমানে অন্যকোন রাজনৈতিক দলের প্রতি অসম্মান করছেন। ওদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার নেই। এরাজ্যে কোনো বিরোধীদের সভা করতে দেওয়া হয়না। এসবকে দূরে সরিয়ে আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে।
ভোটের আগে শুরু দুর্গাপুর ব্যারেজ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ, সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছেন স্থানীয়রা
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই হাওড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ছবি কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। জুতোর মালা পড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে একাধিক অপশব্দ ব্যবহার করে রাজীবের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। যা নিয়ে আজকে সভাস্থল থেকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন রাজীব।
তিনি বলেন তোমরা যত অপপ্রচার করছ, যত অপশব্দ ব্যবহার করছ, যত কুৎসা করবে, ততই আমাদের ওপর মানুষের আশীর্বাদ নেমে আসবে। যদি তোমরা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকো যে আগামী নির্বাচনে মানুষ তোমাদের ভোট দিয়ে ফিরিয়ে আনবে, তাহলে এত হতাশ কেন? তিনি বলেন কত জুতোর মালা পড়াবে পরাও। মানুষ আমাদের ফুলের মালা পড়াবে।
তিনি বারবার যুব সমাজের কর্মসংস্থান নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন অন্যথা হয়নি আজকেও। তাঁর কথায় রাজ্যে ৫ লক্ষ শূন্যস্থান রয়েছে তৃণমূলের আমলে। ওরা কোন নিয়োগ করছে না। কন্ট্র্যাক্টচুয়াল নিয়োগের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করা হচ্ছে। যা কখনোই কাম্য নয়। চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে যুবসমাজ রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর উনি শুধু কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি দলে থাকাকালীন বারবার বলতাম কেন্দ্রের সঙ্গে এত বিবাদ করে রাজ্যের উন্নতি করা, সর্বোপরি মানুষের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব। তাই এদিন মানুষকে কেন্দ্রে-রাজ্য ডবল ইঞ্জিন সরকার চালানোর জন্য আর্জি জানান রাজীব।
একই সঙ্গে রাজীব বলেন বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থানের চেহারাটাই পাল্টে যাবে। একজনকেও রাজ্যের বাইরে যেতে হবেনা কর্মসংস্থানের জন্য।
বাঙালি এবং বহিরাগত তত্ত্ব নিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করতে ছাড়েননি রাজীব। তাঁর মতে, সাম্প্রদায়িকতার বিষের থেকেও যে প্রাদেশিকতার আগুন উনি ছড়াচ্ছেন তা ভয়ঙ্কর।
রাজীবের কথায়, এ রাজ্যের বাইরে বহু জায়গায় বাঙালীরা বসবাস করেন কর্মসূত্রে বা পড়াশোনার জন্য। সেসব জায়গায় যদি বাঙালি এবং বহিরাগত তত্ত্বের প্রাদেশিকতা আগুন ছড়িয়ে যায় তাতে ছারখার হয়ে যাবে গোটা দেশ। আমাদের সংবিধান সে কথা বলে না। আমরা জানি নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান। তাহলে উনি কিসের ভেদাভেদ করতে চাইছেন?
৭ তারিখ ডুমুরজলাতেই শক্তি প্রদর্শন তৃণমূলের, পাল্টা কটাক্ষ বিজেপির
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কথায়, মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষের সঙ্গে বেইমানী করেছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের বারংবার বিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের মানুষ। উনি ভাবেন কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করলেই কেন্দ্র সব দিয়ে দেবে। ওনার উচিত ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের উন্নতিকল্পে অর্থ আদায় করা। সেই কাজে উনি সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছেন।
রাজীবের গলায় চলো পাল্টাই ডাক নতুন করে উজ্জীবিত করেছে বিজেপি নেতা কর্মীদের। বিশেষ করে তরুণ এই নেতার আহবানে সাড়া দিয়ে দলে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন যুব সমাজ। অভয় দিয়ে তিনি কর্মীদের বলেন, ওরা যতই আপনাদেরকে ধমক চমক দিক, আপনারা ভয় পাবেন না। দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে চলাটাই আমাদের লক্ষ্য। তাই জোশ হারিয়ে ফেললে চলবে না।
প্রসঙ্গত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগমন বিজেপি শিবিরের নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছে অন্তত বারুইপুরের জনসভা সে কথাই প্রমাণ করলো। আগামী দিনে রাজীবের হাত ধরে যারা নতুন করে রাজনীতিতে আসতে চাইছেন তারা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের সঙ্গে সঙ্গে নীতি-আদর্শ এবং শালীনতার সংমিশ্রণে নিজেদের রাজনৈতিক জীবন অতিবাহিত করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।