মমতা সাদামাটা, অভিষেকের বৈভবে প্রশ্ন তুলছেন দলের নেতৃত্বরা
সহেলী চক্রবর্তী
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে CBI হানা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠছে জননেতার বাসভবন, তার বৈভব-প্রতিপত্তি নিয়েও। কারণটা অবশ্য খুব স্পষ্ট। কারণ জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো।
রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের মতে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকেন কালীঘাটে টালির চালের বাড়িতে। নীল পাড় বা সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চটি। সাদামাটা সাজপোশাকেই তিনি অভ্যস্থ। নিরাপত্তাবেষ্ঠনীতে তিনি আপাদমস্তক মোড়া থাকলেও জনগণের মধ্যে মিশে যান যেকোনো সময়ে যে কোনো মুহুর্তে।
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পিছনেই রয়েছে আদিগঙ্গা। নেই কোনো বৈভব। নেই বিলাসিতা। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এত সাদামাটা, সেখানে তাঁর ভাইপোর জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলবে বটেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা, রাজনৈতিক কেরিয়ার সবটাই আবর্তিত কালীঘাটের বাড়িকে কেন্দ্র করেই। মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পরেও বদলায়নি কোনো কিছুই।
দলের বর্ষীয়ান নেতৃত্বরা বিভিন্ন সময়েই অভিযোগ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কখনো প্রশ্ন উঠেছে তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্কতা নিয়ে। কখনো বা প্রশ্ন উঠেছে সাংগঠনিক স্তরে তাঁর ক্ষমতায়ন নিয়ে।
মোদীর নেতৃত্বে বাংলার থেকে এগিয়ে ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে চলছে চালচোর সরকার- বারাসাতের জনসভা থেকে মন্তব্য বিপ্লব দেবের
দলেরই এক প্রথম সারির বর্ষীয়ান নেতার কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরসুরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বকলমে তিনি এখনই দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড। সেটা মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। তাই দলের প্রতি বিমুখ হয়ে অনেকেই দলত্যাগ করছেন।
বিভিন্ন সময়ে সৌমিত্র খাঁ, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা সহ সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী সহ সকলেই একযোগে আক্রমণ করেছেন অভিষেককে। অভিযোগ উঠেছে কয়লা পাচার, গরু পাচার, এসএসসি, টেট নিয়ে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন অভিষেক। তবে বিজেপি নেতৃত্বরা অবশ্য সরাসরি নাম না করে ভাইপো সম্বোধনেই আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জননেতার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ এবং নির্বাচনের প্রাকমুহুর্তে তাঁর বাড়িতে সিবিআই হানা জনমানসে ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও নষ্ট করবে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ক্রমশ যে লাট্টুর মত পাক খাচ্ছে রাজ্যের রাজনৈতিক স্থিতি তা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট। শাসক শিবিরের আরও এক প্রথম সারির নেতার কন্যাকে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে ইডির নোটিশও যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী সাদামাটা জীবনযাপন করলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের নেতৃত্বরা আদৌ সেই পন্থা অবলম্বন যে করেন না সেবিষয়ে অবগত স্বয়ং তিনিও। বিরোধীরা অনেকেই অবশ্য বলছেন সততার প্রতীক মুখ্যমন্ত্রী বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে দল তা বুঝেও ভাঙন রুখতে ব্যর্থ তিনি। তাদের বিস্ফোরক অভিযোগ হয়ত তিনি তাঁর ব্যর্থতা বুঝেই দলকে সমর্পন করে দিয়েছেন ভাইপো এবং পিকের হাতে!
তবে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর মিলে যাবে সব প্রশ্নের।