২১-র পরিবর্তনের ডাকে বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ রাজীব, মত রাজনৈতিক মহলের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ৩০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিতে অমিত শাহের বাসভবনে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩১ জানুয়ারী ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন হাওড়ার একঝাঁক তৃণমূল নেতা। এরপরের ঘটনা ক্রমশ ঘটমান বর্তমান।
বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলকে উপড়ে ফেলে দিতে রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। গতবার হলদিয়াতে জনসভার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিঠ চাপড়ে প্রশংসা করেছিলেন রাজীবের।
আর বঙ্গ বিজেপির পরিবর্তন যাত্রায় নতুন করে গতি এসেছে রাজীব-শুভেন্দুর আগমনে, একথা স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর ক্রোনোলজি এক হলেও তাদের রাজনৈতিক ঘরানা সম্পূর্ণ আলাদা।
তাই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও একটি অংশের জনসমর্থন তার সঙ্গেই রয়েছে। যেটা শুভেন্দুর ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কম রয়েছে বলেই মত তাদের। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বয়সে তরুণ হলেও তাঁর সংগঠনিক দক্ষতা তারিফ যোগ্য। সেই সঙ্গে তিনি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী। যতই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করুন না কেন, তা ধোপে টিকবে না। কারণ রাজীব যেভাবে প্রমাণ সহ পাল্টা জবাব দিচ্ছেন, যদি তিনি তা প্রকাশ্যে আনেন, সেক্ষেত্রে ব্যাকফুটে যাবে শাসক শিবির।
“আমরা যখন তৃণমূলের হয়ে ভিন রাজ্যে প্রচার যেতাম, তখন বহিরাগত ছিলাম না?” – মমতাকে প্রশ্ন রাজীবের
এই অল্প কয়েক দিনেই বিজেপির রাজনৈতিক ঘরানার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আচমকা তাঁকে দেখলে মনেই হবে না তিনি তৃণমূল থেকে মাসখানেক আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে বড় ইউএসপি তিনি রাজনৈতিক ময়দানে আক্রমণ করেন রাজনীতির ওপর ভর করে। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের ওপর ভর করে। জনগনের দাবী দাওয়ার উপর নির্ভর করে। কখনোই রাজনীতির ময়দানে কোন ব্যক্তি আক্রমণ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় করেননি।
তবে দল বদলের পর কয়েকটি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আক্রমণাত্মক দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে সেটা কিছুটা দলগত সিদ্ধান্ত এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পাল্টা জবাবেই। তিনি বরাবরই রাজনীতির ময়দানে ছাত্রযুবদের অধিকার, তাদের প্রাপ্য দাবিকেই মান্যতা দিয়ে এসেছেন। অন্যথা হয়নি দলবদলের পরেও।
তিনি ছুটে গিয়েছেন পার্শ্ব শিক্ষকদের অনশন মঞ্চে। ছাত্র-যুব থেকে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে পা মিলিয়েছেন কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলেও। আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পরিবর্তনের পরিবর্তন চেয়ে ছুটে চলেছেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ভারতীয় জনতা পার্টি সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সেখানে মান্যতা প্রায় বরাবরই যুবদের চিন্তাভাবনা। তাদের মানসিকতা। তাই এক্ষেত্রে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব অপরিহার্য। একথা স্বীকার করে নিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির প্রথম সারির অনেক নেতৃত্বই। বিজেপিতে গিয়ে মাত্র কয়েকদিনে তিনি যে সম্মান পেয়েছে তাতে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন রাজীব নিজেও।
“আপনি আসুন আমার হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিন, তারপর দেখুন জনগণ কী করে”- কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওপেন চ্যালেঞ্জ রাজীবের
ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে নির্বাচনের নির্ঘন্ট। ৮ দফা নির্বাচন নিয়ে বাকযুদ্ধ জারি রয়েছে যুযুধান দুই শিবিরে। এই বিষয়ে মমতাকে তাঁর পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজীব। যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভুলে গেলে চলবে না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একজন রাজনীতিবিদ, যিনি তৃণমূলে থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে একটাও আঙুল তুলতে পারেননি বিরোধীরা। ২০২১ সালে পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হলে বড় কোন দায়িত্ব পেতে পারেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত তরুণ নেতা।
তবে এবিষয়ে রাজীব নিজে কোন কিছুই জানাননি। তাঁর স্পষ্ট কথা, যতদিন লক্ষপূরণ না হচ্ছে তিনি বিশ্রাম নেবেন না। ২মে গোটা বাংলা জুড়ে পদ্মের তুফান ঝড় বইবে বলেও আশাবাদী তিনি। বাকীটা নাহয় সময় বলবে।