রাজনৈতিক দ্বিচারিতায় দিশেহারা আমজনতা, খোঁজ চলছে স্থায়ী সদস্যদের
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
‘সাজন চলে শাশুরাল’ সিনেমার বিখ্যাত গানের একটা লাইন আজ মনে পরে যাচ্ছে। “তুম তো ধোঁকেবাজ হো, ওয়াদা কর কে ভুল যাতে হো”। ভোটের মুখে যে হাওয়া বদল হচ্ছে। এটা বলা খুব স্বাভাবিক। শুধুমাত্র হাওয়া বদল বলা ভুল হবে। সরাসরি দলবদল। একদিনে চার বিধায়ক তৃণমূল ছেড়ে চলে গেলেন গেরুয়া শিবিরে।
নামগুলি ভীষণ উল্লেখযোগ্য। সাতগাছিয়ার বিধায়ক সোনালী গুহ। ইনি শুধুমাত্র ডেপুটি স্পিকার ছিলেন তা নয়। ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী। নিজেকে সরকার বলে দাবী করে পুলিশকে হুমকি দিয়েছিলেন ডাকাবুকো নেত্রী। অনেকে মনে করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে তাঁর মাথার ওপর। তাই এতো দাপট।
কিন্তু ছবিটা বদলে গেল গত শুক্রবার। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর কান্নায় ফেটে পড়লেন। বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুমতি হোক। ঠিক করেছিলেন, সম্মান পাচ্ছেন না যেখানে সেখানে থাকবেন না। তবুও অপেক্ষা করেছিলেন, আসেনি মমতাদির ফোন। এখন তিনি বিজেপির সদস্য।
রাজ্য রাজনীতিতে যারা হাওয়া বুঝতে পারেন, তাঁরা দলবদল করেন। তাঁদের মধ্যে কী সোনালী গুহ পড়েন? সাতগাছিয়ার বিধায়ক অবশ্য বলেছেন তাঁর অনেক কথাই মনে পড়ছে কিন্তু মনে আর করতে চান না। কারণ, দল তাঁকে বাদ দিয়েছে শরীর খারাপের অজুহাতে।
অন্যদিকে ৮০ এর উর্দ্ধ তালিকায় যারা বাদ পড়লেন তাঁদের কিছু জন বিজেপিতে যোগ দিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং শিবপুরের বিধায়ক জটু লাহিড়ী। উল্লেখযোগ্যভাবে, বেশ কিছু দিন ধরেই দলের কার্যকলাপ নিয়ে দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন দুই বিধায়ক।
তৃণমূলের টিকিটে এতদিন ধরে বিধায়ক পদে থাকার পরেও দুই বর্ষীয়ান বিধায়কের এই সিদ্ধান্তকে দ্বিচারিতা বলে মনে করছেন অনেকেই। ভোটের মুখে এই দলবদল আসলে টিকিট পাওয়ার লোভে। এমনটাও বলছেন অনেকে।
আরও পড়ুনঃ West Bengal Assembly Election- বিজেপিতে তণুশ্রী, সোনালী, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের, খেলা হবে-আমি স্ট্রাইকার পদ্ম হাতে মন্তব্য দিপেন্দুর
আবার এমনটাও কথা উঠছে, লালকৃষ্ণ আদবানীর মতো এই দুই বিধায়কের অবস্থা হবে না তো? রাজনীতির ‘ধোঁকাবাজি’ বোঝা খুব কঠিন।
এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক এবং ফুটবলার দিপ্যেন্দু বিশ্বাস। কারণ, তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী এতদিন দলের হয়ে কাজ করেছেন। এখন ভোটের সময় দল তাঁকেই টিকিট দিল না। আবার সোমবার বিজেপিতে যোগদান করার আগে বললেন রাতে জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক ছিল। কিন্তু তার আগেই যোগদান করলেন।
এটা তো একধরনের দ্বিচারিতা। যদিও এটাকে অনেকটা ‘টিট ফর ট্যাট’ আকারে দেখছেন অনেকেই।
বিরল ঘটনা হল সরলা মুর্মুকে নিয়ে। মালদহের হবিবপুরে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা সত্বেও তিনি চলে গেলেন বিজেপিতে। এটাও সম্ভব! প্রার্থী বদল করে তৃণমূল লিখল সরলা মুর্মু শারীরিকভাবে অসুস্থ। অথচ মালদহ থেকে গটগট করে হেস্টিংস অবধি এসে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিলেন।
যদিও সারা দেশে এই ঘটনা বিরল কিছু নয়। যেভাবে মিনিটে মিনিটে দলবদল চলছে তাতে নির্বাচনের আগে মানুষ খুঁজছে স্থায়ী সদস্যদের। মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না মিটিয়ে ক্ষণেক্ষণে জার্সি বদল। ‘ধোঁকা’ দেওয়া নয়তো কী?