পোস্টমর্টেম সিঙ্গুরঃ পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে জনগণের দাবি শিল্প চাই, চাই কর্মসংস্থান
নয়ন রায়
একুশে বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের পরিবর্তন ডাক দিয়েছে বিজেপি। ফের তারা ভর করেছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের উপরে। শাসক ও বিরোধী তরজার মাঝেই সিঙ্গুর নিয়ে একটা আস্ত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট করতে হবে এটা ভাবলেই খারাপ লাগে। উপায় নেই। তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম সিঙ্গুরের উদ্দেশ্যে।
জাতীয় সড়কের বুক চিড়ে আমরা যখন পৌঁছলাম সিঙ্গুরের ১১ নম্বর রেলগেট তখন দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করেছিলেন নিহত তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিক। আমরা বললাম কলকাতা থেকে এসেছ।একটু কথা আছে।
জিজ্ঞাসা করলেন, অনেক কথা বলেছি আর কি বলবো? বাধ্য করলাম ও জোর করলাম। প্রশ্ন ছিল সিঙ্গুরে প্রকল্প না হওয়া সত্যি কি ভুল ছিল? অকপটে উত্তর মনোরঞ্জনের, সিঙ্গুরের প্রকল্প না হলে হয়তো আমার মেয়েটা মারা যেত না। তবে মমতাদি আর আসেন না। তবুও আমরা তাঁর পাশে রয়েছি।
প্রশ্ন ছিল সিঙ্গুরে শিল্প হলে অনেক মানুষের চাকরি তো হতো। এপ্রশ্নের জবাব মনোরঞ্জনের জানা নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, সিঙ্গুরের আকাশে বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে তা হল রবীন্দ্রনাথ বনাম বেচারাম মান্নার লড়াই।
নন্দীগ্রামে ভূমি আন্দোলনে জড়িত অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে কেস নেই কেন? প্রশ্ন তৃণমূল সুপ্রিমোর
সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাস্টারমশাই রাজনৈতিক জমি করে দিয়েছিলেন। তার বিনিময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফিরিয়ে দেননি দু-দুবার তাঁকে বিধায়ক করেছেন। বয়স প্রায় ৯০। মমতার কাছে এবারও টিকিটের দাবি দাবি করেছিলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিকিট দেননি। তাই বাধ্য হয়ে গেরুয়া শিবিরের নাম লিখছেন।
তাই শিক্ষক ও ছাত্রের লড়াই কতটা জমে ওঠে সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে সবাই। গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা চলে গেলাম সিঙ্গুরের জমিতে যেখানে প্রকল্প তৈরি কথা ছিল। আজ কোন প্রকল্প নেই। শুধু পড়ে আছে জমি। যে জমিতে চাষ যোগ্য হওয়ার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই।
এই জমি যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিমকোর্টে মামলায় জিতেছিলেন। কিন্তু জাতীয় সড়কের বুক চিড়ে যখন সিঙ্গুরে প্রবেশ করেছিলাম একজন জনগন হিসেবে খারাপ লাগছিল। রাজনীতি বড় বালাই। প্রকল্প হয়নি চলে গেছে গুজরাটে। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে হুগলি থেকে বিজেপির আসন বার করে নেয়।
এবারের নির্বাচনের শিল্প করতে চাই একথা বর্তমান বিজেপি ঘোষণা করেছে। অথচ এক সময়ে জমি আন্দোলনের পক্ষে মমতার পাশে সেদিনের বিজেপি দাঁড়িয়েছিল। আজ অবস্থান বদল কেন?
তাদের যুক্তি রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। কিন্তু শিল্পের পরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তন না করা মানে কর্মসংস্থানের সঙ্গে অন্যায় করা। কিন্তু সিঙ্গুরের মাটিতে গিয়ে অবাক হয়ে ভাবছিলাম যদি শিল্পটা হতো তাহলে কর্মসংস্থান তৈরি হতো। যারা করোনাকালে রাজ্যের বাইরে কাজে গিয়েছিল তারা হয়ত যেতনা। তারা সিঙ্গুরের এই কারখানাতে কাজ পেতেন।
ইতিহাসের পাতায় অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। বাংলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গেলে প্রয়োজন শিল্প। মানুষ প্রশ্ন করবে, শিল্প আদৌ হবে কিনা? কর্মসংস্থান তৈরি হবে কিনা? কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে কিনা? প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হবে কিনা? রাজ্যে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হবে কিনা?
এই সমস্ত তথ্য নিয়ে বাংলার জনগণ শাসক ও বিরোধী শিবিরকে প্রশ্ন করবে। তাই যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন রাগ করলে হবে না। এটাই বাস্তব। সমাজনীতি, অর্থনীতি ও শিল্পনীতির পরিবর্তন করতেই হবে। তবেই জনগণের আক্ষেপের আগুন ঠান্ডা হবে।