ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র ফাঁস করেছেন মমতা, কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবি করলেন সুজন
দ্য কোয়ারি ওয়েবেডেস্কঃ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম নিয়ে যা বলেছিলেন তাতে ষড়যন্ত্রের গভীরতা প্রমাণ হল বলে মন্তব্য সুজন চক্রবর্তী । বললেন, “বারবার বলা সত্ত্বেও বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হওয়ার যে তত্ত্ব দেওয়া হয়েছিল তা মানা হয়নি । বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে আদতে বাংলাকে বিপদে ফেলেছে তৃণমূল । তার দোসর হয়েছে বিজেপি ৷”
রবিবার নন্দীগ্রামে নিজের প্রচার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে বলেছেন, বাপ-ব্যাটার অনুমতি ছাড়া পুলিশ ওখানে যেত না । বুঝতে বাকি থাকে না তিনি অধিকারী পরিবারের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন ।
মমতার সেই কথার রেশ ধরে যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী বলছেন, আদতে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র ফাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করলেন চটি পরা পুলিশের নামে আসলে অধিকারীরা ষড়যন্ত্র করেছেন । অধিকারীরা বলছেন তাঁরা যাবতীয় কাজ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় করেছিলেন । অথচ তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, মানুষ না চাইলে এক ইঞ্চি জমি নেব না । তারপরেও তৃণমূল কংগ্রেস অবরুদ্ধ করে অশান্তি করে, সন্ত্রাসবাদীদের ডেকে এনে বিজেপি তৃণমূল যৌথভাবে শুধু নন্দীগ্রামকে অশান্ত করেছেন তাই নয়, হিংসা চালিয়ে মানুষ খুন করে দুইয়ে মিলে কার্যত বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে । নিজেদের খেউড়ের মধ্যে স্পষ্ট হল সবকিছু ।”
West Bengal Election: ভোটের আগে নন্দীগ্রামে বোমাবাজি, অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে
তিনি আরও বলেন, “সিঙ্গুরে তাপসী মালিকের হত্যাকাণ্ড, খুন, লাশ নিয়ে এত যে গল্প চলল, কে দায়ী ? তাপসী মালিকের বাবা বলছেন সিপিএম নয়, এর দায় তৃণমূলের । তখন দরকার ছিল তাপসী মালিকের মত কারও একজনের লাশ । যা দেখিয়ে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র তৃণমূল করতে চেয়েছিল ৷”
কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন , “সিঙ্গুরে ষড়যন্ত্র হয়েছে, নন্দীগ্রামে ষড়যন্ত্র হয়েছে । সিবিআই যে তদন্ত করছিল তারপর সরকার চুপ করে গেল কেন । সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে কমিশন গঠন করেছিল । বলেছিল বুদ্ধবাবুর দাত নখ রক্তাক্ত । রক্ত ঝড়ছে । এখন প্রশ্ন হল কমিশনের রিপোর্ট কোথায় ? ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি । প্রকাশ করলে স্পষ্ট হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী… মোদ্দা কথা তৃণমূল-বিজেপির ষড়যন্ত্র ফাস হয়ে যাবে ।”
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জেল খাটানোর কথা যে নিছকই ভিত্তিহীন তা প্রমাণিত বলে মনে করছেন সুজন চক্রবর্তী । বরং ভবিষ্যতে আরও একবার তদন্ত করে মমতাকে জেল খাটানোর পক্ষে জোরালো দাবি করলেন বাম নেতা ।
শুধু তাই নয়, অধিকারীদের জেলে পাঠানোর পক্ষেও সরব তিনি । তাঁর দাবি, পুলিশকে ব্যবহার করেছিল তৃণমূল । তারপর সরকার গঠন করে সেইসব সাহায্যকারী পুলিশদের পুরস্কৃত করা হয়েছে কিংবা নিজেদের দলে নেওয়া হয়েছে ।
সুজনবাবুর মতে, “আসলে পুরোটাই ছিল বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র । যখন বুদ্ধবাবু এবং তৎকালীন সরকার বাংলার মানুষের চোখে চোখ রেখে ভরসা করতে চেয়েছেন । বাংলার যুবকের কাজ নিজের রাজ্যে হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন । তার ব্যবস্থা করেছিলেন । যুবকদের স্বপ্ন ধ্বংস করা, বাংলার ধ্বংস করতে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর চক্রান্ত । তাই দাবি করছি কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারীদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক । তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে । ওঁদের ক্ষমা চাইতে হবে ।
সেদিনের ঘটনার সমালোচনা করে পরিবর্তন চেয়ে পথে নামা বুদ্ধিজীবীদের বিবেকের প্রশ্নের সামনে দাড়াতে বলেছেন যাদবপুরের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী । তাঁর মতে, সেদিনের বুদ্ধিজীবীরা মমতার ষড়যন্ত্র এবং অপদার্থতার শরিক ।
এখানেই শেষ নয়, সুজন চক্রবর্তী র কটাক্ষ, “ফল বেরোলে বোঝা যাবে দুটি ফুল শুকিয়ে গিয়েছে । তা লোক বুঝতে পারবে । জোড়াফুল এবং পদ্মফুলের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই । বিজেপির প্রার্থী তালিকায় 158 জন রয়েছেন যাঁদের গায়ে টাটকা তৃণমূলের গন্ধ । তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এমন 48 জন রয়েছেন যাঁরা আসলে বিজেপির মনোনীত । দু’জনের ঘরে দু’জনের প্রতিনিধি রয়েছে । বিজেপি তৃণমূল ভাগাভাগি করে কি লাভ হচ্ছে ? এদের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি শুধুমাত্র আমরা । এই দুই দল একসঙ্গে করে বা আলাদাভাবেও অর্ধেকের চেয়ে কম সংখ্যক আসন পাবে । মানুষ তার গ্যারান্টি দিচ্ছে ।”