ভাসমান ভোটে বদলাতে পারে শিলিগুড়ির অঙ্ক?
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
শহরে মিঠুন চক্রবর্তী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অমিত শাহ। এরই মাঝে প্রচারে ঝড় তুলছেন শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপি(আই)এম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। পাড়া-এলাকা বলা ভুল হবে একেবারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছেন বর্ষীয়ান বাম নেতা।
‘খেলা হবে’ শ্লোগানকে কেন্দ্র করে বিতর্ক রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু প্রচারের ফাঁকে কখনও ব্যাট হাতে আবারও কখনও ফুটবলে শট মেরে ৮ থেকে ৮০ সকলের মন জয়ের চেষ্টা করছেন প্রবীন রাজনীতিবীদ। একেবারে নিজের ফর্মুলা। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, শিলিগুড়ি পুরসভার দায়িত্বে ছিলেন। অপরিকল্পিত শিলিগুড়িকে পরিকল্পিত শিলিগুড়ি রুপায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন ৯১ সাল থেকেই। অনেকটা হয়েছে আবার কিছুটা বাকিও রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কয়লাকাণ্ডে আরও এক পুলিশ আধিকারিককে তলব সিবিআইয়ের
শিলিগুড়ির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল যানজট। বাম আমলে তৈরি বেশকিছু রাস্তা উল্লেখযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুললেও। তৃণমূলের শাসনের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে দুষছেন অশোকবাবু। জমির পাট্টা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বিতর্ক দেখা যায়। সেবিষয়ে অশোকবাবু জানিয়েছেন, কেন্দ্রের কাছে এবিষয়ে তিনি নিজে বার্তা দিলেও, বর্তমান রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের গাফিলতির কারণে অনেকেই পাট্টা পাননি। এই দাবীতে লাগাতার আন্দোলন জারি রয়েছে। দাবী, রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার এই মানুষগুলির জন্য আইন তৈরি করুন যাতে রেলের জমি বসবাসকারী মানুষরা পাট্টা পান।
অশোক ভট্টাচার্যের প্রচারে শামিল তরুণ মুখদের সংখ্যা বেশ নজরে আসছে। কিন্তু তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী শঙ্কর ঘোষ। দীর্ঘ সময় ধরে বাম ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর এখন বিজেপির প্রার্থী। আপাতত আদর্শ ভুল গায়ে গেরুয়া পতাকা জড়িয়ে প্রচারে জোর দিয়েছেন শঙ্কর ঘোষ। এখান থেকে অধ্যাপক এবং প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
তিন জনের মাঝে পাল্লাভারি অশোকবাবুর। স্বয়ং তাঁর হয়ে ভোটের আবেদন জানিয়েছেন গতবার তাঁরই প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া। এ নজির খুব কমই দেখা যায়। অশোকবাবু মনে করেন শিলিগুড়ির মানুষের কাছ থেকে যা পেয়েছি চিরজীবন মনে থাকবে।
এবারের নির্বাচনে অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে লড়াই করছেন শিলিগুড়ি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কো-অর্ডিনেটর নান্টু পাল। তৃণমূল অথবা বিজেপি নয় তাঁর মূল প্রতিপক্ষ অশোক ভট্টাচার্য। তা স্পষ্ট করেছেন নান্টুবাবু।
শিলিগুড়ির ভোট অঙ্ক বদলাতে পারে এই বিধানসভার অন্তর্গত ১৭১ টি বস্তি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ওই এলাকায় ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ১৭ হাজারের কাছাকাছি। এই ভোটের বেশ কিছুটা নিজেদের দখলে নিতে পারলে বিধানসভা দখল হতে পারে। শিলিগুড়ির পৌরনিগম, মহকুমা পর্ষদ এবং বাম আমলে তৈরি বস্তি উন্নয়ন সমিতি এখনও বামেদের দখলেই রয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে দার্জিলিং লোকসভাতে একাধিকবার পরিবর্তন এলেও শিলিগুড়িতে বামেদের দুর্গ অটুট রেখেছেন অশোক ভট্টাচার্য। কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে যে পালাবদল চলছে তাতে আবার গা ভাসাবেন না তো শিলিগুড়ির মানুষ? ভাসমান ভোটারদের প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে সব প্রার্থীরই।