#BUDGET_2020: “আচ্ছে দিন” -এর স্বপ্ন দেখছে ভারত
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বাজেট পেশ করবে মোদি সরকার। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে মোদি ২.০ সরকার কোনও প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে আর্থিক পরিকাঠামোর দিকে নজর দেয় কি না সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। কারণ এর আগে যখন কোনও বাজেট পেশ হয়েছে সেখানে আর্থিক পরিকাঠামোর ওপর নজর দেওয়া হয়েছে। যদিও ২০১৪ এর পর থেকে সেই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। কারণ সরকার পক্ষের অনেকেই মনে করেন বাজেট পেশের অর্থ হল দেশের আয় ব্যয়ের হিসেব তুলে ধরা।
শুধুমাত্র বাজেটের দিন নয়, বাজেটের আগে পরেও বিভিন্ন আর্থিক ঘোষণার কথা উল্লেখ করেছে এই সরকার। যার মধ্যে ডিমোনেটাইজেশন অন্যতম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কর্পোরেট সেক্টরের জন্য বড়সড় কর কমানোর কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু ম্যাজিশিয়নের টুপি থেকে পায়রা বের হয়ে অর্থনীতির বাজারে শান্তির বার্তা দিতে পারেনি। তার পরিবর্তে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের কোয়ার্টার অনুযায়ী দেশের জিডিপি গিয়ে পৌঁছেছে শতকরা ৪.৫ শতাংশে।
যদিও চলতি আর্থিক বর্ষের সরকারের বাজেট পেশের ওপর আলাদা করে নজর রাখতে চাইছে অর্থনৈতিক মহল। কারণ কিছুদিন আগেই দেশের বেশ কিছু শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে শিল্পপতিদের নির্দ্বিধায় লগ্নী করার কথা জানিয়েছিলেন জানিয়েছিলেন তিনি। তাই চলতি বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে ম্যাজিশিয়নের ভূমিকায় দেখতে চায় গোটা দেশ। কিন্তু এরই মাঝে নীতি আয়োগের বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতি বিরোধীদের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে।
সরকারী সূত্রের খবর, দীর্ঘ মেয়াদি লাভের কথা মাথায় রেখেই কোনও বড়সড় ঘোষণা করতে পারে সরকার। তার একমাত্র লক্ষ্য হল শিল্প সংস্থানগুলিকে আরও বেশী করে বিনিয়োগমুখী করা। কিন্তু সমস্যা হল কেন্দ্রীয় কর্পোরেট কর কমলেও লগ্নী বাড়েনি। কারণ এই মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো যা পরিস্থিতি তাতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন না অনেকেই। এবিষয়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা না আসা অবধি লগ্নী করতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই।
চলতি বছরের বাজেটে মধ্যবিত্তের পকেটের কথা মাথায় রেখে পার্সোনাল ইনকাম ট্যাক্স কমানোর কথা ঘোষণা সরকার করতে পারে। এমনটাই সূত্রের খবর। যদিও আগের তুলনায় কর অধিগ্রহণ কমে যাওয়ায় এই ইচ্ছাপূরণের দিকে সরকার হাঁটবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে বছরে ৫ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা যাদের আয় রয়েছে তাঁদের কাছ থেকে কর কমিয়ে বরং তাঁদের হাতে টাকার পরিমাণ বাড়ালেও একটু রেহাই মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক কোষাগার হালি হতে চলেছে। তাই সরকার এখন প্রথম সারির শিল্পপতিদের মাধ্যমে বিনিয়োগ করিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চাইছে। কিন্তু ভারতবর্ষের মত কৃষি প্রধান দেশের বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ কারা পাবেন? কারণ দেশের সমস্ত কৃষকের হাতে এখনও অবধি প্রধানমন্ত্রী কৃষক যোজনার টাকা গিয়ে পৌঁছায়নি। তাই কৃষকের আমদানি কিভাবে বাড়বে সেদিকে নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যেসমস্ত ভূমিহীন চাষি রয়েছে তাঁদের জন্য আলাদ করে কোনও প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে পারে সরকার।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দেশের রাজকোষ এবং সরকারের আর্থিক নীতির ওপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া দরকার। দেশের আর্থিক পরিকাঠামোকে চাঙ্গা করতে যুবসমাজের কর্মসংস্থান ভীষণভাবে জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। এই বাজেটে কোনও বৃহত্তর ভারতের লক্ষ্যে নয়, বরং দেশের বুনিয়াদী স্তরে বিনিয়োগের মাধ্যমে আর্থিক পরিকাঠামোর পরিবর্তন হওয়া সম্ভব। তাই প্রতিশ্রুতি নয় বাজেটে মূল প্রাধান্য পাক চাকরী, এমনটাই আশা করছে দেশের যুব সমাজ।
ফাঁকা কলসিতে আওয়াজ দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক হাল ফেরানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তবে কি সরকারের ভরসা বিশ্ব ব্যাঙ্ক? নাকি রিজার্ভ ব্যঙ্ক অব ইন্ডিয়া? নতুন খরচের ভরপাই সরকার করবে কিভাবে? দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা কতটা সফল করতে পারে মোদি ২.০ কে? শনিবার বাজেটের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।