ইগোর লড়াই ডোমজুড়ে, ব্যাক্তিগত ক্যারিশ্মায় এগিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
সহেলী চক্রবর্তী
কুর্শি দখলের লড়াইয়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। নন্দীগ্রামের পাশাপাশি এবারে বিধানসভা নির্বাচনের নজর থাকবে ডোমজুড়ের দিকেও। কারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন দাপুটে নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিশেষ বিমানে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের বাসভবনে বিজেপির দলীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সেই দৃশ্যের থাকি সাক্ষী থেকেছিল গোটা রাজ্যের মানুষ।
ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। যদিও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগতভাবে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে কোনদিনই থাকতে চাননি। তবে বরাবরই তিনি আলোচনার বিষয় হিসেবে উঠে এসেছেন তাঁর কাজ এবং ব্যক্তিগত ক্যারিশমায়।
ডোমজুড় থেকে এবারে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিপক্ষ কল্যাণ ঘোষ। যাকে একদা তৃণমূলে থাকাকালীন নির্দল প্রার্থী দিয়ে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল রাজীবের বিরুদ্ধে। তারপর জলগড়িয়ে গিয়েছে বহুদূর।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতীকে সবথেকে বেশি ভোটে জিতেছিলেন ডোমজুড় থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রশ্ন এবারের নির্বাচনের ফলাফল কি হবে? কার হাতে থাকবে ডোমজুড়ের চাবিকাঠি?
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গেলেও তা নিয়ে বিশেষ হইচই দেখা যায়নি ডোমজুড়ের মানুষের মধ্যে। নিজের ব্যাক্তিগত ক্যারিশমায় ডোমজুড়বাসীর কাছে ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছিলেন রাজীব।
দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনো সমস্যা সমাধানের মসীহা। এবারের নির্বাচনে ডোমজুড়ের বিভিন্ন প্রান্ত পায়ে হেঁটে চষে বেড়িয়েছেন রাজীব। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জিতে ফিরলে ডোমজুড়বাসীর জন্য অসম্পূর্ণ সমস্ত কাজ করবেন।
ডোমজুড়ের প্রচারে যেভাবে বারবার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে থেকেছেন রাজীব, সেদিক থেকে কল্যাণ ঘোষকে দেখা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই জানিয়েছেন অবশ্য, কল্যাণ ঘোষ ,রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কোনো ফ্যাক্টর না।
প্রেস্টিজ ফাইট নন্দীগ্রাম, গুরু-শিষ্য লড়াইয়ে জয়ী হবেন কে?
একটি বা দুটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে ডোমজুড়ে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সংখ্যালঘু ভোটের পাশাপাশি ডোমজুড়ে রয়েছে একটি বৃহৎ অংশের হিন্দুভোট। হিন্দুভোটের উপর ভর করেই মূলত পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা কায়েম করতে চায় বিজেপি।
তবে তাদের মতে, ডোমজুড়ের বিস্তীর্ণ অংশের সংখ্যালঘু ভোটাররা কোনো রাজনৈতিক দলকে ভোট দেননি। দিয়েছেন ব্যক্তি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা অচিরেই বিজেপির ভোট বাক্স শক্ত করবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেও কুকথার রাজনীতিতে একবারের জন্যেও উঠে আসেনি তাঁর নাম। রাজনীতির ময়দানে ব্যক্তিগত আক্রমণ তাঁর না পসন্দ। তা সত্বেও বেশ কয়েকবার বিজেপির বিভিন্ন জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
তার কারণ অবশ্য রাজীব বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি তুলেছিলেন সেগুলি মিথ্যা। প্রতিবাদ জানাতে এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় ছিল না।
তৃণমূলের থাকাকালীন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কখনোই তার কাজকর্ম নিয়ে আঙ্গুল তুলতে পারেননি কোন বিরোধীরাই। স্বল্পভাষী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর বিশ্বাস করে এসেছেন কাজই মানুষের পরিচয় নির্ণয় করে। বাস্তবে হয়েছেও তাই।
ডোমজুড় বাসীর কাছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কারোর ঘরের ছেলে, কারোর দাদা, আবার কারোর ভাই। এককথায় বলা যেতে পারে যুব সমাজের আইকন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর হাত ধরেই যুব সমাজ নতুন করে রাজনীতির প্রতি আকর্ষিত হচ্ছেন। একটি বৃহৎ অংশের মানুষ চাইছেন তৃতীয়বারের জন্য ডোমজুড়ে বিধায়ক হন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাদের আশা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডোমজুড়ের মানুষের জন্য বিগত দিনে যেভাবে কাজ করেছেন আগামী দিনেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। নিজের রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে হয়তো নতুন প্রজন্মকে চলে যেতে হবে না অন্নের সংস্থানে।
তবে সবটাই নির্ভর করছে আগামীকাল গণনার উপর। নন্দীগ্রাম যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট হয়। তাহলে নিঃসন্দেহে ডোমজুড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ইগোর লড়াই।
নন্দীগ্রাম থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তৃণমূল সুপ্রিমো নিজে। আর ডোমজুড় থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন কল্যাণ ঘোষ। তবে এখনও পর্যন্ত পাল্লা ভারী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। শেষ হাসি কে হাসবেন? শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।