জয় বাংলা নাকি জয় শ্রীরাম, কোন স্লোগানে মুকুল?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ তিনি চেয়েছিলেন বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য হতে। নির্ধারণ করতে চেয়েছেন বঙ্গযুদ্ধে বিজেপির প্রত্যেকটি পদক্ষেপ। তবে কোনোটাই পথে নেমে নয়। সবটাই ঠান্ডা ঘরে বসে পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই চিন্তাভাবনায় ছেদ পড়ে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, হয়ত বঙ্গযুদ্ধে যারা বিজেপির রোডম্যাপ তৈরী করছিলেন তাঁরা চাননি মুকুল রায় আবারও যুদ্ধ জয়ের অন্যতম কারিগর হয়ে উঠুন। বা নির্বাচনের আগে প্রবল প্রার্থী সঙ্কট তৈরী হয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টির অন্দরে। তাই কে হবে সংশ্লিষ্ট বিধানসভার সেনাপতি তা নিয়ে তৈরী হয় দ্বন্দ্ব।

২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে মুকুল রায়কে প্রার্থী করে বিজেপি। প্রতিপক্ষ তৃণমূলের তারকা প্রার্থী কৌশানি। তবে শীর্ষনেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে তিনি যে খুশি হননি, সেটা প্রকাশ না করলেও প্রত্যেকটি কার্যকলাপে বুঝিয়ে দিয়েছেন বারবার।

তাই বিধানসভার নির্বাচনে একবারের জন্যও তঁকে পথে নেমে দেখা যায়নি কোনো প্রচার করতে। করেননি কোন জনসভা। বা প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকে একবারের জন্যেও কোন সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হতে দেখা যায়নি ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়কে।

তারপর থেকেই ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করে রহস্য। কি চাইছেন মুকুল রায়? স্পষ্ট হয়নি সেটাও। আপাতভাবে মনে করা হয়েছিল হয়তো তিনি জানতেন কৃষ্ণনগর উত্তর সিট টি তৃণমূলের দখলে থাকবে। তাই পথে নেমে ঘাম ঝরিয়ে একবারের জন্য কোন কসরত করেননি।

তবে ফলাফল ঘোষণা হতেই ঘুচে গিয়েছে চাপানউতোর। কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে জয়ী হয়েছেন মুকুল রায়। তবে তার পরেও কার্যত নিরব থেকে গিয়েছেন তিনি।

2 মেয় ফলাফল ঘোষণা হতে দেখা যায় প্রশান্ত কিশোরের করা টুইট অনুযায়ী দুই অঙ্কের সংখ্যা পেরোতে পারেনি বিজেপি। অন্যদিকে দু’শোর বেশি সিট নিয়ে রমরমিয়ে ক্ষমতায় চলে এল তৃণমূল। তারপরে যখন বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া কেন এই ফলাফল? সেখানেও নীরব থেকেছেন মুকুল রায়।

ক্রমশ ঘনীভূত হতে শুরু করে রহস্য। তাহলে কি এবার বিজেপিতে মোহভঙ্গ হয়েছে মুকুল রায়ের? সোশ্যাল মিডিয়া সহ একাধিক অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, তৃণমূল ফেরার সম্ভাবনা প্রবল মুকুল রায়ের। তবে তিনি একা নন। সঙ্গে নাকি থাকছেন 11 জন বিধায়ক। তবে তারা কারা? তা কিন্তু স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি।

জল্পনা-অনুমানের মাঝেই বিধানসভায় শুক্রবার শপথ নেন মুকুল রায়। তবে বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে তিনি থাকলেন না। সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে শপথ গ্রহণের পরেই তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিধানসভা ছাড়লেন একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়।

ফিনিক্সের খোঁজে বাম দুর্গ…

একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যদি যাই,তাহলে স্পষ্ট করে ধরা পড়বে 3 মে থেকে 7 মে পর্যন্ত মুকুল রায়ের কর্মকাণ্ড। ভোট-পরবর্তী হিংসা রাজ্যজুড়ে অব্যাহত। রাজ্যে দু’দিনের সফরে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন, শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত থাকলেও, দেখা গেল না মুকুল রায়কে।

জেপি নাড্ডার উপস্থিতিতে হেস্টিংসের দলীয় কার্যালয়ে যখন বিজেপি বিধায়কদের শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ সেখানে অনুপস্থিত মুকুল রায়। খুঁজে পাওয়া গেল না ধর্না মঞ্চতেও।

যেখানে একের পর এক বিজেপি নেতৃত্বরা তৃণমূলকে কাঠগোড়ায় তুলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলোধনা করছেন সেখানে মুকুল রায়ের কোন স্টেটমেন্ট পাওয়া গেলোনা বঙ্গ বিজেপি তরফে। কেন এতটা নিরব থেকে গেলেন মুকুল রায়?

রাজনৈতিক মহলের মতে, লাটাই গুটিয়ে নিয়েছেন চাণক্য। নিজেকে বঙ্গ বিজেপির সমস্ত কার্যক্রম থেকে তাই সরিয়ে রাখছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি জিতলেও বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে হেরে গিয়েছেন মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু।

একের পর এক তৃণমূল নেতৃত্ব যখন দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন তখন বঙ্গ দখলের লক্ষ্যে সবথেকে বেশি হুঙ্কার দিয়েছিলেন মুকুল রায়। 2019-র লোকসভা নির্বাচনে দুই থেকে আঠারোটি সিটে পদ্ম ফোটানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু আজ যখন দল একটা চরম ব্যর্থতার সম্মুখীন, সেখানে চাণক্য চুপ।

জল্পনা জিয়ে রেখেছেন তিনি নিজেও। শুক্রবার শপথ গ্রহণের পর বিধানসভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, যা বলার তিনি আলাদা করেই বলবেন। কিন্তু কি বার্তা তিনি দিতে, চান সেটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতির অন্দরে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদান ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেননি মুকুল রায়। কারণ 2017 সালে তিনি যখন দল ছেড়েছিলেন তার অন্যতম কারণ ছিল শুভেন্দু অধিকারীর দাপট।

2021-র নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপিতে যোগ দিয়েই নতুন মুখ হয়ে ওঠেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা রাজ্যব্যাপী প্রচারে নেমেছিলেন তাঁরা। অথচ লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা করা সেই মুকুল রায় থেকে গেলেন ব্রাত্য।

বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার প্রশ্নেও এগিয়ে থাকলেন শুভেন্দু অধিকারী। সব মিলিয়ে একথা ধরে নেওয়া যেতেই পারে শুভেন্দু অধিকারী এবং মুকুল রায়ের পুরনো ঠান্ডা লড়াই আবারও প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করেছে বঙ্গ বিজেপিতে।

যতক্ষণ পর্যন্ত মুকুল রায় নিজে থেকে না জানাচ্ছেন তার আগামী রাজনৈতিক কর্মপন্থা কোন দিকে এগোবে, ততক্ষণ বলা বেশ মুশকিল।প্রশ্ন আগামী দিনে তিনি কোন দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন? জয়বাংলা নাকি জয় শ্রীরাম স্লোগান, তার মুখে শুনবে রাজ্যবাসী?

শুরু কাউন্টডাউন …..

সম্পর্কিত পোস্ট