বৃহস্পতিবার ফের শুনানি; আরও একদিন জেল হেফাজতেই চার হেভিওয়েট
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নারদ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে আজকের মত শুনানি শেষ। আগামীকাল দুপুর দুটোয় এই মামলার ফের শুনানি হবে। জানা গেছে, আপাতত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বজায় থাকবে কলকাতা হাইকোর্টের জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ। অর্থাৎ, আরো একদিন জেল হেফাজতেই থাকতে হবে চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীকে।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর জামিন স্থগিতাদেশের পুনর্বিবেচনার শুনানির শুরুতে বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”জামিন হবে কি হবে না আমরা কেন সিদ্ধান্ত নেব? শুধুমাত্র মানুষের চাপের অভিযোগ ছিল বলে স্থগিতাদেশ দিয়েছি।” এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন,”দেশের ইতিহাসে এরকম হয়নি।”
এরপর সিবিআইয়ের কৌঁশুলী তুষার মেহতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে বিচারপতি বলেন,”চার্জশিট পেশ করা হয়ে গিয়েছে, এই ৪ জনকে আগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাহলে এই করোনাকালে এঁদের শুধুশুধু জেলে রাখার প্রয়োজন আছে কি?”
পাশাপাশি, ধৃতদের অসহযোগিতা করার কোন উদাহরণ রয়েছে কিনা তাও জানতে চান বিচারপতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তুষার মেহতা বলেন,”অভিযুক্তরা জেলে নেই, তাঁরা হাসপাতালে আছেন।” তিনি আরো করেন,”আদালত সিবিআইকে নিয়োগ করেছিল। তাদেরকেই কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাতে ন্যায্য বিচার না হয় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
শনিবার থেকেই প্রভাব খাটাবে যশ, উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে সতর্কবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতার এই সওয়ালের পাল্টা জবাব দিয়ে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন,”অভিযুক্তদের না জানিয়ে আদালতে মামলা হচ্ছে। তখন তাঁদের ন্যায় বিচারের কথা মনে ছিল না?” শুধু তাই নয়, ছলে-বলে-কৌশলে চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীকে জেলে ঢোকানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।
পাল্টা সিবিআইয়ের কৌঁশুলী তুষার মেহেতা বলেন,”নিজাম প্যালেস ঘেরাও হয়েছে, জোর করে ভেতরে ঢুকতে চেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঢুকে তাঁকে গ্রেফতারের কথা বলেছেন। নিঃশর্তভাবে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। সিবিআই অফিসারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন,”ইচ্ছাকৃতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হয়েছে। ৪ জনের মেডিক্যাল করানো যায়নি। শারীরিকভাবে বিচারকের সামনে পেশ করা যায়নি।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা সওয়াল করে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন,”২০১১ থেকে এঁনারা মন্ত্রী-বিধায়ক, মাটির সঙ্গে সম্পর্ক। এত পুরনো মামলায় হঠাৎ করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মানুষ সুবিচার পাচ্ছে না বলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। সিবিআই পুরো সত্যি না বলেই মামলা করছে।”
অপরদিকে, রাজ্যের আইন মন্ত্রীর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন,”আইনমন্ত্রী নিজে সারাদিন নিম্ন আদালতে উপস্থিত ছিলেন বহু মানুষকে নিয়ে। এতে বিচারকের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কেস ডায়েরি পেশ করতে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের বাধা দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের ওপর চাপ তৈরির কৌশল করা হয়েছে।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজেশ বিমদাল প্রশ্ন করেন,”যখন মামলার শুনানি চলছে তখন আইনমন্ত্রী কেন গেছেন?” এই সওয়ালের জবাবে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন,”মন্ত্রী আদালত কক্ষে ছিলেন না।”
এদিন আদালতে শুনানি চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন করেন,”সোমবার নিজাম প্যালেসের বাইরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে বলবেন? আইনমন্ত্রীর আদালতে অবস্থান নিয়ে কী বলবেন?”
এর জবাবে, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন,”পুরোটাই গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ। কাউকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়নি। বিচারব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করা হয়নি।”
রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতাকে করোনাকালে সিবিআইয়ের গ্রেফতার করার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সওয়াল করে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এদিন বলেন,”এই মহামারীর সময় আদালত পর্যন্ত বলেছে গুরুতর অপরাধ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে। আর সিবিআই এভাবে গ্রেফতার করছে।”
বিধানসভা নির্বাচনের হলফনামায় তাদের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ কুনালের
পাশাপাশি সিবিআইয়ের ‘প্রভাব খাটানোর’ যুক্তির বিরুদ্ধে সকাল করে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন,”সলমন খান, সঞ্জয় দত্তের মামলাও আদালতে হয়েছে। তাঁরা হেভিওয়েট বলে তো আদালত প্রভাবিত হয়নি।”
এদিন শুনানি চলাকালীন গ্রেফতারির দিন নিজাম প্যালেসে মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘক্ষন অবস্থান প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন করেন,”মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ সময় উপস্থিতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?” এর জবাবে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন,”সিবিআই পুরো বলছে না। ফিরহাদ হাকিম নিজে গ্রেফতার হওয়ার সময় কর্মীদের শান্ত থাকার কথা বলেছেন। আমার কাছে ভিডিও আছে।”