কেন এত তাড়াতাড়ি ঘুমের দেশে চলে গেলেন অজয় দা ? ভাল থাকবেন…
নয়ন রায়
প্রিয় অজয়দা
আপনিও চলে গেলেন। আপনি আমার আত্মীয় না অনাত্মীয় সেটা বড় বিষয় না। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অজয়দা আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় মামার বাড়ি সূত্র ধরে। শান্তিপুর মামার বাড়ি। চড়কতলা গেলে আপনার বাড়ি যাওয়া আসা চলত। লাইব্রেরীর সামনে আপনার দাদা অসমঞ্জো দে-র মর্মর মূর্তি আছে।
আমি শান্তিপুর গেলে মাঝেমধ্যে ওই মর্মর মূর্তির সামনে যেতাম। আপনার চলে যাওয়া মানে শান্তিপুর শহর অভিভাবকহীন। এইতো সেদিনের কথা। সাংবাদিকতার জীবনের প্রায় ২৫ বছর হওয়ার মুখে। কত কথাই না হত আপনার সঙ্গে। কত তর্ক, কত আড্ডা। যা সবই আজ স্মৃতির গল্প।
আপনি যখন শান্তিপুরের কংগ্রেসের বিধায়ক তখন থেকেই আপনার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা। তখন একটি সংবাদমাধ্যমের হয়ে বিধানসভার বিট করতাম ২০০৭ সাল থেকে। তাই আপনার একান্ত সাক্ষাৎকার ছাড়াও ব্যক্তিগত গল্প তো হতোই।
যেহেতু আমার মামারবাড়ির দেশের লোক। বরাবরই আপনার প্রতি আমার বাড়তি আকর্ষন ছিল। আমার ডাকে সেসময় আমি যে নিউজ চ্যানেলে চাকরি করতাম আপনি প্যানেল ডিসকাশনে এসেছিলেন। পরনে পাঞ্জাবি আর পাজামা। চুলটা পরিপাটি করে আঁচড়ানো। কেটে গেছে অনেকদিন। ফোনালাপ হয়েছে। তবে দেখা হয়নি। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে অজয় দা, আর কথাও হবে না আপনার সঙ্গে।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে পরাজিত হলেন আপনি। রাজনৈতিক ভাবে দল পরিবর্তন করে তৃণমূলে যোগ দিলেন। ব্যক্তিগতভাবে সেদিন মানতে পারিনি। তৃণমূল ভবনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলের পতাকা ধরলেন। বহু বছর আপনার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছিল । চৈতন্য মহাপ্রভুর জেলা আর ভাগীরথীর পারে তাঁত কাপড়ের দেশের মানুষ ছিলেন। আজ সেসব অতীত। আপনাকে শান্তিপুরের মানুষ বরাবরই ভালোবাসতেন।
2019 এর লোকসভা নির্বাচনে আমার দুই সহকর্মীকে আমার কথায় সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছিলেন। তখন একটি ছোট্ট ডিজিটাল মিডিয়ায় চাকরি করতাম। 2021 বিধানসভা নির্বাচনে আপনি জগন্নাথ সরকারের কাছে পরাজিত হলেন।
নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকে। আমার যেটা মনে হয়েছে একজন ভদ্রলোক, যিনি বর্তমান রাজনৈতিক পঙ্কিল আবর্ত থেকে অনেক দূরে দুর্নীতি মুক্ত থাকা যায় তার প্রকৃত উদাহরণ আপনি। রাজনৈতিকভাবে আপনার মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন শোক বার্তায় বলা হবে গ্রেট লস। তবে আমি বলবো আমার মামারবাড়ি দেশের মানুষকে হারালাম। রাগ তো হচ্ছেই সেইসঙ্গে হচ্ছে দুঃখ।
আপনার মরদেহ দেখার অধিকার থাকবে না। তার কারণ করোনা মহামারী আপনার প্রাণ কেড়ে নিল। আপনার আরও অনেকদিন থাকার কথা ছিল। বিষণ্ণ মন নিয়ে আপনার প্রতি আমার অটুট ভালোবাসার মেলবন্ধনে এই প্রতিবেদন। একজন সাংবাদিক তার সীমাবদ্ধতা স্মৃতিচারণ ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। আপনি মেঘের দেশে চলে গেলেন। অথচ কত কাজ বাকি।
শান্তিপুরের মানুষ করোনা পরিস্থিতিতে চরম অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হল। আর আপনি চলে গেলেন। হয়তো আপনার মুখ অনেকদিন পর অনেকেই ভুলে যাবে। তবে শান্তিপুরে কোন কাজ করতে গেলে বা মামার বাড়ি যেখানেই যাই, আপনার মুখটা মনে পড়বে। ঘুমের দেশে ভাল থাকবেন অজয়দা।