লাক্ষাদ্বীপের রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় রাজনীতির আলোচনায়
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
বিগত কয়েকদিন ধরে লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে তুমুল শোরগোল তৈরি হয়েছে৷ নতুব করে আলোচনা শুরু হয়েছে পশ্চিম ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিস্থলকে কেন্দ্র করে৷ শুধুমাত্র লাক্ষাদ্বীপ নয়, কেরলে থেকে এই আন্দোলনের খবর নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। খবরে না আসা এই লাক্ষাদ্বীপকে নিয়ে আলোচনা কেন? কারণ এবার জল-জমি নয়, খাদ্যাভাস এবং রুচিতেও দখলদারির চেষ্টা করছে প্রশাসন৷
লাক্ষাদ্বীপের রাজনৈতিক অশান্তির জন্য অনেকেই প্রশাসক প্রফুল্ল প্যাটেলকে দোষারোপ করছেন৷ লাক্ষাদ্বীপের প্রাক্তন প্রশাসক দীনেশ্বর শর্মার মৃত্যুর পর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নতুন প্রশাসক হিসাবে লাক্ষাদ্বীপের দায়িত্ব পান প্রফুল্ল খোদা প্যাটেল। চিরচারিত প্রথা অনুযায়ী লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক কোনও আইএএস অফিসার সাধারণত হয়ে থাকেন৷ কিন্তু এবার প্রথা ভেঙে রাজনীতির কোনও ব্যক্তিকে আনা হয়েছে৷ গুজরাতে নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে ছিলেন এই ব্যক্তি। বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিতি রয়েছে তাঁর। কিন্তু আসার পর থেকেই একের পর এক আইন এবং খসড়া নিয়ে আনছেন যাতে লাক্ষাদ্বীপের মানুষের জন্য সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ড্রাফট লাক্ষাদ্বীপ ডেভলপমেন্ট অথারিটি রেগুলেশন তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে লাক্ষাদ্বীপের উন্নয়নের জন্য দ্বীপে বসবাসকারী মানুষদের সরিয়ে দেওয়া যাবে৷ সেই অধিকার পাবেন প্রশাসক। ইতিমধ্যেই তা পাবলিক ডোমেনে আনা হয়েছে।
এর পর আসে পাসা অ্যাক্ট অথবা গুন্ডা অ্যাক্ট। যার পুরো নাম প্রিভেনশান অব অ্যান্টি সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিজম। এর ফলে যে কোনও ব্যক্তিকে জনসমক্ষে না এনে একবছর জেলবন্দী রাখা যেতে পারে৷ নতুন আইনেও অতীষ্ট লাক্ষাদ্বীপের বাসিন্দারা৷
আরও একটি ড্রাফট তৈরি করা হচ্ছে। যা নিয়ে ঘোর বিরোধিতা শুরু হয়েছে। লাক্ষাদ্বীপের পশু সংররক্ষণ আইন মোতাবেক কোনও ব্যক্তি গো মাংস এবং গো মাংস জাতীয় কোনও জিনিস সংরক্ষণ, বিক্রি করতে পারবেন না। যদি কেউ তা করতে দেখা যায় তাহলে তাঁকে ১০ বছর অবধি জেলবন্দী করা হতে পারে। একইসঙ্গে তাঁর ৫ লক্ষ টাকা অবধি জরিমানা হতে পারে৷
লাক্ষাদ্বীপে প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমানের বসবাস। নতুন এই আইনের বিরোধিতায় ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে। কয়েক দশক ধরে এখানে মদ্যপান নিষিদ্ধ। এখন নতুন প্রশাসকের নতুন আইন তাঁদের রীতিনীতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছে বলে মনে করছেন লাক্ষাদ্বীপের মানুষ।
একইসঙ্গে আনা হয়েছে পঞ্চায়েত ড্রাফট নোটিফিকেশন। এর ফলে কোনও ব্যক্তির দু -এর বেশী সন্তান হলে সেই ব্যক্তি পঞ্চায়েত সদস্য হতে পারবেন না।
শুধুমাত্র এই-ই নয়, লাক্ষাদ্বীপ থেকে কেরলের দুরত্ব সবথেকে কম। লাক্ষাদ্বীপে বসবাসকারী বেশীরভাগ মানুষের কেরলে একটি বাড়ি রয়েছে। নতুন নিয়মে বলা হচ্ছে লাক্ষাদ্বীপ থেকে কেরলে নয়, বরং ম্যাঙ্গালোর অবধি চলবে জাহাজ। যা কর্ণাটকের অংশ। সেখানে রয়েছে বিজেপির সরকার৷ এর ফলে কেরলের বাণিজ্যিক উপাদান সরাসরি পৌঁছে যাবে কর্ণাটকে৷
নতুন নিয়মের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন৷ লাক্ষাদ্বীপ এবং কেরলের পুরাতন সম্পর্ক ধ্বংসের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রশাসকের পদত্যাগ চেয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠি দিয়েছেন এলামারাম করিম। ঘটনার নিন্দা করেন পদত্যাগ চেয়ে সরব হয়েছে অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা৷ প্রশাসক প্রফুল্ল প্যাটেলের ভূমিকার বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর৷
লাক্ষাদ্বীপের সাধারণ মানুষের ধারণা এতদিন ধরে করোনা মুক্ত লাক্ষাদ্বীপে নতুন নিয়মের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। ৭০ হাজারের দ্বীপে ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার মানুষ।
প্রশাসক প্রফুল্ল প্যাটেল জানিয়েছেন, মানুষের উন্নয়নের কথা ভেবেই তিনি নতুন আইন আনতে চাইছেন। এবিষয়ে মালদ্বীপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছে ততই রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়ে চলছে ৩৫ টি দীপপুঞ্জের অন্দরে৷