মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি প্রকাশ্যে আনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল, একযোগে প্রতিবাদ কুণাল-কল্যাণের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: আরও একবার রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মোবাইলে যে ‘ব্যক্তিগত বার্তা’ পাঠিয়েছিলেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর সেটি প্রকাশ্যে আনায় বেজায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল।

এতটাই যে, ভবিষ্যতে রাজভবনের সঙ্গে এই ধরনের ‘সৌজন্যমূলক যোগাযোগ’ আর রাখা হবে কি না, তা নিয়েও শাসক শিবিরের অন্দরে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কলাইকুণ্ডা নিয়ে যখন কেন্দ্র রাজ্যের বিরোধ চরমে সে সময়েই ট্যুইট করে রাজ্যপাল বলছেন, মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় নাকি আগেই তাঁকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক বয়কটের ইঙ্গিত দেন।

বৈঠক বাতিল নিয়ে তিনি আরও লিখেছন, অহংকারের জয়, জনসেবার হার। এমনকি কলাইকুণ্ডার ঘটনাকে গণতন্ত্রের কালো দিন বলেও ব্যখ্যা করেছেন রাজ্যপাল।

রাজ্যপালের এই তৎপরতায় প্রবল ক্ষুব্ধ তৃণমূল শিবির। রাতেই ওই বিষয়ে তৃণমূলের অন্দরে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়। অতঃপর মঙ্গলবার সকাল থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতানেত্রীদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কাছে আর্জি জানাতে থাকে, রাজভবনের সঙ্গে এই ধরনের ‘বার্তা বিনিময়’ বন্ধ করে দেওয়া হোক।

দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘সমস্ত পর্যায়ের রাজনীতিতেই এই ধরনের বার্তা বিনিময় চালু থাকে। মুখ্যমন্ত্রী নিজস্ব সৌজন্যবোধ থেকে রাজ্যপালকে বার্তা পাঠিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। রাজ্যপাল সেটা জনসমক্ষে এনে ঠিক করেননি। এটা কিন্তু রাজ্যপাল সুলভ কাজ নয়। যিনি নিজেকে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান বলে অহরহ দাবি করেন, তিনি এমন আচরণ করলে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক!’’

এদিন রাজ্যপালের এই বক্তব্য নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তিনি বলেন, রাজ্যপাল ভোটের আগে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন, তিনিতো রাজ্যপাল নন, তিনি বিজেপির দালাল। তিনি তাঁর সাংবিধানিক পদ মর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গোহারা হারার পর অতৃপ্ত আত্মা মানসিক অবসাদগ্রস্ত বৃদ্ধ হিসাবে তিনি প্রাসঙ্গিকতায় থাকার জন্য সারাদিনের সব প্রোগ্রাম করেন। একে গুরুত্ব দেওয়ার মতো কিছু নেই। উনার একটা উইথড্রল সিমড্রম আছে। ট্যুইট না করলে উনার মানসিক অসুবিধা হয়। হোমিওপ্যাথি বা এলোপ্যাথিতে এর চিকিৎসা হয়নি। সাহায্য চাইলে আমরা আয়ুর্বেদিকে এই রোগের চিকিৎসা করে দিতে পারি।

একইভাবে রাজ্যপালকে এক হাতে নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ ব্যানার্জি। এদিন তিনি বলেন, রাজ্যপাল কবে থেকে মানুষের মন পড়তে জানলো আমাদের জানা নেই। উনি এখন সাইকোলজিস্ট হয়ে গেছেন। আমার মনে হয় 28 মে ভারতবর্ষের জন্য একটা কালো দিন। নরেন্দ্র মোদি ভারতের ফেডারেল স্ট্রাকচার কে ভেঙে দিয়েছে। ভারতবর্ষের সংবিধানকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে চাইছেন।

রাজ্যপাল মহাশয় এর কাছে কল্যাণ ব্যানার্জির প্রশ্ন, কবে থেকে বিরোধী দলনেতা অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অংশ হল। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা যা বক্তব্য রাখবেন রাখবেন তবে কবে থেকে তিনি সরকারের কাজ-কর্মের অংশ হলেন, যে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রিভিউ মিটিংয়ে থাকবেন। নাকি শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপি দল করার কারণে এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল? আর এটাই যদি হবে তাহলে উনি কেন কয়েকদিন আগে গুজরাটে গিয়ে বিরোধী দলনেতা কে ডাকলেন না? গতবছর আমফানের যখন মিটিং হয়েছিল তখন কেন বিরোধী দলনেতা হিসেবে আব্দুল মান্নানকে ডাকা হল না।

এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদি আসলে একজন ডিক্টেটর। আর জাগদীপ ধনকর হলেন তার তল্পিবাহক। রাজ্যপাল সাহেবের নিজস্ব কোনো ভাষা নেই। তাই উনি যা বলছেন তা গুরুত্বহীন।

এখানেই শেষ নয় কল্যাণের ভাষায়, রাজ্যপাল হিসেবে জগদীপ ধনকর এর সময় কি একটা অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে ভারতের ইতিহাসে লেখা থাকবে।

সম্পর্কিত পোস্ট