দলের উপর ক্ষুব্ধ সৌমিত্র! রাজ্য সরকারের লকডাউন নির্দেশিকাকে প্রাধান্য দিয়েই থাকছেন না বৈঠকে

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই বদলে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণ। বাংলায় পরিবর্তনের পরিবর্তন চেয়ে যে বিপুল ঝড় উঠেছিল তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো এবারে কুরসীর রং বদলে হতে চলেছে গেরুয়া।  নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আরও একবার পাল্টে গিয়েছে সমীকরণ।

পাশা পাল্টে যেতেই গেরুয়া বাহিনীর অন্দরমহলের দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসছে। নির্বাচনের আগে জোয়ারের জলে গা ভাসিয়ে যারা বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন তারাই আবার স্রোত পরিবর্তন করে ফিরে আসছেন তৃণমূলে।

ভরাডুবির কারণ জানতে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্বরা। জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আজ তাঁর গন্তব্য বাঁকুড়া। সেই বৈঠকে থাকছেন না বিজেপির সংসদ সৌমিত্র খাঁ।

জেলার বিজেপি মিডিয়া সেলে দিলীপ ঘোষের বৈঠকের খবর প্রকাশিত হতেই সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে লেফট করে গিয়েছেন সৌমিত্র খাঁ। এর থেকেই স্পষ্ট বিজেপির অন্দরে আরও একবার সৌমিত্র-দিলীপ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে।

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হতেই মুখ খুলেছেন সৌমিত্র। সপাট জবাব, “লকডাউন চলছে। মিটিং-মিছিল বন্ধ। রাজ্য সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়ে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবো না।”

বঙ্গ রাজনীতিতে লুপ্তপ্রায় কংগ্রেস, আদৌ কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?

দলত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিজেপি ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। আমি বিজেপির একজন দায়িত্বশীল নেতা । বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র শান্তিতেই রয়েছে।”

আর যারা ইতিমধ্যেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন বা আসার মনোভাব তৈরি করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে সৌমিত্রর জবাব, “যারা সুবিধা নিতে দলে এসেছিলেন, তারা হেরে গিয়েছেন ভোটে। আবার তৃণমূলে যাবেন বলছেন। এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না।”

প্রায় আড়াই বছর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন সৌমিত্র। ২০১৯ সালে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে সৌমিত্রের হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন তাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁ। বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন সৌমিত্র। ২০২০ সালে রণেভঙ্গ দিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুজাতা। তারপরেই সৌমিত্র-সুজাতার পারিবারিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে।

দিলীপ ঘোষের বৈঠকে সৌমিত্রর অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে সুজাতা বলেন, “এ ঘটনায় আরও একবার প্রকাশ্যে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব। সৌমিত্রর উচিত বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূলে চলে আসা।”

সৌমিত্রর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ভোট পরবর্তী হিংসায় যে সমস্ত কর্মী ঘর ছাড়া তাদের নিরাপত্তা সহ ঘরে ফেরানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে। এ বিষয়ে বাড়তি শব্দ খরচ করেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। বুনিয়াদি স্তরের কর্মীরা এতদিন ধরে জেলায় জেলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টিকে। আজ তারাই ব্রাত্য।

অনেক নেতাই কর্মীদের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না। সৌমিত্রর ক্ষেত্রেও অবস্থা খানিকটা একই রকম। যদিও এই বিষয়ে বঙ্গ বিজেপি তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বৈঠকের পর দিলীপ ঘোষ এই বিষয়ে কি বলেন আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।

সম্পর্কিত পোস্ট