বেসুরো রাজীব, বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী মনোভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ

দ্য কোয়ারি ডেস্ক:  বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই কর্পূরের মতো রাজনীতির ময়দান থেকে উবে গিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় 42 হাজার ভোটে কল্যান ঘোষের কাছে হেরে যান তিনি। তারপর থেকেই বিজেপির কোনো কর্মকাণ্ড তে সেভাবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিতি দেখা যায়নি।

শুধু তাই নয় আজ যখন হেস্টিংসের দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক চলছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের অন্যদিকে তখনই দিল্লিতে শুভেন্দু অধিকারী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন অমিত শাহের সঙ্গে। তখনই প্রশ্ন কোথায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়?

যদিও এই প্রশ্নের উত্তর সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে রাজীবের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যাচ্ছিল, বিজেপির অন্দরে খাপ খাওয়াতে পারছে না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কারণ বিজেপির অন্দরে সমন্বয়ের অভাবের কথা আগেও তিনি জানানোর চেষ্টা করেছেন শীর্ষ নেতৃত্বকে।  তবে তাতে কর্ণপাত করেননি কেউই।

তবে এবার লুকোছাপা না করে সরাসরি নিজের ফেসবুক এবং টুইটারে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন,  ”  মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর 356 ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে মেনে নেবে না। আমাদের উচিত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কোভিড ও ইয়াস এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা। ”

এর থেকে স্পষ্ট বিজেপিতে বীতশ্রদ্ধ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন তাহলে কি এবার তিনি তৃণমূলে আসছেন নাকি বিজেপিতেই থাকছেন? যদিও এই প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

30 শে জানুয়ারি চার্টার্ড বিমানে বৈশালী ডালমিয়া ও প্রবীর ঘোষাল, রথীন চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ সহ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অমিত শাহের বাসভবনের উদ্দেশ্যে উড়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েই গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি।

তারপর থেকেই সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে রাজনীতির অন্দরে। ডুমুর জেলা স্টেডিয়ামে তারপরের দিন উপস্থিত হয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বে আরো বেশকিছু কর্মী সেদিন যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।

সে সময় মমতা বিরোধী তুমুল হাওয়া তৈরি হলেও ভোটের ফলাফল প্রকাশে দেখা গেল উলটে গিয়েছে পাশা। এর আগেও করোনা এবং ইয়াস মোকাবিলায় টুইটারের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিনের হেস্টিংসের বৈঠকে যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যারা বেসুরো মন্তব্য করবেন বা দল বিরোধী কথা বলবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিক তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটালে বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজনৈতিক মহলের মতে, যেদিন বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি হাতে নিয়ে সেদিনই গুঞ্জন উঠেছিল পরবর্তীকালে হয়তো আবার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে হয়তো আবার তৃণমূলের ফিরতে পারেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইতিমধ্যেই তৃণমূলে ফেরার ইঙ্গিত করেছেন মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশু রায়। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি উভয় শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা। তবে বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে কথা না বলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হবে না।

শাসকদলের গুনোগান গেয়ে এই পরিস্থিতিতে কি প্রমাণ করতে চাইছেন রাজীব? সে প্রশ্নই আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতির অন্দরে।

সম্পর্কিত পোস্ট