মুকুল নির্দোষ! অভিযুক্ত কারা?
।। নয়ন রায় ।।
একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। এই প্রবাদ বাক্যটি এ বাংলায় বহুল প্রচলিত। অমিত শাহের হাত ধরে শুভেন্দু অধিকারীর যোগদান বাংলার মানুষ দেখেছে । সেদিন তিনি স্বীকার করেছিলেন অমিত শাহ সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল । তিনি করোনায় যখন আক্রান্ত হয়েছিলেন অমিত ভাই তার খোঁজ নিয়েছেন। এতেই আগুন তৃণমূল।
অভিযোগ উঠল তলে তলে বিজেপিকে সহায়তা করেছে এই শুভেন্দু অধিকারী। অর্থাৎ, ১৯ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলে থেকেও বিজেপিকে অক্সিজেন জুগিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারী। আর সেসময় খাতায় কলমে বিজেপি নেতা হিসাবে রাজনীতির ময়দানে দাবার চাল চেলেছিলেন মুকুল রায়।
১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি যে ক’টি আসন পেয়েছিল তার পুরো কৃতিত্ব অবশ্যই মুকুল রায়ের। এটা কোন ভাবে অস্বীকার করার উপায় নেই। নেত্রী সত্যি বলছেন মুকুল দল বিরোধী কোনো কথাবার্তা বলেননি। তাহলে তো পুরনো ফুটেজ দেখতে হয়। একের পর এক নেতাকে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে নিয়ে সাংসদ পদে জিতিয়েছেন এই চাণক্য।
আর তার পুত্র শুভ্রাংশু রায় দীনদয়াল উপাধ্যায় ভবনে তৃণমূলকে ছাড়েননি কটাক্ষ করতে। যদিও বর্তমান রাজনীতির আইডিওলোজিতে এসব অতীত । তাই তড়িঘড়ি বাবা এবং ছেলে মমতার হাত ধরে তৃণমূলের মহলে প্রবেশ করল পদ নিয়ে আর পুরনো সম্মান বহাল রেখে।তাহলে এখানে কোন ফর্মূলা চালু থাকবে?
কারণ সারা রাজ্য জুড়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল সিং, এবং বিশ্বজিৎ দাসদের মতো একাধিক নেতার বিরুদ্ধে গদ্দার পোস্টার পড়ছে। এরাও তো মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুকথা বলেনি। মুকুল কি ধোয়া তুলসি পাতা ছিল?
সামনে ত্রিপুরা নির্বাচন। সাংগঠনিক দিক থেকে শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং জাতীয় স্তরে তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা করার মত রাজনৈতিক দূরদর্শীতা এই মূহুর্তে কারোর নেই বললেই চলে। একপ্রকার নিরুপায় হয়েই মুকুলকে ঘরে ফেরাতে হয়েছে মুকুলকে। বলছেন দলেরই একাংশ।
নিঃসন্দেহে ত্রিপুরা নির্বাচনের কান্ডারী মুকুল রায়। যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্লোগান উঠছে। রাজ্য তোলপাড় হয়েছে। তারাই আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মাতৃবিয়োগের পর হঠাৎ সমবেদনা জানাতে হাজির। শোভন-বৈশাখীর ঝটিতি আবির্ভাব, কিসের ইঙ্গিত? তারা যদি ফিরতে চায় দলে অপরাধ টা কোথায়?
মুকুল রায় থেকে শুরু করে শুভ্রাংশু রায়- দীর্ঘ কয়েক বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কে কত আক্রমণ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের লাইব্রেরীতে তার ফুটেজ রয়েছে। তাই এক রাতেই মুকুল ধোয়া তুলসী পাতা আর বাকিরা সজারুর কাঁটা -সেটা কখনই এক নয়।
২০২৪ এ প্রধানমন্ত্রী হতে চায় মমতা। আর তার পরোক্ষ ভূমিকায় চাণক্যের জায়গায় নিয়ে আসা হল মুকুল রায়কে। তাহলে বাকিরা কী অন্যায় করল? সোনালী গুহ থেকে সরলা মুর্মু, দিপেন্দু বিশ্বাস থেকে অমল আচার্য। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সুনীল সিং, বিশ্বজিৎ দাস লাইন দীর্ঘতর হচ্ছে। আর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে বিজেপি।
তাহলে রাজনীতিতে এই কুরুচিকর মন্তব্য করার পরও এবং ভাবলেশহীন বার্তা দেওয়ার পরও ঘরে ফিরতে মুকুল বাবুর সমস্যা না হলে বাকিদের কেন হবে?যদিও এই সমস্ত নেতাদের দলে ফেরার মাপকাঠি ঠিক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মমতার এখন লক্ষ্য বিজেপির ঘর ভাঙা।তৃণমূলের ঘরে বসে সেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন মুকুল রায়।
অন্যদিকে রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করছেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যপাল বলছেন এ রাজ্যের পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর। আবার উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের জল্পনা উস্কে দিয়ে জটিল রাজনেৈতিক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
তিস্তা নদীর পাড়ে তা কতটা জোড়ালো হয়ে উঠবে সেটা সময় বলবে । সবমিলিয়ে বাংলার রাজনীতি এক ঘূর্ণাবর্তের মাঝখানে পড়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, মুকুল অপরাধ করলে দোষ নেই, বাকিদের দোষ! এটা কোনো ফর্মুলা হয় নাকি!
উনিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল থেকে ভাগিয়ে বহু লোককে সাংসদ বানানোর কারিগর ছিলেন মুকুল তাহলে। সে অপরাধ কি এক রাতেই ধুয়েমুছে সাফ ? এটাইতো রাজনীতির খেলা ।
একই ছবি চলবেই। করোনা আবহে লকডাউন জারি। তার মধ্য দল বদলের নাটক থামছে না। লকডাউন বেড়ে গেল ও আবার বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আটকে মানুষ। প্রান্তিক মানুষের বেহাল দশা। মানুষের কী পরিস্থিতি হবে পার্থ বা সুব্রত বক্সীর কি জানেন না? নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন না?
সব মিলিয়ে রাজনীতিই এখন প্রাসঙ্গিক। অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন। তার মধ্যে রাজ্যপালের ভূমিকা এবং বিরোধী দলনেতার ভূমিকা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন নাটকের সূচনা করেছে, তা সূর্যের আলোর মত স্পষ্ট।