প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর দেখানো পথেই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা
শুভজিৎ চক্রবর্তী
সোমবার সকালে জরুরী বৈঠক ডেকেছেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার৷ বর্ষীয়ান নেতার আমন্ত্রিত চিঠি ১৫ টি দলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ডেকেছেন শরদজি এবং যশবন্ত জি। সকলকে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
পড়ন্ত বিকেলের এই খবর সারা দেশে হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছে। ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে ‘রাষ্ট্রমঞ্চ’। যার দায়িত্বভার নিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন সদস্য। শুধুমাত্র বৈঠকে আমন্ত্রিত দল নয়, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ এর আগে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে মোদি-শাহের বিরুদ্ধে ছক কষে ফেলবেন বলে জানিয়েছেন যশবন্ত সিনহা৷
কিন্তু এমনটা হওয়ার কারণ কী? কেন নিজের প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে সুর সপ্তমে চড়িয়ে এখন সেই দলকেই পরাস্ত পরিকল্পনা তৈরি করছেন যশবন্ত সিনহা?
২০১৪ সালে তখন একাধিক ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপিএ-টু সরকার৷ ক্ষমতায় আসার সমস্ত রাস্তা খোলা ছিল এনডিএর জন্য। কিন্তু দলের ভিতরেত রাজনৈতিক আবহাওয়া বুঝতে পেরে নিজেকে সরিয়ে রাখেন। এমনকি নির্বাচনে প্রার্থী অবধি হননি। পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, দলের আন্তরিক প্রজাতন্ত্র যে শেষ হয়ে আসছে তা তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন৷ তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন সমস্ত কিছু ঠিক নেই। আগামী দিনে বিজেপিতেও একনায়কতন্ত্র আসতে চলেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতিতে দূরে থাকার পর চলতি বছরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে এসে যোগদান করলেন। আর বললেন তিনি দেখতে পাচ্ছেন বাংলায় মমতার জয় নিশ্চিত। আর তাই-ই ফলে গেল। বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার জয়ের বিশেষ বার্তা গেল জাতীয় রাজনীতিতে৷ আগামী দিনে মমতাকেই প্রধানমন্ত্রীর মুখ করার প্রস্তাব দিলেন অন্যান্য দলের নেতারাও।
সেইমতো একে একে ছক কষতে শুরু করলেন। যশবন্ত সিনহার রাজনৈতিক যোগস্থাপনের অন্যতম হাতিয়ার হলেন প্রশান্ত কিশোর৷ শরদ পাওয়ারের দিল্লির বাসভবনে দ্বিতীয় দফার বৈঠকের পর স্থির হল জোট নিয়ে বড় বৈঠকের কথা।
যদিও এই জোট নিয়ে পড়শি রাজ্যগুলিতে আগে থেকেই যোগ স্থাপন করে চলেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কখনও আরজেডি, কখনও হিন্দুস্থানী আওয়ামি মোর্চা আবার কখনও আরএলএসের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছেন তিনি।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি সহ অন্যান্য দলের নেতাদের। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের জি-২৩ দলের বেশ কিছু সদস্য উপস্থিত থাকতে পারেন এদিনের বৈঠকে। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রে মহা আগাধি জোটের অবস্থা টলমল হলেও শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে জোটের পক্ষে সায় দিয়েছেন সঞ্জয় রাউত।
রাজনৈতিকভাবে যশবন্ত এবং মমতার মধ্যে মিল রয়েছে একটিমাত্র জায়গাতে। দু’জনেই ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর কেবিনেট মন্ত্রী। এনডিএ শিবিরে থেকে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে দু’জনের৷ কিন্তু রাজনৈতিক দাড়িপাল্লায় বর্তমান এনডিএ সরকারের সঙ্গে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের জমিন আশমানের ফারাক বলে মনে করেন দু’জনেই।
তাই একাধিক ইস্যুতে মোদি সরকারের তুলোধনা করতে পিছপা হননি কেউই। এখন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্তের দেখানো পথেই জাতীয় রাজনীতিতে বিস্তার ঘটাতে চাইছে তৃণমূল। সম্প্রতি কৃষক আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক তারই সুচনা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তার আগে মঙ্গলের বিকেলে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে শরদ পাওয়ারের দিল্লির বাসভবন। সেখান থেকেই ‘রাষ্ট্রমঞ্চ’ এর যাত্রা শুরু।