মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত স্বপন নন্দী
দ্য কোয়ারি বিশেষ প্রতিবেদনঃ প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। বর্তমানে আরামবাগ পৌরসভার পৌর প্রশাসক স্বপন নন্দী। রাজনৈতিক গুরু প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ, সেকথা আজও এক বাক্যে স্বীকার করেন। স্বপন বাবুর কথায়, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের মত সৎ-নিষ্ঠাবান-আদর্শবান রাজনীতিবিদকে দেখলে রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধা আসবেই।
সেই ১৯৭৮ সাল থেকে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছে স্বপন নন্দীর। তারপর দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই ও বিভিন্ন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আরামবাগের মত সাবেকি শহরে রাজনীতি করেছেন।তিনি বলেন, নিজের মত করে আছি। তবে রাজনীতি বাদ দিয়ে না।
আশির দশকে বাংলায় তখন বামফ্রন্ট সরকার। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং বিপ্লব খুব অল্প বয়স থেকেই শুরু হয়েছিল। কংগ্রেস রাজনীতি করতে করতে অনেকের ছত্রছায়ায় এসেছি। ভুলে যাননি কখনও সেই সমস্ত প্রবীণ নেতাদের কথা। যাদের হাত ধরে ব্যক্তি স্বপন নন্দী থেকে রাজনীতিবিদ স্বপন নন্দী হয়েছেন।
তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি খুব গর্ব অনুভব করি। সেই সমস্ত মানুষদের জন্য। যাদের থেকে আমি রাজনৈতিক পাঠ নিয়েছি, তাদের পাঠশালায়। আমি যখন রাজনীতিতে করতাম আরামবাগ শহর তখন খানাখন্দে ভরা। পিছিয়ে পড়া এলাকা। উন্নয়নের ছোঁয়া ছিল না। বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ দিকে দিকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যা। সাধারণ মানুষের বহু সমস্যা। মানুষের কথা মাথায় রেখেই আমরা গণ-আন্দোলন করতাম। কংগ্রেস নেতাদের দেখেছি। বহু জল গড়িয়েছে আরামবাগ শহরের উপর দিয়ে।”
হাতের তালুর মতো আরামবাগ শহরটাকে চেনেন তিনি। আর ভালবাসেন এই শহরটাকে। এরকম ভাবেই পথ চলতে চলতে কবে যে তার বয়স পেরিয়ে গেল তা নিজেই স্মরণ করতে পারছেন না।
তবে এখনো যেকোনো মানুষের থেকে অনেক বেশি শক্তপোক্ত। তেমনি মনের দিক থেকেও বেশি শক্তিশালী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী ছিলেন তখন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দল করতেন। তাঁকে আদর্শ হিসেবে মানতেন। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক আদর্শ স্বপ্নের মত। আটপৌরে গ্রামের এক নেতার অবশ্যই অনুপ্রেরণা তো ছিলই।
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বললেন, “যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ হলেন, তখন আমরা রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলন করতাম। তখন বামফ্রন্ট সরকার একের পর এক শিল্প বন্ধ করছে। একের পর এক কর্মী খুন হচ্ছে। গ্রামে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সেখানে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি আমরা। বহু ইতিহাসের সরণি বেয়ে কিছু কথা তো মনে পড়বেই। যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ত্যাগ করলেন সেদিনও তাঁর পাশে ছিলাম। এখনো আছি। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত থাকবো। তৃণমূল কংগ্রেস গঠন হওয়ার পর তখন থেকে আছি বিভিন্ন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। কোন বড় পদ বা বড় নেতা হওয়ার স্বপ্ন ছিল না। স্বপ্ন ছিল মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া এবং মানুষের সঙ্গে থাকা।”
কারা চড়বেন নীলবাতি ও লালবাতি লাগানো গাড়ি ? তালিকা দিল পরিবহণ দফতর
তিনি একনিঃশ্বাসে বলে চলেন, “তারপর বাম সরকারকে উৎখাত করতে সিঙ্গুরে গণ আন্দোলন এবং নন্দীগ্রাম।তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটালেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী। আমি বর্তমানে আরামবাগ পৌরসভার পৌর প্রশাসক। সকাল থেকে সময় কাটে নানা কাজের মধ্য দিয়ে। ২০২০-২০২১ পর্যন্ত করোনাকালে মানুষের সেবা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা। বর্ষায় মানুষের ছাদের ব্যবস্থা করা। তার সঙ্গে প্রশাসক হিসাবে পৌরসভার দায়িত্ব পালন করা। আমাদের পৌরসভা বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কারণ আমরা প্রতিদিনই অডিট করি। আর হিসেব করে খরচ করি। অর্থাৎ আমরা মানুষের সঙ্গে আছি বলেই একুশে আমাদের মানুষ ফিরিয়ে দিয়েছে।”
“মানুষের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আমি স্বপন নন্দী প্রশাসক। তার থেকে বড় বিষয় হলো আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক।তিনি আমাকে জায়গা না দিলে আজ আমি কথাগুলো বলতে পারতাম না। তবে বহু ইতিহাস বহু ঘটনার বিভিন্ন সাক্ষী থাকার সুবাদে রাজনৈতিক গুরু হিসেবে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানি।” এক নিঃশ্বাসে বলে চললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক স্বপন নন্দী।