অলিম্পিকের রুপোলি কন্যা মীরাবাঈয়ের মৈতৈ জাতি লড়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে
দুর্দান্ত উপজাতি যোদ্ধাদের ইতিহাস
দ্য কোয়ারি ডেস্ক: অলিম্পিকে রুপো জয়ী মীরাবাঈ চানুর রক্তে মিশে আছে দুরন্ত যোদ্ধাদের কথা। তারা উপজাতি মৈতৈ। আসলে মনিপুরি সংস্কৃতির সর্ববৃহৎ ধারক। এই মৈতৈ জাতির প্রতিনিধি অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে রুপো জয়ী মীরাবাঈ চানু। অন্তত দু হাজার বছরের প্রাচীন প্রমাণ সাপেক্ষ তাঁর জাতির ইতিহাস। মৈতৈরা আসলে কৃষ্ণপ্রেমে মগ্ন। আর সময় বিশেষে এরাই ভয়ঙ্কর যোদ্ধা।
বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগুরু জনসংখ্যার মনিপুরিদের সবথেকে বড় অংশ মৈতৈ জাতি। প্রাচীন ব্রহ্মদেশ বর্তমান মায়ানমার থেকে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল দুনিয়ায় মৈতৈ জাতির প্রভাব কম নয়।
হাজার হাজার বছর ধরে মৈতৈরা ছড়িয়ে আছেন পূর্ব উত্তর ভারতে। তাদের বড় অংশ মনিপুর নিবাসী। কিছু অংশ ছড়িয়েছে মায়ানমার ও বাংলাদেশে। মৈতৈ জাতি যেমন কৃষ্ণকীর্তনে মগ্ন থাকেন, তেমনই তাদের জিঘাংসা উগরে দেন শত্রুর উপরে। এ এক অদ্ভুত জীবন। প্রাচীন মৈতৈ ইতিহাস এর সাক্ষী।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালে। এই মুক্তিযুদ্ধে ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে থাকা মৈতৈরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পাকিস্তানকে শত্রু চিহ্নিত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম লিখিয়ে শসস্ত্র ভূমিকা নেন। প্রাচীন দুরন্ত যোদ্ধাদের উত্তরসূরী হিসেবে রক্তে দোলা লেগেছিল মৈতৈদের।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনায় উঠে এসেছে পাহাড়ি উপজাতিদের ভূমিকা। তাতে একটার পর একটা গেরিলা অভিযানে পাক সেনাকে নাস্তানাবুদ করা, শহিদ হওয়া সমস্তকিছুই জড়িয়ে গেছে মৈতৈ জাতির সঙ্গে। আদতে এরাই বৃহত্তর মনিপুরি হিসেবে চিহ্নিত। তবে মৈতৈ ছাড়া আরও কয়েকটি ছোট জনগোষ্ঠী রয়েছে।
মৈতৈ জাতি রসকলি এঁকে কৃষ্ণলীলায় মগ্ন হয়। বাঁশির ছন্দে, তাদের নাচে রাধা কৃষ্ণ একসঙ্গে থাকে। আবার তারাই পৌরানিক কৃষ্ণের কূটিল নিয়ম মেনে বারবার রাষ্ট্রনীতিতে অংশ নেন। এর পরবর্তী পর্বে আসে শত্রু নিকেশ। হাত কাঁপেনা একটুও। ঠিক যেমনটা হাত কাঁপেনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে।
উত্তর পূর্ব ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সেক্টর থেকে পাক সেনার উপর গেরিলা হামলার বিভিন্ন নজির রয়েছে মৈতৈদের। উল্লেখ্য এই মুক্তিযোদ্ধা মৈতৈরা কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেন। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণায় বারবার উঠে এসেছে তাদের ভূমিকা।
১৯৭১ সালের পরবর্তী ভারতের দিকে থাকা মৈতৈ মনিপুরিদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি চাগাড় দেয়। এর জেরে রক্তাক্ত হয়েছে মনিপুর। একে ৪৭ নিয়ে সেনা কনভয়ে ভয়াবহ হামলা মনিপুরে হয়েছে বারবার। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসে বারবার রক্তাক্ত মনিপুরি তথা মৈতৈ জাতির মীরাবাঈ চানু জন্মের পর থেকেই সেনা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘর্ষের সাক্ষী। তেমনই সাক্ষী বিতর্কিত আফস্পা আইনেরও। জাতি হিসেবে নরম ও আগ্রাসী দুই রীতি দেখা যায় মৈতৈদের মধ্যে।