রক্তাক্ত উত্তর পূর্ব: অসম পুলিশ প্রথমে গুলি চালায় অভিযোগ মিজোরাম সরকারের
দ্য কোয়ারি ডেস্ক: আন্ত:রাজ্য সীমানায় অসম ও মিজোরাম এই দুই রাজ্য সরকারের পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে আছে। সোমবার দিনভর রক্তাক্ত পরিস্থিতির জেরে উত্তর পূর্বাঞ্চল নতুন করে উত্তপ্ত। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত ৬ জন। এদের মধ্যে ৫ জন পুলিশ কর্মী ও একজন সাধারণ এলাকাবাসী। গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আরও ৬৭ জন অসম পুলিশ রক্ষী।
গুলিবিদ্ধ মৃত ৫ অসম পুলিশ কর্মীর নাম, মাজরুল হক, স্বপন রায়, সামসুর জামান বরভুঁইয়া, লিটন শুক্লবৈদ্য ও সামসুল হক। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কাছাড় জেলা পুলিশ সুপার নিম্বলকর বৈভব চন্দ্রকান্ত। তিনি সহ অসম পুলিশের অন্যান্য জখম কর্মীরা কাছাড়ের জেলাসদর শিলচরে চিকিৎসাধীন।
প্রশ্ন উঠেছে, অসম পুলিশকে লক্ষ্য করে কারা গুলি চালাল? উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যের রিপোর্ট, দুই রাজ্যের পুলিশ পরস্পরের দিকে গুলি চালায়। কিক্ষুক্ষেত্রে রিপোর্ট এসেছে দুষ্কৃতিরা হামলা চালায়। আন্ত:রাজ্য সীমানার অসমের কাছাড় জেলার লয়ালপুর হলো রক্তাক্ত ঘটনার কেন্দ্র।
গুলি কে চালাল? এই বিতর্কিত প্রশ্নে মিজোরাম সরকার সরাসরি অভিযুক্ত করেছে অসম পুলিশকে। মিজেরামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালচামলিয়ানার অভিযোগ, অসমের পুলিশ প্রথমে গুলি চালিয়েছে। তারা কোনও আলোচনা করে আন্ত:রাজ্য সীমানা সমস্যা মেটানোর পথ নেয়নি।
মিজেরামের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আরও অভিযোগ, অসম পুলিশের দল সে রাজ্যের লয়ালপুর থেকে মিজোরামের দিকে আসা একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে। এর জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আরও।
অন্যদিকে অসম সরকারের দাবি, কাছাড় জেলার লয়ালপুরে প্রায়ই মিজোরামের দিক থেকে হামলা চালায় দুষ্কৃতিরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মিজোরামের পুলিশ এই দুষ্কৃতিদের মদত দেয়। অসম সরকার জানাচ্ছে, মিজোরাম সীমানার কাছাকাছি গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সময় দুষ্কৃতিরা পাথর নিয়ে হামলা চালিয়েছে। যদিও বেশকিছু স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসম ও মিজো পুলিশ পরস্পরের দিকে গুলি চালায়।
অসম মিজোরাম আন্ত:রাজ্য সীমানা বিতর্ক দীর্ঘ সময়ের। সম্প্রতি এই বিতর্ক আরও বেড়েছে। অভিযোগ, মিজোরামের দিক থেকে পুলিশের মদত নিয়ে দুষ্কৃতিরা বারবার হামলা চালায় অসমের কাছাড় জেলায়। সীমানা এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটান।
গত কয়েকদিন ধরেই দুই রাজ্যের আন্ত:সীমানায় উত্তেজনা চড়ছিল। এক পর্যায়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার মধ্যে বিতর্কিক সমস্যা নিয়ে পারস্পরিক টুইট যুদ্ধ শুরু হয়।
সোমবার অসম পুলিশের তরফে হামলার অভিযোগ করে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী টুইটে কিছু ভিডিও দেন। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে অনুরোধ করেন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এর পরেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা টুইট করে তা খণ্ডন করার চেষ্টা করেন। দুই মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে টুইট যুদ্ধ চলার মাঝে আম্ত:রাজ্য সীমানা এলাকা থেকে প্রবল সংঘর্ষের সংবাদ আসতে শুরু করে।
সোমবার বিকেলের পর অসম সরকার জানায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ পুলিশ কর্মীসহ মোট ৬ জন মৃত। অপর দিকে মিজোরাম সরকারও হামলার দায় চাপিয়ে দেয় অসমের উপর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে দুই রাজ্য পুলিশের পারস্পরিক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ফুটেজ। সেখানে দেখা যায় রীতিমতো যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি।
এর পরেই গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত একাধিক দেহ শিলচর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সংবাদে অসম জুড়ে প্রবল আলোড়ন ছড়ায়। মিজোরামেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর জেরে সংসদ অধিবেশনে ঝড় উঠতে চলেছে।