টিম PK আটক ত্রিপুরায়, আগরতলায় পৌঁছলেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা, স্লোগান মুখর বিমানবন্দর
দ্য কোয়ারি ওয়বেডেস্কঃ আগরতলায় পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। ব্রাত্য বসু মলয় ঘটক এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এয়ারপোর্টে পৌঁছেই প্রাথমিক নিয়ম পার করার পরেই রওনা দিয়েছেন হোটেলের উদ্দেশ্যে।
এদিন তারা বিমানবন্দরে পা রাখতেই তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা শ্লোগান মুখর হয়ে ওঠেন। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, “আমরা রাজনৈতিক কারণেই এখানে এসেছি । আমাদের দলের কর্মীরা বাইরে অপেক্ষা করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলব। বিধানসভা নির্বাচনের পরেই গণতন্ত্র স্তব্ধ ত্রিপুরায়। পার্টি অফিস জ্বালানো হয়েছে। অনেককে খুন করা হয়েছে। অত্যাচারিতদের পাশে দাঁড়াতেই আমরা এসেছি। ”
সোমবার টিম পিকে অর্থাৎ আইপ্যাক কর্মীদের আগরতলার একটি হোটেলে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় পুলিশ আটক করে। আইপ্যাক সংস্থা তৃণমূলের হয়ে ভোট বিশ্লেষণ ও ফিল্ডস্টাডি করতে চুক্তিবদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরায় পরবর্তী বিধানসভা ভোটে এই সংস্থা কাজ শুরু করেছে।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, এবার থেকে আগরতলায় ঘনঘন মন্ত্রী, সাংসদদের পাঠাবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্রুত ত্রিপুরা যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মুকুল রায় কবে যাবেন তা নিশ্চিত করা হয়নি।
জানা গিয়েছে, আগরতলা পুর নিগম ভোটেই তৃণমূল কংগ্রেস নতুন করে রাজনৈতিক পদক্ষেপ ফেলতে চায় ত্রিপুরায়। প্রচারে আসতে পারেন খোদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আশীষলাল সিংহ এখনও কিছু স্পষ্ট করেননি। তিনি জানান, শাসক দল বিজেপি ছেড়ে বড় অংশের বিধায়ক, নেতারা টিএমসি দলে ফের আসতে চান। তাঁরা যোগাযোগ করছেন।
ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক সংস্থার কর্মীদের আটক করার এই ঘটনায় ত্রিপুরা সহ দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়াতে শুরু করেছে। ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যের শাসক বিজেপি কোনওভাবেই বিরোধীদের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে দিতে নারাজ।
প্রদেশ টিএমসি সভাপতি আশীষলাল সিংহ জানিয়েছেন, ত্রিপুরাবাসী টানা ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিজেপি আইপিএফটি জোটকে সরকারে বসিয়েছেন। কিন্তু গত তিন বছরে রাজ্যের অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হয়েছে। রাজনৈতিক হামলায় বিজেপি বিরোধী বহু মানুষ জখম, ঘরছাড়া, অনেকে মৃত। খোদ বিজেপির রাজ্য নেতাদের অনেকেই দল ছেড়ে টিএমসিতে যোগ দিতে তৈরি। আগামী কয়েকমাসে ত্রিপুরায় ফের টিএমসি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
২ বছর পর সরগরম ১০ জনপথ, সোনিয়ার ‘মমতা’ সাক্ষাতে বিরোধী জোটের গেমপ্ল্যান
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা ভোটের আগে ত্রিপুরায় বিরোধী দল কংগ্রেস ত্যাগ করে হেভিওয়েট বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের নেতৃত্বে বিধায়করা টিএমসিতে যোগ দিয়েছিলেন। ত্রিপুরা বিধানসভায় তৃণমূল প্রধান বিরোধী দল হয়েছিল। পরে এই বিধায়করা টিএমসি ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপি হয় প্রধান বিরোধী দল। নির্বাচনে সিপিআইএম পরাজিত হয়। সরকার গড়ে বিজেপি জোট।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে পরপর তিনবার সরকার গড়ার পরেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় সরকার গড়তে ততপর। তাঁর নির্দেশে পি কে টিম ত্রিপুরায় ভোট পরিসংখ্যান ও টিএমসির হয়ে মাঠে নামার আগেই বিতর্ক। টিএমসির অভিযোগ, গত ২১ জুলাইয়ের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বার্তা শোনানোর অনুষ্ঠান বাতিল করতে অযথা সমর্থকদের হয়রানি ও গ্রেফতার করেছে বিজেপি সরকার।
অন্যদিকে বিজেপি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে বিজেপির অভ্যন্তরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ভূমিকা নিয়ে বিক্ষোভ চরমে। গুঞ্জন, একাধিক বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে ফিরতে তৈরি। তবে তারা এ বিষয়ে মুখ খুলছেননা। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রাস্তা খুলে রেখেছেন উপজাতি স্বশাসিত এলাকায় (ADC) সদ্য বিপুল জয়ের কাণ্ডারি তিপ্রা মথা দলের প্রধান রাজা প্রদ্যোত দেববর্মা।
উপজাতি এলাকার ভোটে তাঁর দল বিজেপি ও সিপিআইএমকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে। বোর্ড হাতছাড়া হয়েছে সিপিআইএমের। তাদের দখলে একটি আসনও আসেনি। কংগ্রেসও নিশ্চিহ্ন।
রাজনৈতিক এই পরিস্থিতির মধ্যে টিএমসি পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অপর বাংলাভাষী প্রধান রাজ্য ত্রিপুরায় সরকার গঠনে মরিয়া। পশ্চিমবঙ্গের মতো ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর কে দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা। তবে ত্রিপুরা দখলে বিজেপি ত্যাগ করে ফের টিএমসি তে আসা মুকুল রায় বড় ভূমিকা নিচ্ছেন বলেই জানা গিয়েছে।