পুর নির্বাচন : সিএএ-এনআরসি ইস্যুতে ব্যাকফুটে বিজেপি, পিকে ম্যাজিকে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল

নির্বাচন যুদ্ধে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোটও। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দেয় গেরুয়া শিবির। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে জনভিত্তিও বাড়াতে সক্ষম হয়। রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে উঠেও আসে।

||দিলীপ রায় ||

রাজ্যের ১১০ পুরসভার নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু করেছে শাসক ও বিরোধী শিবির।যদিও বিজেপি ইতিমধ্যেই নির্বাচনের দিন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে। সিএএ-এনআরসি ইস্যুতে বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও লড়াইয়ের নয়া কৌশল তৈরির প্রস্তুতিতে আরও কিছুটা সময় চাইছে গেরুয়া শিবির।

অন্যদিকে, নির্বাচন যুদ্ধে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোটও। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দেয় গেরুয়া শিবির। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে জনভিত্তিও বাড়াতে সক্ষম হয়। রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে উঠেও আসে।

ক্রমবর্ধমান জনভিত্তির উপর ভর করেই লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ১৮ আসন ছিনিয়েও নেয় বিজেপি।কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) আনার পর এবং দেশ জুড়ে এনআরসি করা হবে ঘোষণার পর সেই জনভিত্তি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।

আরও পড়ুনঃ প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ, শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসুর জীবনাবসান, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

সারা দেশ সহ এরাজ্যে সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রবল বিক্ষোভের পাল্টা এর সমর্থনে সেভাবে প্রচার করতেও ব্যর্থ হয় বিজেপি।সিএএ-র সমর্থনে বিজেপির সংকল্প যাত্রায় স্বল্পসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে স্পষ্ট হয় যে, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যে জনভিত্তি গড়ে উঠেছিল বিজেপির, সিএএ-এন আরসি ইস্যুতে তা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু, লকেট চ্যাটার্জিদের শরীরী ভাষা ও মুখের ভাষাকেও গ্রহণ করতে পারছেন না বাংলার মানুষ।

অন্যদিকে, দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের দুর্নীতি ও মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ফলে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় জনভিত্তি হারিয়েছিল তৃণমূল। যার খেসারত হিসাবে লোকসভা ভোটে হারিয়েছে ১৮ আসন। এরপর বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গনে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)-কে যুক্ত করে তৃণমূল।

শুরু হয় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। পিকে-র কৌশলে ধীরে ধীরে হলেও বেশ খানিকটা ঘুরে দাড়ায় তৃণমূল।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী, খাদ্য সাথী, স্বাস্থ্য সাথী, সমব্যথি সহ সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিকে পিকে-র টিম জনগণের সামনে আরও ভাল ভাবে তুলে ধরে।

এর ফলে বিধানসভা উপনির্বাচনেও ভাল ফল করে তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জনভিত্তি যেখানে ছিল, তার থেকে এখন অনেক ভাল অবস্থায় থাকলেও বহু এলাকায় রয়েছে গোষ্ঠিদ্বন্দ্বের কাঁটা। সেই কাঁটা দলকে ক্ষতবিক্ষত করলে তার প্রভাব ভোটে পড়তে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

লোকসভা নির্বাচনে জোট করে বাম-কংগ্রেস নির্বাচনে নামলেও সার্বিক জোট হয়নি। কিন্তু আশাবাদী নেতারা বিধানসভা উপনির্বাচনে জোট করে ঝাপিয়ে পড়লেও ভোটারদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাদের এরপর মনে হয়েছে, ভোটের সময় কেবলমাত্র জোট করলে হবে না।

আরও পড়ুনঃখুলে দেওয়া হল কংগ্রেসের পতাকা, ব্যাপক চাঞ্চল্য মালদায়

বিভিন্ন ইস্যুতে যৌথ কর্মসূচি নিতে হবে। সেভাবে বাম-কংগ্রেস জোট এগিয়ে গেলেও এরা তৃণমূল ও বিজেপির কতটা বিকল্প শক্তি হয়ে উঠবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

রাজ্যের ৬০ শতাংশ এলাকা জুড়ে হবে পুরসভা নির্বাচন। কলকাতা ও হাওড়া পুরসভা ছাড়াও রাজ্যের ১০৮ পুরসভায় ভোট হবে। ফলে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এই নির্বাচনকে সেমিফাইনাল বলেই মনে করা হচ্ছে।

কেউ কেউ মনে করছেন এটা হল ‘মিনি জেনারেল ইলেকশন’। যে কারণে সব দলই সংগঠনের ত্রুটিবিচ্যুতি মেরামত করে ভোটযুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে। যদিও এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলই। কারণ, সিএএ-এনআরসি ইস্যু গেরুয়া শিবিরকে অনেকটাই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট