তৃণমূলের বাড়বাড়ন্তে নিষ্ক্রিয় হচ্ছে কংগ্রেস
শুভজিৎ চক্রবর্তী
জুলাই মাসের শেষের দিকে ১০ জনপথে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধীও। বৈঠকের পর ১০ জনপথে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর ছবি দেখে অনেকেই বিশ্লেষণ করেছিলেন এবারের বিরোধী ব্যাটন মমতার হাতে।
কিন্তু কংগ্রেসের মতো বৃহত্তর দলকে সঙ্গে নিয়ে জোটের সমীকরণ করতে গেলে বেশ কিছু জায়গায় ঠোক্কর খেতে পারেন মমতা। তাই একের পর এক নেতাদের তৃণমূলে এনে কঠিন সমীকরণের সরলীকরণ করতে চাইছে তৃণমূল৷
শনিবার দুপুরে বাবুল সুপ্রিয়ের ফুলবদলে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। দিন কয়েক আগে মোদি কেবিনেটের সদস্য ছিলেন। আর মন্ত্রক হারাতেই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর ভরসা রেখে ভারতের যে কেউ যে কোনও দলের সদস্য হতেই পারেন।
কিন্তু তৃণমূলের এই বাড়বাড়ন্তে ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হচ্ছে কংগ্রেস। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, পুর্ব ভারতের একাধিক প্রদেশে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে দেশের সবচেয়ে পুরাতন দল।
একেবারে নির্দিষ্ট করে বললে পশ্চিমবঙ্গে গত ১০ বছর ধরে কংগ্রেস নেতারা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি সেই তালিকা বৃদ্ধি পেয়েছে ত্রিপুরায়। কংগ্রেস শিবিরের অন্যতম সৈনিল সুবল ভৌমিকের দলবদল করা।
তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব। তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য হতে চলেছেন তিনি। এমনকি ত্রিপুরায় একাধিক বিজেপি বিধায়ক সহ দলীয় নেতারাও তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছে। এতেই প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসের অস্তিত্ব নিয়ে।
একই সুরে তাল মিলিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারাও। সর্বভারতীয় স্তরে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বিজেপির বিকল্প যে তৃণমূল এমনটাই ধরে নিচ্ছেন অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরে একে একে তৃণমূলে যোগদান করছেন বিজেপি নেতারা।
আসানসোলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেবেন, রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী বাবুল, তুুমুল জল্পনা
এর মধ্যে অনেকের রাজনৈতিক উলোপুরাণ ঘটছে। এতে ২৪ এর দিকে তাকিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে সাহায্য করছে। জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হিসাবে মমতা উঠে আসলেও মানুষের কাছে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এর ফল কী হতে পারে? রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনার ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে। কংগ্রেসকে কয়েক মেইল দূরে রেখে অনেকেই সমাজবাদী পার্টিকে এগিয়ে রাখছেন। ক্ষমতায় থাকলেও পাঞ্জাবে অন্তঃদ্বন্দ্বের জেরে ফল খারাপ হতে পারে কংগ্রেসের। এগিয়ে আসতে পারে আকালি দল এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টির জোট।
আবার ত্রিপুরায় বাম অথবা তৃণমূলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে তাঁরা। কংগ্রেসের এই কঠিন সময়ে ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন কানহাইয়া কুমার এবং প্রশান্ত কিশোর। কংগ্রেস সূত্রে খবর, সেই প্রক্রিয়া আটকে রয়েছেন দলের হাইকম্যান্ড নির্বাচন নিয়ে।
শোনা যাচ্ছে দলের “মরা গাংয়ে বান” ডাকতে রাহুল গান্ধীর হাত ধরে যোগদান করতে পারেন দুই তরুণ মহারথী। কিন্তু তাতে কী ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে? সেই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।