তৃণমূলের বাজি ত্রিপুরা: যোগ্যতার বিকল্প হয় না ; রাজীবকে গুরুদায়িত্ব সঁপে বার্তা মমতা- অভিষেকের

সহেলী চক্রবর্তী

কথায় বলে জহুরী সোনা দেখলেই চিনতে পারেন। তেমনি লড়াকু নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক লহমায় চিনে ফেলেন কোন নেতার লড়াই করার ক্ষমতা ঠিক কতটা। অর্থাৎ অতীত ভুলে নতুন করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও প্রমাণ করে দিলেন ‘রাজনীতির সোনা’ চিনতে তিনি আজও ভুল করেননি।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে রবিবারের বারবেলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে নতুন করে তৃণমূলে রাজনৈতিক অভিষেক ঘটল রাজীবের। যদিও তার যোগদানের সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছিলেন অনেকে। যোগদানের কয়েকঘন্টার মাঝেই ত্রিপুরা তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটিতে নামও উঠে গেল তাঁর।

সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ঘোষণা হওয়ার পরেই ত্রিপুরায় পৌঁছে যান রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। জল্পনা ঘনীভূত হতে শুরু করে। তাহলে কি ত্রিপুরার মাটিতেই হবে মেগা যোগদান? যদিও সেই জবাব সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন রাজীব।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বঙ্গ বিজয়ের পর যেকোনো মূল্যে বিপ্লব দেবের গদি ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ত্রিপুরার মাটিতে ‘বিপ্লবের’ ডাক দেয় তৃণমূল। যেকোনো জায়গায় সংগঠন তৈরি করে পরিবর্তন ঘটাতে গেলে যুব নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতি করার সুবাদে সেইকাজে পোক্ত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

৩১ অক্টোবর: ৯ মাসের মাথায় মোহভঙ্গ, “অভিষেক আসছে, বিপ্লব দেব কাঁদছে”- স্লোগানে ঝড় রাজীবের

ক্লিনচিট রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন মন্ত্রিত্ব। সেচ থেকে বন সবেতেই তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ম্যানেজমেন্টের স্কলার স্টুডেন্ট রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

জানা যাচ্ছে, ত্রিপুরায় সংগঠন তৈরির কাজে দল দায়িত্ব দিচ্ছে রাজীবকে। ত্রিপুরা পুর নির্বাচন মিটলেই বিধানসভা নির্বাচনের ঘণ্টা বেজে যাবে। তার আগে ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভার নির্বাচনও রয়েছে।

গোয়া- মেঘালয়- উত্তরপ্রদেশ- ত্রিপুরায় পা বাড়িয়েছে তৃণমূল। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাজে লাগাতে চাইছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো। ত্রিপুরার মাটি থেকে বিপ্লব বধের নব সূচনা হবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নেতার হাত ধরে।

রাজনৈতিকভাবে তার প্রতিটি স্টেপ অত্যন্ত পরিমার্জিত। ১০ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় থাকার সুবাদে প্রশাসনিক দক্ষতা এবং রাজনৈতিক দক্ষতা ও তাঁর ইমেজকে ত্রিপুরার মাটিতে কাজে লাগাতে চাইবে দল এটাই স্বাভাবিক।

তাই দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ত্রিপুরার মাটিতে নামিয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বোঝাতে চাইছে যোগ্যতার কোন বিকল্প হয় না। পাশাপাশি বুঝিয়ে দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত
সততা সব রাজনৈতিক নেতাদের থাকেনা।

স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ইমেজকে অত্যন্ত সন্তর্পনে বরাবরই ধরে রেখেছিলেন রাজীব দলের ভেতরে ও বাইরে। ত্রিপুরা রাজ্যে সুদীপ রায় বর্মন এবং প্রদ্যুৎ কিশোর মানিক্যর মতো নেতার বর্তমানে জনপ্রিয়তা অপরিসীম।

পাশাপাশি মানিক সরকারের মতো তুখোড় বামনেতা ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং দীর্ঘদিনের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সুবাদে বিধানসভা নির্বাচন হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনের সারিতে নামিয়ে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিতে চাইছেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং সৎ ব্যক্তিদের সব সময় তিনি গুরুত্ব দিয়ে আসেন।

ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান ও তার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতি-কৃষ্টি সবকথা মাথায় রেখেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামব্যাক চমকে দিয়েছে সকলকে।

সম্পর্কিত পোস্ট