বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা কিছুই শেখায়নি, তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে আরেক নির্বাচনের পথে বাংলা

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: সদ্য শেষ হওয়া বছরে বিধানসভা নির্বাচনের পর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বীভৎসতার সাক্ষী থেকেছে রাজ্যবাসী। ফের আরেকটি ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলার মানুষ। এরইমধ্যে চোখ রাঙানো শুরু করেছে ওমিক্রন।

রাজ্যে এক সপ্তাহে সংক্রমনের সংখ্যা ৬-৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবু ভোট পিছবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গতবছর মার্চ-এপ্রিল মাস জুড়ে বিধানসভা নির্বাচনের জেরেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রাজ্যে আছড়ে পড়েছিল বলে জানান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করোনা বিধি মানার নির্দেশ থাকলেও কোনও রাজনৈতিক দলই তা মেনে চলেনি। কে কত মানুষের জমায়েত করতে পারে বরং তার প্রতিযোগিতা করে গিয়েছে। প্রার্থীদের পাশাপাশি দলীয় কর্মী-সমর্থক কারোর মুখেই সেই সময় মাস্ক দেখা যায়নি।

সেই ভোটের পরিণাম যে কি হয়েছিল তার সাক্ষী আছে সকলে। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে মারণযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। বোধহয় এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি সেই সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয় পাননি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু শিক্ষা নেয়নি রাজনৈতিক দলগুলো।

এমনকি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান‌ও এক্ষেত্রে যাবতীয় সর্তকতা উড়িয়ে দিয়ে পুর ভোট করানোর দাবিতে অনড়! অথচ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন অতীতের সব করোনা ভ্যারিয়েন্টের থেকে অধিক সংক্রামক। ইতিমধ্যেই ইউরোপ ও আমেরিকায় সে তাণ্ডব শুরু হয়েছে। ভারতও পিছিয়ে নেই। খুব দ্রুত ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পুরনো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট‌ও আছে।

বছরের শুরুতেই বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে দুর্ঘটনা, পদপৃষ্ট হয়ে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু

গতবছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখিয়ে দিয়েছিল রাজ্য সহ সমগ্র দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। সেই সময় অভিযোগ উঠেছিল অসংখ্য মানুষ অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন, ওমিক্রনের জেরে ভারতের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে।

এই যেকোনও ধরণের জমায়েতে দ্রুত লাগাম টানার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা পুরোপুরি লকডাউনের কথা না বললেও মানুষকে কনটেইনমেন্ট করার কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হওয়া মানেই অবধারিতভাবে জমায়েত হবে।

বিশেষ করে এটি যেহেতু স্থানীয় স্তরের ক্ষমতা দখলের লড়াই, তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আরও বেশি করে ভোট ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। সদ্য শেষ হ‌ওয়া কলকাতা পুরভোটে সেটাই দেখা গিয়েছে।

সব সময় নজরে থাকা কলকাতা পুরসভার নতুন বোর্ডের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হেভিওয়েট নেতারা যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানেনি, সেখানে রাজ্যের বাকি জায়গায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এতটা আশা না করাই ভালো।

এদিকে রাজ্য তথা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে সবে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে অর্থনীতি। এই অবস্থায় সামান্য বিধিনিষেধ জারি করে যদি পরিস্থিতি সামলে নেওয়া যায় তাহলে হয়তো খুব বড় ধাক্কা লাগবে না অর্থনীতিতে।

কিন্তু নির্বাচনের জন্য যদি সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে তবে ফের লোকাল ট্রেন-বাস বন্ধের দিনগুলো ফিরে আসবে। তাতে রাজনৈতিক নেতাদের তেমন কিছু একটা না গেলেও, সাধারণ মানুষের জীবনধারণ করাই দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। আর কত সহ্য করবে আমজনতা? রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতা দখলের মোহ ছেড়ে এবার কী একটু মানুষের কথা ভাবতে পারে না?

বেশ কয়েকটি পুর নিগম সহ রাজ্যের যে শতাধিক পুরসভা নির্বাচন বাকি আছে সেগুলিতে এখনই ভোট করানোর দরকার পড়তো না, যদি রাজ্য সরকার সময়ে ভোট করাতে রাজি থাকত। কিন্তু এক্ষেত্রে দেরি যখন হয়েছেই তখন আরেকটু দেরিই না হয় হবে, মানুষের জীবন-জীবিকা আগে। কিন্তু কে শুনবে এ কথা! অত‌এব আরেক ভয়াবহ সময়ের মুখোমুখি হ‌ওয়ার জন্য আগে থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হও হে বঙ্গবাসী।

সম্পর্কিত পোস্ট