সিলভেরলাইন কি কেরলের নন্দীগ্রাম হবে? দলের সতর্ক বার্তা বিজয়নকে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি বাংলা তো বটেই, বোধহয় সারা দেশের মানুষের মনে আজও অক্ষয় হয়ে আছে। আর হবে নাই বা কেন, প্রবল প্রতাপশালী বামফ্রন্ট সরকারের দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসন শেষ হওয়ার পিছনে এই নন্দীগ্রাম আন্দোলনকেই প্রধান অনুঘটক হিসেবে মনে করা হয়। এবার আরেক বাম শাসিত রাজ্য কেরলে সেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ছায়া!
২০২১ এর বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বামেরা শূন্য হয়ে গেলেও কেরলে রেকর্ড গড়ে তারা ক্ষমতা ধরে রেখেছে। বর্তমানে দেশের মধ্যে এই একটি রাজ্যেই বামেরা সরকারে আছে। কিন্তু ৫৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলভারলাইন রেল প্রকল্প ঘিরে সে রাজ্যে অশান্তি ক্রমশ দানা বাঁধছে।
৬০ হাজার কোটি টাকার এই রেল প্রকল্প কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠার কথা। রাজ্যের রাজধানী তিরুবন্তপুরম থেকে কাসারগড় পর্যন্ত সেমি হাইস্পিড ট্রেন চলাচলের জন্য এই স্বপ্নের প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
কিন্তু এই রেল প্রকল্প যে এলাকা দিয়ে গেছে সেগুলি অনেকাংশেই আদিবাসী অধ্যুষিত। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ গাছগাছালি আছে ওই এলাকায়। প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হলে একদিকে যেমন আদিবাসীদের উচ্ছেদ করতে হবে, তেমনই পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
এই পরিস্থিতিতে আদিবাসীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন তারা জমি দেবে না। সে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই রেল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমে পড়েছে।
পাহাড়ের রাজনীতিতে তৃণমূলের টেক্কা হতে চলেছেন বিনয় তামাং?
রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ এই রেল প্রকল্প চাইছেন না। মূলত পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন। সাধারন মানুষের মনোভাব বুঝে সিপিএমের বিভিন্ন এরিয়া কমিটি এই রেল প্রকল্প বিরোধী প্রস্তাব নিতে শুরু করেছে। তারা ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্বকে সাবধান করে দিয়ে প্রকল্প স্থগিত করার একাধিক চিঠি পাঠিয়েছে। এই রেল প্রকল্প বাতিল করার পক্ষে রাজ্য সিপিএমের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও। কারণ তাদের আশঙ্কা সিলভেরলাইন রেল প্রকল্প নিয়ে এগোতে চাইলে তা ‘কেরলের নন্দীগ্রামে’ পরিণত হতে পারে!
বিরোধীদের পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে এই প্রবল আপত্তি ভাবিয়ে তুলেছে পিনারাই বিজয়নকে। তার উপর শরিক সিপিআই প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে বামফ্রন্টে আলোচনা না করেই এই প্রকল্পে হাত দিয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে নন্দীগ্রামের পেট্রোকেমিক্যাল হাবকে কেন্দ্র করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার যে অবস্থায় পড়েছিল, ঠিক তারই ছায়া দেখা যাচ্ছে কেরলে। এখন দেখার বাংলার ভুল থেকে শিক্ষা নেয় কিনা দেশের একমাত্র বাম শাসিত রাজ্যটি।