মমতার জন্মদিন পালনে যাদের এত হুল্লোড়, তারা সত্যিই কী শ্রদ্ধা করেন অগ্নিকন্যাকে!

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ। সকলের প্রিয় দিদি বুধবার সকাল থেকেই জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভেসে যাচ্ছেন। তাঁকে আমারাও শুভেচ্ছা জানাই।

দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের বর্তমান বাড়িতেই ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। ছোটবেলায় বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন তিনি। তাঁর জীবনের এই লড়াইয়ের গল্প আজ বাংলার প্রতিটি মানুষ জানে। এই বছর ৬৭ তম বর্ষে পা দিলেন তিনি। তবে গত কয়েকদিনের মতো এদিনও প্রকাশ্যে আসেননি মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজে বা তাঁর দফতরের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস করোনা আক্রান্ত হ‌ওয়ার পর থেকেই আর নবান্নে আসছেন না মুখ্যমন্ত্রী। প্রকাশ্যেও দেখা যায়নি। বরং তাঁর একের পর এক কর্মসূচি গত পাঁচ দিনে বাতিল করা হয়েছে। এই অবস্থায় তৃণমূল নেত্রী সুস্থ থাকুন এটা তাঁর সমর্থক থেকে বিরোধী, সকলেই চাইছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানেই তৃণমূল। বুধবার তাঁর জন্মদিনের দিন যথারীতি আবেগে ভেসে গিয়েছে শাসক দলের কর্মীরা। উৎসাহের আতিশয্যে মমতা সরকারের‌ই জারি করার বিধি নিষেধ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে।

তবে নিচুতলার কর্মীরাই শুধু নয়, কোথাও কোথাও বিধায়ক পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারি নির্দেশিকার তোয়াক্কা না করে মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের জন্য হাসপাতালে মধ্যে ঢুকে পড়েছেন! বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের এই আচরণে যে চিকিৎসক এবং রোগীরা ভয়ঙ্কর বিপদে পড়তে পারেন তা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা ছিল বলে মনে হয় না।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আসলে মমতার তৈরি মিথ, এতে উন্নয়নের নামগন্ধ নেই!

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রতিদিন একগুচ্ছ চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় শাসক দলের কর্মীদের অতি উৎসাহ আরও বিপদ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের‌ই একাংশ। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের এই অতি উৎসাহে বেশ ক্ষুব্ধ।

শুধু কি তাই, অনেক জায়গাতেই দেখা গেল দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বড়োসড়ো জামায়াত করে মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিনের কেক কাটা হচ্ছে। কোথাও আবার বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান‌ও হয়েছে। এতে একেতো করোনা সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে, সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে এটা কী সত্যিই আন্তরিকতা? নাকি দলনেত্রীর জন্মদিন পালনের মাধ্যমে নিচুতলার সংশ্লিষ্ট নেতা শক্তি প্রদর্শন করছেন?

এই প্রশ্ন একটু অদ্ভুত মনে হলেও ভেবে দেখুন তো, ওই সংশ্লিষ্ট নেতারা নিজের মা-বাবার জন্মদিন পালন করেন? আচ্ছা, বাদ দিন। তাঁদের জন্মদিনের তারিখটুকু মনে রাখেন কি? অন্তত সেই দিন সকালে একটু শুভেচ্ছা জানালে বয়স্ক মা-বাবারও ভালো লাগতে পারে এই বোধ তাঁদের মধ্যে দেখা যায়? বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন, উত্তর ‘না’ পাবেন!

কিন্তু দলনেত্রীর জন্মদিন পালনের জন্য উফ কী ঘটা! অথচ নির্বাচনে টিকিট না পেলে এই দলনেত্রীর বিরুদ্ধেই কুৎসিত থেকে কুৎসিততম শব্দ উচ্চারণ করতে বিন্দুমাত্র জিভ কাঁপে না এইসব তৃণমূল নেতাদের একাংশের।

সত্যি বলতে, এঁরা আদৌ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা করেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে! তাই যদি করতেন তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিষেধাজ্ঞা মেনে বাড়িতে ব্যক্তিগত স্তরেই তাঁর এবারের জন্মদিন পালন করতেন। রাজ্যের বর্তমান করোনা সংক্রমণ নিয়ে বারেবারে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম থেকেই তিনি সকলকে মাস্ক পরতে বলছেন।

বিধানসভা নির্বাচন হোক বা হালের প্রশাসনিক বৈঠক, সব সময় মাস্ক পড়ে থাকতে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যে সমস্ত দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে প্রকৃত শ্রদ্ধা করবেন তাঁরা কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মাস্ক পরা দেখে যথেষ্ট উদ্বুদ্ধ হবেন।

তৃণমূলের একসময়ের চাণক্য মুকুলের হল কী? ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে কিন্তু

কিন্তু বিধিবাম, যে সমস্ত নেতাকর্মীরা তাঁর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত ক্ষমতা যাহিযে মেতে উঠলেন তাঁদের বেশির ভাগকেই মাস্ক পড়তে দেখা যায় না। এমনকি রাজ্যের পরিস্থিতি অতি সঙ্কটজনক হয়ে পড়া সত্ত্বেও তাদের হুঁশ নেই।

পরিশেষে একটাই কথা বলার, লোকদেখানো উপাচার নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো লড়াকু সংগ্রামী-নেত্রীকে প্রকৃত শ্রদ্ধা করতে হলে আগে নিজের অন্তর পর্যবেক্ষণ করুন এই সব হুজুগে তৃণমূল নেতারা। তাহলেই প্রকৃত সম্মান জানানো হবে বাংলার অগ্নিকন্যাকে। আরও একবার, ভালো থাকুন মমতা।

সম্পর্কিত পোস্ট