Bengal BJP Marichjhapi Abhijan : বিকৃত ইতিহাসে ভরসা রেখেই আজ মরিচঝাঁপিতে যাচ্ছে বিজেপি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ফের রাজ্য রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে স্মৃতির অতলে চলে যাওয়া মরিচঝাঁপি। যদিও ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই মরিচঝাঁপি ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) গণহত্যা নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল তৃণমূল সরকার কিন্তু তার রিপোর্ট আজও প্রকাশ্যে আসেনি! যদিও এই মরিচঝাঁপি কাণ্ডের জন্য রাজ্যের প্রাক্তন দাপুটে মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় সহ এক ঝাঁক সিপিএম নেতাকে কাঠগড়া তোলা হতো।
বলা হতো তাঁরা নাকি নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিলেন মরিচঝাঁপিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan )। এখানেই প্রশ্ন, তদন্ত কমিশন গঠন করলেও তার রিপোর্ট কেন এখনও প্রকাশ্যে এল না? তবে কি তদন্ত কমিশন এই সিপিএম নেতাদের ক্লিনচিট দিয়েছে? তাই ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার? উত্তর নেই। এরই মাঝে ধামাচাপা পড়ে যাওয়া মরিচঝাঁপিকে হাতিয়ার করে হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে চাইছে বিজেপি।
মহাবিতর্কিত মরিচঝাঁপির স্মৃতি উস্কে দিয়ে ৩১ জানুয়ারি অর্থাৎ সোমবার সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপটিতে যাচ্ছে রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিদল। রাজ্য বিজেপির এসসি মোর্চার প্রধান সুদীপ দাস ও আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের নেতৃত্বে আট-দশজনের একটি প্রতিনিধি দলের সেখানে যাওয়ার কথা। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় পৃথকভাবে মরিচঝাঁপি দিবস পালন করবে বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুগলিতে মরিচঝাঁপি ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) দিবসের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। বিজেপির বার্তা পরিষ্কার, পূর্ববঙ্গ থেকে আগত হিন্দু উদ্বাস্তুদের সঙ্গে চরম অন্যায় করা হয়েছিল মরিচঝাঁপিতে। সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু ভোট এককাট্টা রাখা। একইসঙ্গে বিধানসভার মহাবিপর্যয় কাটিয়ে বামেরা যে একটু একটু করে উজ্জীবিত হচ্ছে তা গোড়াতেই নির্মূল করে দেওয়া।
Bengal BJP Marichjhapi Abhijan -কিন্তু ঠিক কি হয়েছিল মরিচঝাঁপিতে?
মরিচঝাঁপির ঘটনার বীজ লুকিয়ে ছিল দেশ ভাগের মধ্যে। অবাস্তব ও অপরিকল্পিত উপায়ে দেশ বিভাজন এবং তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে সংখ্যাগুরু মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার হিন্দু উদ্বাস্তুরা দলবেঁধে ভারতে ঢুকতে শুরু করেন।
এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সুসংহত উদ্বাস্তু পুনর্বাসন নীতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেস সরকার এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এরই মাঝে এসে পড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ফলে পশ্চিমবঙ্গের উপর উদ্বাস্তুদের চাপ আরও বেড়ে যায়।
কেন্দ্রের ব্যর্থতার জেরেই এবং পশ্চিমবঙ্গে স্থান সঙ্কুলানের অভাবে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুকে বাংলার বদলে মধ্য ভারতের পাথুরে জঙ্গলাকীর্ণ দণ্ডকারণ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জায়গাটি তৎকালীন মধ্যপ্রদেশ ও কিছুটা ওড়িশার অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীকালে রাজ্য বিভাজনের ফলে এই উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগই ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা হন। তবে অনেকেই আশেপাশের রাজ্যগুলিতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করেন।
দণ্ডকারণ্যের রুক্ষ মাটিতে না ছিল চাষাবাদের সুযোগ, না তেষ্টা মেটানোর পানীয় জলটুকু ভালোভাবে পাওয়া যেত। বলা যেতে পারে একরকম গরু-ছাগলের মতো ধুঁকে ধুঁকে বাঁচছিল এই লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু। স্বাভাবিকভাবেই কৃষিপ্রধান বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গে ফেরার চাহিদা প্রবল হচ্ছিল উদ্বাস্তুদের মধ্যে।
এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছিল ‘উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতি’। এর নেতা ছিলেন সতীশ মণ্ডল। যিনি দেশভাগের সময় ও পরবর্তীকালে একাধিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অভিযুক্ত। বরাবরই এই ব্যক্তি মুসলিম মৌলবাদের পাল্টা হিন্দু মৌলবাদের চাষ করে এসেছেন। উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতি গড়ে ছিন্নমূল মানুষগুলোর উন্নয়নের নামে সাম্প্রদায়িকতার চাষ করতেন।
এদিকে সিপিএমের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছিল তারা বাংলার ক্ষমতায় এলে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন নিয়ে একটি সুসংহত নীতি তৈরীর চেষ্টা করবে। সেই মতো ১৯৭৭ সালের ঐতিহাসিক জয়ের পর রাজ্যে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠা হয়।
এর পর তৎকালীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী রাম চ্যাটার্জী দণ্ডকারণ্য গিয়ে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের পাশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আছে এই কথাও বলেন। তবে এটাও জানান এক্ষুনি পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসার মতো পরিস্থিতি নেই।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই নীতি যথেষ্ট যুক্তি সংগত ছিল। কারণে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তের পুনর্বাসনের কাজ একটি রাজ্য সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের সুসংহত নীতির প্রয়োজন। তবেই শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে উদ্বাস্তুদের জন্য সঠিক পরিকাঠামো গড়ে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভবপর হতো।
এদিকে ততদিনে কেন্দ্রের ক্ষমতায় চলে এসেছে জনতা পার্টির সরকার। যে সরকারের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা লালকৃষ্ণ আদবানি ও অটল বিহারী বাজপেয়ি। কিন্তু জনতা পার্টির সরকার নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাতেই ব্যস্ত ছিল, তাই উদ্বাস্তুদের মানবিক চাহিদার দিকে বিশেষ নজর দিতে পারেনি।
এই টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগ নিলেন সতীশ মণ্ডল, রাইহরণ বাড়ুইরা। তাঁরা দণ্ডকারণ্যের উদ্বাস্তুদের খেপিয়ে ১৯৭৮ সালে ট্রেন ও ট্রাক ভর্তি করে তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসতে শুরু করেন। সেই সময়ে উদ্বাস্তুদের মধ্যে প্রচার করা হয়েছিল সুন্দরবন এলাকায় বিপুল জমি পড়ে আছে, সেখানে গিয়ে নিজেদের চেষ্টায় বসতি স্থাপন করতে হবে। তাহলেই এতদিনের জ্বালা-যন্ত্রণার অবসান ঘটবে।
এদিকে তখন সুন্দরবন এলাকায় আর তিল ধারণের জায়গা নেই। বাকি ফাঁকা এলাকা রিজার্ভ টাইগার প্রজেক্টের অন্তর্গত। সেখানে গাছপালা কেটে বসতি স্থাপন করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সুন্দরবনের যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে জ্যোতি বসুর সরকার।
এই পরিস্থিতিতে হিঙ্গলগঞ্জ-সন্দেশখালির কাছে উদ্বাস্তুদের আটকে দিতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু নিজে গিয়ে উদ্বাস্তুদের ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন। সে সঙ্গে এও জানান কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের আলোচনা শুরু হয়েছে যাতে দণ্ডকারণ্যের আশেপাশেই এই বাঙালি উদ্বাস্তুদের সুষ্ঠুভাবে বসবাসের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়।
তাঁরা যাতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকারেই ভারতে থাকতে পারেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরবর্তীকালে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গিয়েছে এক বড়সড় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সতীশ মণ্ডল, রাইহরণ বাড়ুইরা উদ্বাস্তুদের একটি বড় দলকে সুন্দরবনে নিয়ে যেতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
বেশিরভাগ উদ্বাস্তু রাজ্য সরকারের আবেদন মেনে দণ্ডকারণ্য ফিরে যান। কিন্তু প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির নেতাদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে সরকারি নজরদারি এড়িয়ে হাজির হয় সুন্দরবনের সেই মরিচঝাঁপি দ্বীপে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan )।
জায়গাটি সম্পূর্ণ ঘন জঙ্গলে ভর্তি ছিল। সেই সঙ্গে ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত। তাই সত্ত্বেও সমস্ত গাছপালা কেটে ওই দ্বীপে বসবাস শুরু হয়। এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই গোয়েন্দা মারফত রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের জানতে পারে ওই দ্বীপে একটি সম্পূর্ণ সমান্তরাল অর্থনীতি গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পৃথকভাবে মরিচঝাঁপিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
বয়সের বাধা কাটিয়ে দুই সুপারস্টারকে পলিটব্যুরোয় রাখতে পারে সিপিএম, বাদ পড়বেন তৃতীয়জন
সেখানে ৩০০ সদস্যের এক সশস্ত্র ‘স্বেচ্ছাসেবক’ বাহিনী গড়ে তোলে এই উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতি। ঠিক বিমল গুরুং যেমন দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খা পার্সোনাল তৈরি করেছিলেন। সুন্দরবনের স্থানীয় থানার পুলিশ বেশ কয়েকবার মরিচঝাঁপিতে ঢোকার চেষ্টা করলেও তাদের বাধা দেওয়া হয়।
গোয়েন্দা রিপোর্টে সবটা জানতে পারার পর মাথায় হাত পড়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের। তারা বুঝতে পারে অবিলম্বে মরিচঝাঁপির ঘাঁটি বন্ধ না করলে দেশের অভ্যন্তরে বড়সড় নাশকতা ঘটতে পারে। বলা যেতে পারে ওই দ্বীপে পৃথক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন সতীশ মণ্ডল, রাইহরণ বাড়ুইরা।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই নেতারা কেউ কিন্তু মরিচঝাঁপিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) থাকতেন না। তাঁরা বাংলাদেশের প্রাসাদোপম বাড়ি থেকে নিয়মিত এই দ্বীপে যাতায়াত করতেন। এই বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে বিএসএফ ও অপর প্রান্তে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর একটা ভালো বোঝাপড়া ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের বদলে বাংলাদেশ থেকেই কেরোসিন, খাবার সব পৌঁছছে যাচ্ছিল মরিচঝাঁপিতে। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ পেয়ে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার ঠিক করে যেকোনোভাবে ১৯৭৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে মরিচঝাঁপির ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) এই বেআইনী কার্যক্রম বন্ধ করতেই হবে।
এই ভাবনা অনুযায়ী ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি প্রথম সুসংগঠিতভাবে সেই দ্বীপে ঢোকার চেষ্টা করে সরকারি বাহিনী। তার আগে মাইকে হেঁকে উদ্বাস্তুদের ওই দ্বীপ ছাড়ার কথা বলা হয়। সম্মানের সঙ্গে তাঁদের ত্রাণশিবিরে নিয়ে গিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল।
বলা হয় পরে তাদের দণ্ডকারণ্যে ফেরত পাঠানো হবে। সেখানেই সঠিক নাগরিক পরিষেবা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সমিতির নেতারা কথা না শোনায় সরকারি বাহিনীর ঢোকার চেষ্টা করে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুলিশের ওপর হামলা চালায়। বাধ্য হয়ে পিছু হটতে হয় রাজ্য পুলিশকে।
এদিকে এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পাশের কুমিরখালি দ্বীপেও তাণ্ডব শুরু করে। আশেপাশের এলাকার বৈধ জনপদগুলোকে রক্ষা করতে ৩০-৪০ টি লঞ্চের সাহায্যে ব্যারিকেড গড়ে তোলে রাজ্য প্রশাসন। অবশেষে ৩১ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে ওই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুলিশ ক্যাম্পে সশস্ত্র আক্রমণ করে। বাধ্য হয়ে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে মৃত্যু হয় মরিচঝাঁপির দুই বাসিন্দার। অন্তত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তথ্য তাই বলছে।
এরপর রাজ্য প্রশাসনের কঠোর মনোভাব দেখে মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুরা ধীরে ধীরে সরকারের সহযোগিতায় ওই দ্বীপ থেকে বেরিয়ে আসে। যদিও তাদের এই নিষ্ক্রমণের পথে যথেষ্ট বাধা তৈরি করেছিল সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
মে মাসের মাঝামাঝি যখন মরিচঝাঁপিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা একেবারে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে, তখন এক রাতে ওই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সেখানকার বেশকিছু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অন্ধকারে বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। সেই আগুন রাজ্য পুলিশের কর্মীরাই নিভিয়ে ছিল। এইভাবেই মরিচঝাঁপিতে দেশবিরোধী কুচক্রের আখড়া বন্ধ হয়।
কিন্তু উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির নেতাদের দাবি বা কানাডায় বসে থাকার রস মজুমদারের মতো কল্পনাপ্রবণ ভণ্ড ঐতিহাসিকদের নথি দেখলে মনে হতে পারে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ওই দ্বীপে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan )। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাইহরণ বাড়ুই ৩১ জানুয়ারির পর দাবি করেছিলেন পুলিশের গুলিতে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু সেই তিনি মার্চ মাসে গিয়ে জানান পুলিশের গুলিতে ১২ জন মারা গিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই যারা অসংখ্য মৃত্যুর আতঙ্ক ফেরি করে বেড়ান তাঁদেরই পরস্পর বিরোধী কথায় মৃত্যু তত্ত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অনেকেই আবার বলে থাকেন মরিচঝাঁপিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যু হলেও অনাহারে-অর্ধাহারে অসংখ্য শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই তথ্য অস্বীকার করার নয়। সত্যিই অসহায় অবস্থায় তার আগে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ওই প্রত্যন্ত দ্বীপটিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan )। কিন্তু এর দায় সম্পূর্ণভাবে উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির।
মরিচঝাঁপি মতো একটি প্রত্যন্ত বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসতি গড়ে তুললে সেখানে যে খাবার-দাবার বা পানীয় জলের সরবরাহ ঠিক থাকবে না এটা জানা কথা। তার ওপর সরকারকে তারা ওই দ্বীপে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) ঢুকতে না দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য সামগ্রী রাজ্য থেকে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। তারা চোরাইপথে বাংলাদেশ থেকে যা আনতে পারত তাই খেয়ে বাঁচতে হতো সেখানকার অসহায় মানুষদের।
তাই এই অর্ধাহার, অনাহারে মৃত্যুর ঘটনার দায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের ওপর সেভাবে চাপানো যায় না। যে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল চক্রান্তের জেরে মরিচঝাঁপিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) উদ্বাস্তুদের ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিল তার পরিণাম আজ ভোগ করছে সুন্দরবন। সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
একাধিক প্রাণিবিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন সুন্দরবন একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে যত মানুষের থাকার কথা তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ বসবাস করছেন। তার ছাপ সরাসরি গিয়ে পড়ছে প্রকৃতির উপর। আর তার জেরেই ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে রাজ্যের এই প্রত্যন্ত এলাকাটি।
এবার আসা যাক বিজেপির ভূমিকায়। যে দুই ব্যক্তি এই বিজেপি গঠন করেছিলেন সেই অটল বিহারীষি বাজপেয়ি এবং লালকৃষ্ণ আদবানির ১৯৭৯ সালে মরিচঝাঁপির ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan )ঘটনায় বাংলার বামফ্রন্ট সরকারকেই সর্বতোভাবে সমর্থন করেন।
Bengal BJP Marichjhapi Abhijan
আজ বিজেপি যখন মরিচঝাঁপিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan )যাওয়ার কথা বলছে তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আদবানি-বাজপেয়ির অবস্থানকে অস্বীকার করতে চাইছে এখনকার বিজেপি নেতারা? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের।
বিজেপি আরেকটি অভিযোগ তুলেছে, বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু উদ্বাস্তু বা শরণার্থীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে বামফ্রন্ট সরকার। তাদের কাছে প্রশ্ন যাদবপুর, বাঘাযতীন, বজবজ, হুগলি সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে উদ্বাস্তু কলোনিরগুলো তৈরি করা হয়েছিল সেটা কি তারা ভুলে গিয়েছেন?
সেই উদ্বাস্তু কলোনিগুলিতে নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দিয়ে তাদেরকে নাগরিকের মর্যাদা প্রদান ও পরবর্তীকালে সেই উদ্বাস্তুদের জন্য ধাপে ধাপে সরকারি কোয়ার্টার তৈরি করে দেওয়ার কথা কি জানেন না বিজেপির এখনকার নেতৃত্ব? এইসবই হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। সেই কারণেই একসময় ছিন্নমূল এই অসহায় মানুষগুলো একচেটিয়াভাবে বামফ্রন্টকে সমর্থন করতেন।
গোটা ঘটনাক্রম থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার বিজেপি তার হিন্দু মৌলবাদী চরিত্র বজায় রেখেই রাজনীতি করতে চায়। তাই সতীশ মণ্ডল, রাইহরণ বাড়ুইদের পথ ধরেই তারা মরিচঝাঁপিতে ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan )দেশের মধ্যে গড়ে ওঠা আরেক দেশ তত্ত্বকে বকলমে সমর্থন করে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। অথচ এরাই আবার উগ্র জাতীয়তাবাদের কথা বলে!
বোধহয় সিপিএমের পুনর্জাগরণে ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই রাজ্যের শীর্ষ দখল করা নয়, আপাতত কিভাবে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখা যাবে সেই চেষ্টার জন্যই তারা নতুন করে বামেদের টার্গেট করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে বিকৃত ইতিহাসই ভরসা মুরলীধর সেন ( Bengal BJP Marichjhapi Abhijan ) স্ট্রিটের কর্তাদের।