TMC Candidate List: অনুমোদন ছাড়া কী করে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পেল সোশ্যাল মিডিয়ায়? ঠিকাদার সংস্থার হাতে দল ! ক্ষোভ কর্মী-সমর্থকদের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পুরোভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে চাপানোতর তুঙ্গে। ১০৮ টি পুরসভায় ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী তালিকায় কারা স্থান পাবেন তা নিয়ে ছিল চরম উত্তেজনা। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৈঠক থেকে পৌর ভোট নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আক্রমনাত্মক মেজাজে বলেছিলেন, বিভিন্ন সড়ক ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে সিন্ডিকেট রাজ চলছে এবং বিভিন্ন লোকদের ওপর অত্যাচার নেমে আসছে বলে অভিযোগ তার কাছে এসেছে। তিনি গোটা বিষয়টি রাজ্যের মুখ্য সচিবকে দেখার নির্দেশ দেন।

সেই বৈঠকে মমতা বলেন সাতটি জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার সতর্ক করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই তা প্রকাশ করা হবে। শুক্রবার সকালে আচমকাই জানা যায় আজই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

সেই মতই শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস প্রমূখ। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণার পরেই কিছুক্ষণের মধ্যেই সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হতে শুরু করে একটি প্রার্থী তালিকা। দাবানলের মতো তা ভাইরাল হয়ে যায়।

তারপরই জেলায় জেলায় প্রার্থী তালিকা নিয়ে চরম ক্ষোভ বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। ভাঙচুর থেকে শুরু করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ এমনকি কোথাও কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে পরোক্ষে দল ছাড়ার হুমকি দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হতে থাকেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।

কিন্তু কেন সেই প্রার্থী তালিকা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়? দেখা যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন এবারের প্রার্থী তালিকায় অনেক নতুন মুখের আধিক্য রয়েছে। তবে অনেকেই টিকিট দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে কড়া নজর রাখা হয়েছে যাতে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি টিকিট না পায়। সেইসঙ্গে নজরে রাখা হয়েছে এক ব্যক্তি একপদ নীতিও।

তবে প্রার্থী তালিকায় এগুলোর কোনটার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। উল্টে প্রার্থী তালিকা মন দিয়ে দেখলেই দেখা যাবে কোথাও ভোটের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিধায়কের দাদা, তার স্ত্রী ও পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম। আবার কোথাও রয়েছে কোন একজন দাপুটে নেতার পুত্রবধূর নাম। কোথাও আবার রয়েছে প্রার্থী তালিকায় একইসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নাম। কোথাও আবার নাম রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক বা প্রাক্তন মন্ত্রীর অনুগামীদের নামও।

Northbengal Municipal Election : পুরভোটে উত্তরবঙ্গে বড় ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি

এই ঘটনার পর যখন চারদিকে অশান্তির সূত্রপাত হয় তখনই ময়দানে নামে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতৃত্বরা। ফের তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয় ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের তরফে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমোদিত নয়। শুধু তাই নয় ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট জেলা সভাপতিদের কাছে অনুমোদিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

এই ঘটনার পরই দলের অন্দরে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কেমন করে শাসকদলের অনুমোদন ছাড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হলো? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলের কর্মীরা। সরাসরি সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের পর প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকে সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে আইপ্যাকের পরামর্শে ভোট বৈতরণী পার করে তৃণমূল। তারপর ২০২২ সালের পুরভোটের আগে এই ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে বটেই।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যে দল রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ত্রিপুরা, মেঘালয়, গোয়া এবং উত্তরপ্রদেশে ডালপালা বিস্তার করতে চাইছে সেই দলের সংগঠনের রাস এতটা হালকা হয় কি করে। কিভাবে অনুমোদন ছাড়া চুক্তিবদ্ধ সংস্থা প্রার্থী প্রকাশ করে দেয় তা নিয়ে রীতিমতো শাসক দলকে তুলধনা করেছেন তারা। যদিও এই বেনজির গোলযোগের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি শাসক শিবিরের প্রথম সারির কোন নেতৃত্ব।

উল্লেখ্য, এর আগে শিলিগুড়ি এবং কলকাতা পুরভোটের ক্ষেত্রেও প্রার্থী তালিকায় গরমিল সামনে এসেছিল। পরে গভীর রাতে তৃণমূলের ওয়েবসাইটে সেই তালিকা প্রকাশ করে দল। তাহলে বারংবার একই ধরনের ঘটনা ঘটে কি করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কর্মী-সমর্থকরা। আপাতত দেখার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা কার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে।

সম্পর্কিত পোস্ট