Ashok Bhattacharya CPIM : অশোকের পরাজয়ে স্বস্তির হাওয়া সিপিএমে!

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নিজের ওয়ার্ডে অশোক ভট্টাচার্য হেরে যাওয়ায় বেদনাহত সিপিএমের রাজ্য নেতারা। অশোক ভট্টাচার্য পুরনির্বাচনে হেরে যাওয়ায় খুশি সিপিএম! আসলে অশোক ভট্টাচার্যের শিলিগুড়ি মডেলের মাধ্যমেই বাংলায় কংগ্রেসের হাত ধরাধরি করে চলার পর্ব শুরু হয়েছিল সিপিএমে।

এদিকে বিধানসভা ভোটের পর থেকেই সিপিএমের ভিতরে কংগ্রেস বিরোধী মনোভাব ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ফের যদি শিলিগুড়িতে অশোক ভট্টাচার্য সফল হতেন তবে সিপিএমের অন্দরে জোট বিরোধীরা সমস্যায় পড়ত!

ইতিমধ্যেই সিপিএমের সম্মেলন পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। বলা ভালো তা এখন শেষের পর্যায়। ঠিক এক মাস পর কলকাতায় তাদের রাজ্য সম্মেলন হবে। ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ জেলার সম্মেলন পর্বের পাঠ চুকে গিয়েছে। বেশিরভাগ যায়গায় জোট বিরোধী নেতারা জেলা সম্পাদক হয়েছেন। জেলা কমিটিগুলিতেও একলা চলার ডাক দেওয়া নেতাদের সংখ্যা বেড়েছে। এখন শুধু শেষ ফ্রন্টের মতো রাজ্য সম্মেলন বাকি।

এবার রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে সূর্যকান্ত মিশ্রের বিদায় নিশ্চিত। নতুন রাজ্য সম্পাদক কে হবেন তা নিয়ে তিনজন নেতার মধ্যে জোর দড়ি টানাটানি চলছে। এরমধ্যে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য ও আভাস রায়চৌধুরী জোট বিরোধী বলেই পরিচিত।

Sudip Roy Barman : সুদীপ রায়বর্মনের ঘর‌ওয়াপসিতে উজ্জীবিত কংগ্রেস, হাত মেলাতে পারে তিপ্রা মথার সঙ্গে

অপরদিকে শমীক লাহিড়ী জোটপন্থী শিবিরের অন্যতম প্রধান মুখ। অশোক ভট্টাচার্য এবারেও সফল হলে নিঃসন্দেহে শমীক লাহিড়ীদের হাত শক্ত হত! প্রশ্ন উঠতে পারে অশোক ভট্টাচার্য হেরে যাওয়ায় তবে কি সিপিএমের একাংশ খুশি হয়েছে?

না ব্যাপারটা সেরকম নয়। তবে কমিউনিস্ট পার্টির চিরাচরিত প্রথা মেনেই দলের রাজনৈতিক লাইন নির্ধারণের অশোক ভট্টাচার্যের করাজৎ অনুঘটকের কাজ করবে। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনের পর বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়িতেও দেখা গেল কংগ্রেসের হাত না ধরে একা চলে বামেদের লাভ হয়েছে।

বিধানসভা নির্বাচনের পর তাদের অনেকটাই ভোট বেড়েছে যার অর্থ দাঁড়ায় বামেদের চিরাচরিত ভোটাররা সেই পুরনো লড়াকু মেজাজটা কেউ পছন্দ করছে। যেখানে কংগ্রেসের মতো দক্ষিণপন্থী দলের সঙ্গে কোন‌ও আপস থাকবে না।

সংসদীয় গণতন্ত্রে ভোট বড় বালাই। এখানে রাজনৈতিক লাইন ভোটারদের চাহিদা মেনেই নির্ধারণ করতে হয় না। হলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। একুশের বিধানসভা ভোটে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর আইএস‌এফের  হাত ধরে সম্ভবত সেই ভুলেরই মাশুল চোকাতে হয়েছিল বামেদের।

পরবর্তীকালে বিধানসভা উপনির্বাচন ও বিভিন্ন পুরনিগমগুলির ভোটে দেখা যাচ্ছে আমজনতা বামেদের একলা চলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। অর্থাৎ রাজ্যে বামফ্রন্টের তথা সিপিএমের শিলিগুড়ি মডেলের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে! এখানেই অশোক ভট্টাচার্যের পরাজয়ের সঙ্গে সিপিএমের দলীয় লাইন নির্ধারণের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে।

গতবছরের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম একঝাঁক নতুন মুখকে প্রার্থী করেছিল। তারা সকলেই ভোটের লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হলেও জনমানসে ভালোই দাগ কাটতে পেরেছে। সিপিএমের তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নন্দীগ্রামের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা মীনাক্ষী মুখার্জি।

নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার পরেও মীনাক্ষী যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই তাঁকে ঘিরে বাম কর্মী সমর্থকদের ভিড় বাড়ছে। পুরো নির্বাচনেও তিনি বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করেছেন। তাঁর বাড়ি কুলটিতে, যা আসানসোল পুরনিগমের অন্তর্গত। সেখানে এবার বামেরা তৃতীয় স্থানে লড়াই শেষ করলেও বিধানসভার থেকে ভোট অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পেরেছে।

শুধু তাই নয় সায়নদীপ মিত্র, জামির মোল্লারাও সিপিএমের অন্দরে জোট বিরোধী বলে পরিচিত। যদিও তাদের অপর দুই তরুণ মুখ শতরূপ ঘোষ ও সৃজন ভট্টাচার্য এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের দিকে হেলে আছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে সিপিএমে শতরূপের সেই আগের প্রভাব নেই।

সিপিএমের দলীয় নিয়ম অনুযায়ী বয়সের বাধানিষেধের কারণে এবারে রাজ্য কমিটি থেকে অশোক ভট্টাচার্যের বিদায় নিশ্চিত। কিন্তু তিনি শিলিগুড়িতে সফল হলে জোটপন্থীরা তাঁকে ব্যতিক্রম হিসেবে তুলে ধরে রাজ্য কমিটিতে ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর রেখে দেওয়ার চেষ্টা করত।

তবে অশোক ভট্টাচার্যের পাশাপাশি বয়সের কারণে আরও বেশকিছু সিপিএম নেতাকে রাজ্য কমিটি থেকে বিদায় নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে মীনাক্ষী ও সায়নদীপ মিত্রের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হওয়া একরকম নিশ্চিত।

এদিকে জোটপন্থী বলে পরিচিত মহদ্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ীরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকলেও তারা রাজ্য কমিটিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন বলেই খবর। এখন পর্যন্ত যা হাওয়া তাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ ছাড়া সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে আর কেউই জোটের পক্ষে সওয়াল করবে না বলে খবর।

এক্ষেত্রে সিপিএম যেমন তার পুরনো শ্রেণীর কাছে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে , তেমনই তাদের সেই পুরানো বর্ধমান লাইনে আবার‌ও একবার প্রতিষ্ঠা পেতে পারে দলের রাজ্য সম্মেলনে। বলাই বাহুল্য, মহম্মদ শফিউল্লাহ, হরেকৃষ্ণ কোঙার, বিনয় কোঙার, বিনয় চৌধুরী, নিরুপম সেন, মদন ঘোষদের অবিভক্ত বর্ধমান বরাবর রাজ্য সিপিএমের নীতি নির্ধারণ করেছে।

পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের অন্দরে বর্ধমান লবি বলেই একটা কথা চালু ছিল। এই বর্ধমান লবি বরাবরই কট্টরপন্থী বলে সিপিএমের অন্দরে পরিচিত। তারা যেমন জোতদারদের থেকে জমি কেড়ে নিয়ে ভূমিহীন কৃষকদের বিলি করায় নেতৃত্ব দিয়েছিল, তেমনই অবিভক্ত বর্ধমান জেলা থেকে গড়ে উঠেছিল একের পর এক দুর্বার শ্রমিক আন্দোলন।

দল ক্ষমতায় থাকাকালীন‌ও সিপিএমের বর্ধমান লবির ‘জঙ্গি মেজাজ’ অক্ষুন্ন ছিল। এই বর্ধমান লবি বরাবরই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার বিরোধী ছিল। দেখা যাচ্ছে জেলা ভাগ হলেও তাদের সেই একই অবস্থান বজায় আছে। কট্টরপন্থী নেতা বলে পরিচিত পশ্চিম বর্ধমানের বংশগোপাল চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমানের একঝাঁক তরুণ নেতৃত্বে লড়াইয়ের ফলে একটু একটু করে হলেও নিজেদের হারানো ভোট ফিরে পাচ্ছে তারা।

সামনে বর্ধমান পুরসভার নির্বাচন। শাসক তৃণমূলের দাপটের মধ্যেই সেখানকার ৩৫ টি ওয়ার্ডে এক ঝাঁক নতুন মুখকে প্রার্থী করেছে বামেরা। জেলার অন্যান্য পুরসভাগুলিতেও তারা যথেষ্ট ভালো প্রার্থী দিয়েছে। তাদের দাপটে বিরোধী পরিসর থেকে ক্রমশই ফিকে হচ্ছে বিজেপির  এই পরিস্থিতিতে দুই বর্ধমানের নেতারা হাত মিলিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে জোট বিরোধী প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সিপিএম শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকে কৌতুহলভরে সকলেই তাকিয়ে আছে। তবে দলের নিচুতলার কর্মীদের দাবি মানলে বলতেই হয়, কংগ্রেস সঙ্গ যেমন তাদের ত্যাগ করতে হবে, তেমনই তরুণ তাজা রক্তদের আরও বেশি করে সামনে এগিয়ে দিতে হবে।

শুধু রাজ্য কমিটির শোপিস মেম্বার নয়, বরং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বেশিরভাগ সদস্য এই তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের করা দরকার। কারণ ইতিমধ্যেই এসএফআই-ডিওয়াইএফআইয়ের হাত ধরে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের ঝড় তুলেছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের বয়স্করা পরামর্শদাতার ভূমিকায় থাকুন, কিন্তু নেতৃত্তের ব্যাটন তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিন। এটাই ঠিক হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট