তৃণমূল আমলে বারেবারে অপদস্ত হয়েছে পুলিশ, হঠাৎ তাদেরই কেন বাঁচাতে চাইছে শাসক পক্ষ?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আনিস কাণ্ডে ইতিমধ্যেই এক হোমগার্ড ও দুই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে সাসপেন্ড করেছে সরকার। তারমধ্যে হোমগার্ড ও এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে গ্রেফতারও করা হয়। বৃহস্পতিবার তাদের দু’জনেরই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন উলুবেড়িয়া আদালতের বিচারক।
এরপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাজ্য সরকার ও শাসক দলের পক্ষ থেকে তাদেরকে পুলিশ বাহিনী থেকে কিছুটা পৃথক করে দেখানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। এটা ঠিক হোমগার্ড ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের পরিপূর্ণভাবে পুলিশ বলা চলে না। আবার বাহিনীর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও অস্বীকার করার উপায় নেই।
একটা বিষয় এই কদিনে সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, উপরতলার নির্দেশ ছাড়া ওই হোমগার্ড বা সিভিক ভলেন্টিয়ার কোনও কিছুই করেনি। কারণ নিজের ইচ্ছায় কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা খুব একটা কার্যকরী হবে বলে মনে হয় না।
এক্ষেত্রে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা মনে পড়ছে। যে গুলি চালানোর ঘটনাকে ঘিরে নন্দীগ্রাম আন্দোলন গোটা দেশে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল, এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল, সেই ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছিল গায়ে পুলিশের পোশাক ও পায়ে চটি পড়ে একদল লোক গুলি চালাচ্ছে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ছে। সবটাই হয়েছিল আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে।
সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সিপিএম তাদের ক্যাডারদের গায়ে পুলিশের পোশাক পরিয়ে আন্দোলন ভাঙতে নন্দীগ্রামে পাঠিয়েছিল। তাদের পায়ে হাওয়াই চটি দেখা গিয়েছে। যদিও এই অভিযোগ সত্য কিনা তা এখনও নির্দিষ্ট করে সিবিআই কিছু জানায়নি।
Mamata Banerjee on CBI : একসময় সিবিআইয়ের দাবিতে সোচ্চার মমতা এখন সিবিআই শুনলেই ক্ষেপে যান!
তবে আনিস খান কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার যে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তবে কি নন্দীগ্রামের মতই আনিসকেও খুন করার জন্য উদ্যোগী হয়েছিল শাসক দলের একাংশ? তাই কি নিচু তলার নেতা ও সিভিক ভলেন্টিয়ারকে বলির পাঁঠা করে বাকিরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে চাইছেন?
মনে রাখতে হবে তৃণমূল আমলে বারবার পুলিশকে অপদস্ত হতে দেখেছি আমরা। সে ভোটের সময় গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে তৃণমূল নেতার চালানো গুলিতে পুলিশ কর্মীর মৃত্যুই হোক বা নিউ আলিপুর থানায় টেবিলের নিচে পুলিসকর্মীর আত্মগোপনের ছবি, বিভিন্ন ঘটনায় একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে এই রাজ্যে শাসকদলের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া খুব বড় কোনও কাজ করতে পারে না পুলিশ প্রশাসন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে আনিস খানের মৃত্যুরহস্যে জড়িত বলে অভিযোগ উঠলেও বিধায়ক বা পুলিশ সুপারকে কেন জেরা করা হচ্ছে না। বিশেষ করে আমতার বিধায়কের দিকে যখন নির্দিষ্ট করে অভিযোগের আঙুল উঠছে, তখন গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকারের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ।
একটা কথা স্পষ্ট বলা যায় প্রত্যেক দোষীকে শাস্তি দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সরকারের ক্ষতির বদলে লাভ হবে। তাদের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। প্রমাণ হয়ে যাবে অন্যায় করলে দলের বিধায়ক বা পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্তা, কাউকে রেওয়াত করেন না মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে আনিস খানের মৃত্যুরহস্য যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে তাতে এই ভূমিকাটাই একমাত্র তৃণমূল সরকারের মুখ রক্ষা করতে পারে।