একতরফা পুরভোট ! নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে তৃণমূল
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ত্রিপুরার পুরভোটে সন্ত্রাস হলে গর্জে ওঠে বাংলার শাসক দল। কিন্তু এই বাংলার পুরভোটে যখন বিরোধীরা একই অভিযোগ তোলে তখন ঈশ্বরের মতো তন্ময় নীরবতা ভর করে শাসক নেতাদের! নিয়তির এমনই পরিহাস যে ভোট হওয়ার আগেই রাজ্যের ১০৮ টি পুরসভার মধ্যে ৪ টিতে জিতে গিয়েছে তৃণমূল।
শুধু তাই নয়, প্রায় ১৫ টি পুরসভা এমন অবস্থায় আছে যেখানে আর তিনটি থেকে চারটি ওয়ার্ডে জিতলেই গোটা পুরসভা তৃণমূলের দখলে চলে যাবে! এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমুল জিতবে জেনেও বেশকিছু পুরসভায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কারণ তারা চায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য, যেখানে বিরোধী বলে কিছু থাকবে না।
অপরদিকে বিরোধীরা জিততে পারে এইরকম পুরসভাগুলিতেও তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কারণ পুরসভার ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার অর্থ প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অনৈতিক পথে উপার্জনের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়া!
বিরোধীরা পাল্টা প্রতিরোধের পথে হাঁটলে পুলিশকে ব্যবহার করে মিথ্যে মামলায় তাদেরকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনেক জায়গায় আবার শাসক দলের কর্মীরা বিরোধী প্রার্থীদের বাড়ি ঘিরে রেখেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যজুড়ে একতরফা ভোট হতে পারে বলে বিরোধীদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা।
এই আশঙ্কা সত্যি করে যদি পুরভোট পুরোপুরি গায়ের জোরে করিয়ে নেয় শাসক দল তবে আগামী দিনে তারাই বড় বিপদে পড়বে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আমজনতার আস্থা থাকলেও তৃণমূলের নিচুতলার নেতাকর্মীদের অনেককেই সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না। বিভিন্ন ঘটনায় মানুষের এই মনোভাব দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।
বিশেষ করে পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের নিয়ে বিতর্ক সবচেয়ে বেশী। তাই স্বচ্ছ পথে পুরভোট হলে কোন নেতাদের মানুষ পছন্দ করছে না সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারত তৃণমূল। সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তারা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে পারত। পাশাপাশি ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনেও দলের ফ্রেশ ভাবমূর্তি নিয়ে তারা ময়দানে নামত।
২০১৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গা জোয়ারির মাসুল ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে দিতে হয়েছিল তৃণমূলকে। এবারের পুরভোটে যদি একই ঘটনা ঘটে তার প্রভাব আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে পড়তে পারে।
পাশাপাশি এবারের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিতর্ক প্রভূত। এদিকে জেলার বিভিন্ন পুরসভা গ্রাম লাগোয়া। সেখানকার অনেক পুর এলাকার অনেক নেতার বিপুল প্রভাব আছে গ্রামে। তাই এবারের পুর নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে যে নেতারা ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাবোতাজ করতে পারেন।
এই পরিস্থিতিতে সামনের পুর নির্বাচনে রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের জয় একরকম নিশ্চিত হলেও তাদের অভ্যন্তরের শতছিন্ন অবস্থা যেন অতি প্রকট। মনে হচ্ছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর হঠাৎই খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল!
তাদের পরিচালিত সরকার দৌড়াচ্ছে দুরন্ত গতিতে, কিন্তু দল ক্রমশ শত ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। যত দ্রুত এই বিষয়টি তৃণমূল নেতৃত্ব মেরামত করে নেবে ততই তাদের মঙ্গল। না হলে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি যেকোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে!