আইনের রক্ষক নাকি শাসকের প্রচার শাখা? পুলিশের রাজনৈতিক অবস্থানে তীব্র হচ্ছে বিতর্ক
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পুলিশ নাকি শাসকের প্রচার শাখা? পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাম্প্রতিক অবস্থান দেখলে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ক্রমশ চওড়া হচ্ছে।
এতে করে শাসকের কি সুবিধা হচ্ছে তা বলা মুশকিল। তবে বিরোধীরা খুব সহজেই হাতে অস্ত্র পেয়ে যাচ্ছে। আর অতি ভক্তিতে সরকারের বিপদ বাড়াচ্ছে ‘খাকি উর্দিধারীরা’।
ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যু রহস্য ঘিরে শাসক-বিরোধী চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধীরা দাবি করছে পুলিশি এই ছাত্র নেতাকে হত্যা করেছে। পাল্টা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সিটের তদন্তের উপর আস্থা রাখার কথা বলছে। এই নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিরোধীরা।
আনিসের বাড়ি যেখানে সেই আমতা থানার সামনে প্রতিদিন নিয়ম করে ঘেরাও অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। এতে রাজ্য পুলিশের বিরক্তি ধরতেই পারে। তারা সিটের তদন্তে আস্থা রাখার কথা প্রকাশ্যে বলতে পারে।
কিন্তু সরাসরি বিরোধীদের নাম করে তারা তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে যে মারাত্মক অভিযোগ করেছে তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। কারণ সংবিধান বলছে পুলিশের কাছে কেউ ‘বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ’ নয়। কারণ পুলিশের রাজনীতিতে স্থান নেই।
পুলিশ তদন্তে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে অপরাধীদের কাঠগড়ায় তুলতে পারে। কিন্তু তার কাছে কেউ শাসক দল নয়, কেউ বিরোধী দল নয়। এটাই তার নিরপেক্ষতার ধর্ম। যদি বিরোধীরা কোনও আন্দোলন করে তাতে সরকারি নির্দেশে তারা কড়া হাতে সেই আন্দোলন দমন করতে পারে।
কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে বিরোধী দলের সমালোচনা করার কোনও অধিকার পুলিশকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আশ্চর্যজনকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে আনিসের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনার জন্য সরাসরি বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুলেছে!
এটাই কি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নিরপেক্ষতার নমুনা? আন্দোলনকারীরা যে বলছে পুলিশের দ্বারা নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়, সেই দাবিকেই তো মান্যতা দিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ!
আরও উদাহরণ আছে। রবিবার পুরভোটের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে ডিজি মনোজ মালব্য দাবি করেন, দু-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তাঁর এই বক্তব্য সমালোচিত হতে পারে, কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে খুব একটা সমস্যার কিছু নেই। তবে একইসঙ্গে ডিজি সাহেব একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা যখন তাঁকে ভোটের হিংসা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তখন হঠাৎ একসময় তিনি বলে বসেন, এর আগে নির্বাচনে কি ফল হয়েছে তা সকলেই জানে। মুখে না বললেও তাঁর এই মন্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল যেন, বিরোধীরা বরাবরই এমন অভিযোগ করে থাকে। কিন্তু মানুষ যে তাদের ভোটে হারায় সেটা সকলেরই জানা।
রাজ্য পুলিশের সর্বময় কর্তা হয়ে ভোটের ফল নিয়ে কোনরকম মন্তব্য করার অধিকার নেই মনোজ মালব্যের। বিশেষত তিনি যখন পুলিশ কর্তা হিসেবে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ডিজির এই মন্তব্য।
মনে হয় না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের এইভাবে রাজনীতিকরণ চান। আসলে একশ্রেণীর উমেদার অতি ভালো সাজতে গিয়ে বরাবরই শাসকের বিপদ ডেকে আনে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বোধহয় এখন সেই উমেদারের ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছে। এতে সাধারণ মানুষের পুলিশ সম্বন্ধে যেটুকু আস্থা আছে সেটাও চলে যাবে।